কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় দেশের সর্ব বৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, বন্দুকের ফাঁকা গুলির শব্দের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (১১মার্চ) সকাল ১০টায় জামাত শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগা ময়দানের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসতে না পারায় এ জামাতে ইমামতি করেন শহরের বড় বাজার মসজিদে ইমাম মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। লাখো মুসল্লির ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে ঈদগাহ ময়দান।
শোলাকিয়ায় এবার অনুষ্ঠিত হলো পবিত্র ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত। এতে অংশ নিতে সকাল থেকে দূরদূরান্তের মুসল্লিরা দলে দলে আসতে শুরু করেন। সকাল নয়টা বাজার আগেই মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে নামাজ শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে মোনাজাত করে বাড়ি ফেরেন মুসল্লিগণ।
এই ঈদের জামাত নির্বিঘ্নে করতে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। নামাজের সময় প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, শতাধিক র্যাব সদস্য ছাড়াও আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও আনসার সদস্যরা মাঠ ও মাঠের বাইরে মোতায়েন ছিলো। সাদা পোষাকে নজরদারিতে ছিলো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। ফায়ার ব্রিগেড, তিনটি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিক্যাল টিম, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম, বম্ব ডিসপোজাল টিম, মাইন ডিটেক্টর সুইপিং টিম, মাঠের ভেতর ও বাইরে ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা, পুরো মাঠ পর্যবেক্ষণের জন্য ছিল ড্রোন ক্যামেরা এবং পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের মাধ্যমে আগত ব্যক্তিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এ ছাড়া মাঠের ভেতর-বাইরে পুলিশ বাহিনীকে সহায়তায় ছিল বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক দল। নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে মুঠোফোন, ছাতা বা কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুধু পাতলা জায়নামাজ নিয়ে নামাজ আদায় করতে আসেন মুসল্লিরা। নিষেধ ছিল দেশলাই বা লাইটার সঙ্গে না রাখার। মুসল্লিদের যাতায়াতে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
পরিচালনা পর্ষদ সূত্র জানায়, শোলাকিয়ার ৬ দশমিক ৬১ একর আয়তনের ঈদগাহের মূল মাঠে নামাজের জন্য ২৬৫টি কাতার ছিলো। প্রতিটি কাতারে ৬৫০ থেকে ৭০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করে। মূল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মাঠের চারপাশের রাস্তা ও দোকানপাটের বারান্দায় অনেক মুসল্লি নামাজ আদায় করেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় লাখো মুসল্লির সমাগম ঘটে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে।
২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরের দিনে অপ্রত্যাশিত হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারও মাঠে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করে মুসল্লিরা বাড়ি ফেরায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (সেবা) বিপিএম (বার)।
এলাকাবাসী জানান, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটেছিল। সোয়া লাখ থেকেই বিবর্তনের ধারায় এ মাঠের নাম শোলাকিয়া হয়েছে। দিন দিন এর প্রচারণা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি বছরই মুসল্লিদের সমাগম বাড়ছে।
Leave a Reply