1. : admin :
উখিয়া টেকনাফে বিশেষ নিরাপত্তায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদ উদযাপন  - দৈনিক আমার সময়

উখিয়া টেকনাফে বিশেষ নিরাপত্তায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদ উদযাপন 

দিদারুল আলম সিকদার, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি 
    প্রকাশিত : শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৪
কক্সবাজারের উখিয়া – টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা নিজ দেশের নানা স্মৃতি নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন । নামাজ শেষে মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন লাখো রোহিঙ্গা। মিয়ানমারে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে আকুতি জানিয়েছেন তারা। 
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। সবমিলিয়ে এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। বাংলাদেশে আশ্রয়রত সাড়ে ৬ বছরের বেশি সময় ধরে আশ্রয়রত এসব রোহিঙ্গারা বছরে ২ টি করে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযাহা) ১৪ টি ঈদ কাটিয়েছেন এই ক্যাম্পে।
রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের ৩২টি ক্যাম্পে অবস্থিত ৩ হাজারের মতো মসজিদ ও নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা।
সকাল ৮ টায় ঈদের নামাজ, তাই প্রতিটি বসতি থেকে দলে দলে ঈদের নামাজ আদায়ে ময়দানে আসতে শুরু করেন এসব রোহিঙ্গারা। সবার গায়ে নতুন জামা। ঠিক ৮ টায় একযোগে ক্যাম্পে শুরু হয় ঈদ জামাত। ছোট-বড় সবাই আদায় করেন ঈদের নামাজ। নামাজ শেষে শুরু হয় মোনাজাত, চলে দীর্ঘক্ষণ। আর মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং স্বদেশে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও ফিলিস্তিন মুসলমানদের রক্ষায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন রোহিঙ্গারা।
বৃহস্পতিবার উখিয়ার বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদুল ফিতরে উৎসবের আমেজ কিছুটা বেশি উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে। আর শিশুরা সেজেগুজে, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে। রোহিঙ্গারা বলছেন, ঈদের সবচেয়ে বড় জামাতটি হয়েছে উখিয়ার বালুখালীর ৮ নম্বর ক্যাম্পে। ওই ক্যাম্পের চারপাশে রোহিঙ্গাদের বসতি, ঠিক বসতির মাঝখানে খোলা মাঠ। এই খোলা মাঠে করা হয়েছে ঈদের নামাজ আদায়ের প্যান্ডেল। বাঁশ আর রঙিন কাগজ। সুতার সঙ্গে মাঝে মাঝে টাঙানো হয়েছে ফুল আর বেলুন। এভাবে সেজেছে ক্যাম্পের প্রতিটি ঈদ নামাজ আদায়ের ময়দান।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা বশর বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরেছি তার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে আমরা সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম যদি নিজ দেশ মিয়ানমারে ঈদ উদযাপন করতে পারলে? আমাদের এখন একমাত্র স্বপ্ন মিয়ানমারে ঈদের নামাজ আদায় করা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
লম্বাশিয়া ক্যাম্প-১ এর বাসিন্দা হামিদ বলেন, আমরা দেশে যেভাবে ঈদ করতাম, এখানে সেভাবে ঈদ করতে পারি না। কারণ সবকিছুর পরও এটা আমাদের দেশ না। এই জন্য শিশুদের মাঝে আনন্দ দেখা গেলেও আমাদের কোনও আনন্দ নেই। তাই ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশেষ করে নিজ ভূমিতে অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে পারবো সেই প্রার্থনাও করা হয়েছে।
কুতুপালং ক্যাম্প-ডি-৫ এর বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, ঈদের সময় গ্রামের লোকজন ঘরে এসে সেমাই ও চালের রুটির সঙ্গে রান্না করা গরুর মাংস খেয়েছে। আর এখন সেমাইর জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। এটা বড়ই লজ্জার ব্যাপার। প্রিয় জন্মভূমিতে সত্যিই কি ফেরা হবে এমন সংশয় এখনো গভীর রোহিঙ্গাদের ভেতরে। এই দেশে বোঝা হয়ে আর কত দিন থাকতে হবে জানি না, আবার কখন ফিরে পাবো হারানো ঈদের সুখের দিনগুলো।
উখিয়াস্থ ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা ঈদ উদযাপনে মেতে উঠেছেন। তবে কেউ যাতে ক্যাম্পের বাইরে না যান, সেজন্য মাঝিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেদিকেও নজরদারি রাখা হয়েছে।
মো. আমির জাফর আরও বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সকল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঈদে উপলক্ষে নজরদারিতে রাখা হয়েছে ক্যাম্পগুলো।
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ( এপিবিএন) এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল বলেন- ঈদ উপলক্ষে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে পুরো ক্যাম্প এলাকা। দুষ্কৃতকারীদের অপকর্ম প্রতিরোধ এবং ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় কাজ করছি আমরা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com