1. : admin :
অভিনেতা নির্মাতা তারেক মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেননি, পুরোটাই মিথ্যে - দৈনিক আমার সময়

অভিনেতা নির্মাতা তারেক মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেননি, পুরোটাই মিথ্যে

আমার সময় ডেস্ক
    প্রকাশিত : রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩

রানা বর্তমান 

সাহিত্যিক ও নির্মাতা

সবাই বলছেন কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, নির্মাতা তারেক মাহমুদ মৃত্যু বরণ করছেন অথচ সবাই মিথ্যা বলছেন, তারেক মাহমুদ মরেননি, কবিরা কখনো মরেন না, নির্মাতারা চিরতরে হারিয়ে যায়না। তারা বেঁচে থাকে নির্মানে, তারা বেঁচে থাকে কবিতায়। আমিও একজন নির্মাতা, সর্বপরি নির্মান করাই অামার প্রধান কাজ। তবে যখন সুটিং কম থাকে অথবা বেকার সময়ে ডুবে থাকি, তখনই লেখালেখি করতে বেশ ভাল লাগে, আড্ডা দিতে ভালো লাগে। সেই স্রোতধারায় আমি প্রতিনিয়ত আড্ডা দিয়েই চলেছি। আমরা ছোটবেলায় মুরব্বিদের কাছ থেকে শুনে এসেছি, আড্ডার মাঝেই শিক্ষা/জ্ঞান অর্জন করা যায়। কিন্তু সেই আড্ডায় জ্ঞানীর উপস্থিতি কম হলে সেখানে সমালোচনা ছাড়া আর কিইবা শেখার থাকে! তাই আমি প্রায় সময় নিকেতন, টিএসসি অথবা শিল্পকলায় আড্ডা দেই। সেই আড্ডার আলাপচারিতায় পরিচয় হয় নানা রঙ্গের, হরেক ডংগের মানুষের সঙ্গে। পরিচয়ের সন্ধিক্ষণে পরিচিত আমাদের অভিনেতা, নির্মাতা, কবি, সংগঠক তারেক মাহমুদ ভাইয়ের সঙ্গে। শুরুটায় আড্ডা কম হলেও ইদানিং বেশ আড্ডা হতো শিল্পকলায়। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে শিল্পকলায় তারেক ভাইয়ের উপস্থিতি তুলনা মুলক একটু কম ছিলো তবে এর মধ্যে আমার কমবেশি আড্ডা সবার সঙ্গেই হয় কিন্তু আড্ডা থেকে শেখার মত মানুষের উপস্তিতি খুবই কম। সবার সঙ্গে আড্ডা আমার খুব একটা জমে না আবার হুট করে সম্পর্ক গভিরে তলিয়ে যাইনা। আমার মিশতে একটু সময় লাগে তদ্রুপ একবার মিশে গেলে, ভালবেসে গেলে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান ভালবাসা উপচে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে। আজকাল তারেক ভাইয়ের স্বল্প উপস্তিতির কারনে ইদানীং আড্ডা দিয়ে বেশ মজা পাচ্ছি ও শিখছি ভাস্কর রাসা ভাইয়ের সঙ্গে। রাসা ভাই যেহেতু চারুশিল্পী তার সাহিত্য ভন্ডার অন্যের তুলনায় একটু অন্যরকম, ভিন্ন ঘরনায়, তিনি কিছু বল্লে আমি শ্রদ্ধা নিয়ে শুনতে চেষ্টা করি। মনে রাখবেন আমার একটা খারাপ অভ্যাস আছে, যারা আমার চোখে জ্ঞানী কিংবা শ্রদ্ধার তাদের সঙ্গে আমি খুব বলতে যাইনা বিশেষ করে তাদের বলাটা আমি মন থেকে শুনি, পড়ি, লিখি এবং খাই অর্থাৎ তারা বলেন আর আমি দর্শক হয়ে শুনি আর অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি।ভাস্কর রাসা ভাই তিনিও পরিক্ষিত জ্ঞানী ও প্রতিভাবান। তবে তারেক মাহমুদ ভাই আপনার তুলনা আপনি। আসলে সবাই সবারমত নয়, এটাই সত্য। তারেক মাহমুদ ভাইয়ের চটপটি সিনেমার শুরু থেকেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়।, পরিচয় থাকলে কি হবে! তখন থেকে আমাদের খুব একটা জমপেশ আড্ডা হয়ে উঠেনি। তার বিদায়ের কয়েকমাস আগে থেকেই শিল্পকলায় প্রায় দুজনার চা সিগারেট আর গল্পলাপ শেয়ার করা হয়। তার সঙ্গে যতটা মিশেছি, গা’ঘিসেছি, ততটাই তাকে চিনতে অবাক হয়েছি। বিশেষ করে তাকে বল্লাম ভাই আপনি কোন নাট্যদলের সঙ্গে আছেন? উত্তরে বললো আমার কোন দল নাইরে রানা ভাই, আমি নিজেই একটি দল। কথাটা আমাকে কিছুটা চিন্তায় ডুবাতে বাধ্য করলো। কারন এ ধরনের কথা বলেন মহা পন্ডিত অথবা উন্মাদরা। আমাকে যারা চেনেন তারা জানেন যে আমি বরাবরই আপ্যায়ন করতে পছন্দ করি। সেই সুত্রধরে প্রতিদিনেরমতই তারেক ভাইকে সিগারেটের অফার করলাম। আজ সে নিজের পকেট থেকে সিগারেট বের করে হাতটি আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন, আমি শুধু চা অর্ডার করতে সুযোগ পেলাম। তো কি আর করার আছে! চা সিগারেট ধংস করছি আর চলছে আমাদের আড্ডা হঠাৎ আড্ডার মাঝে দু একজন নাট্যপরিশ্রমি মেয়েরা এসে ছালাম কিংবা কুশল বিনিময় করেন। তখন তারেক ভাই কতটা মজা নিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলতেন, তাশুধু চোখ বড় করে শুনতাম আর দেখতাম। ওদের খবরাখবর নেওয়ার ধরনটা সত্যিই প্রসংশার। মেয়েগুলোর সঙ্গে কতটা মজা নিয়ে কথা বলতেন যা একজন পিওর মানুষ না হলে সম্ভব ছিলোনা। আমার দেখামতে তার বয়সে ছোট অধিকাংশদের তুই বলে ডাকতেন। এই তুইয়ের মধ্যেও একটা অন্যরকম মহব্বত, আদর আর ভালবাসার ফুলকি ছিলো। আমাদের আড্ডা কিন্তু প্রতিদিনের মতই চলছে এর মধ্যে তার ছেলে এসে হাজির, শিল্পকলায় ভাইয়ের ছেলের খুব একটা আসা হয়না কিন্তু আজ এসেছে, সেই সুবাদে তারেক ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন- আমি জুলফিকার চঞ্চল ভাই, তারেক মাহমুদ ভাই এভাবে আড্ডা আমাদের চলছে প্রতিনিয়ত। নাট্যশালার সামনে টিকিট কাউন্টারের পাশের সিড়িটা( সেলিনা চত্তর ) আমার ভিষন প্রিয় ও বেশ পছন্দের। কিন্তু তারেক ভাইকে বিষয়টা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বল্লেন রানা ভাই শিল্পকলা আসলে এই সিড়িতে না বসলে কেমন যেন একটা অপূর্নতা থেকে যায় অর্থাৎ তারেক ভাইয়েরও এটা খুব পছন্দের জায়গা ছিলো। বলা বাহুল্য তারেক ভাই বলেছিলেন তিনি নিজেই একটি থিয়েটার। কথাটা মহাজ্ঞানি অথবা চৌকস প্রতিভার ব্যাক্তি ছাড়া বলা হাস্যকর। ঠিক তিনিও আমারমত অধমের কাছে একজন চতুর্মুখি সাংস্কৃতিক ব্যাক্তি। তিনি নিজের কবিতা আবৃত্তির সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি দেশের সকল প্রকাশনিকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে পথিক বের করে হাজার হাজার কপি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি সত্যিই একজন থিয়েটার। তিনি সত্যিই একজন একাডেমি। আমি এইতো সেদিন বল্লাম তারেক ভাই আপনার কাছ থেকে অনেক শেখার আছে, আমি আপনার সঙ্গে থাকলে প্লিজ আপনি প্রচুর কথা বলবেন কারন আমি আপনার কথাগুলো খাই, পড়ি এবং মাখি। তখন সে হেসে দিয়ে বললো কি বলেন রানা ভাই? বলুনতো সুটিং ডেট কবে আপনার? আমি বল্লাম ভাই আপনারমত একজন মানুষ যদি কোন সুটিং সেটে থাকে, তাহলে সবাই আনন্দের মধ্যেই থাকবে, বিশেষ করে আমার সেটে কাজ আর কাজ। আড্ডা দেওয়া কিংবা দু দন্ড চা বিড়ি খেয়ে আলাপ করার সময় থাকেনা আমার। কারন আমি প্রতিটি ফ্রেম, কস্টিউমস, প্রপস, ড্রেস কোড, কন্টিনিটি, অভিনয়, সংলাপের রস সবটাই আমার দেখতে হয়। বলতে পারেন এগুলো আমার একটা খারাপ অভ্যাস। আবার যাদের কাজ থাকেনা তারা মেকআপ রুমে ঘুমিয়ে কাটায় অর্থাৎ আপনি থাকলে সমস্ত ইউনিটকে আপনার কথার রসে প্রান দিয়ে উজ্জীবিত করে রাখবেন- এটা আমার বিশ্বাস কারন আপনি অনেক বড়মাপের বোদ্ধা ও চৌকস। কখন কোন কথাটা দরকার ঠিকঠাক সেই রংয়ের কথাটাই বলেন আর সবাইকে বিনোদন দিতে আপনি বড্ড সেরা। এভাবে তারেক ভাইয়ের সৃত্মি আমাদের মিডিয়াপাড়ায় কমবেশি সবার সঙ্গেই আছেন। তিনি নির্হংকার খোলা মনের মানুষ। সত্যিই তিনি নিজেই একজন থিয়েটার, তার চলন, বলন কিংবা পোশাক পরিচ্ছদের মধ্যেও একটি শিক্ষা দৃশ্যম

কিংবা পোশাক পরিচ্ছদের মধ্যেও একটি শিক্ষা দৃশ্যমান। তিনি সাধারন একজন মানুষবটে তবে তার প্রতিভা অসাধারন, তিনি কবি, লেখক, সাহ্যিতিক, অভিনেতা, নির্মাতা এবং চমৎকার গল্পবাজ ও আড্ডাবাজ। অসাধারণ গল্প বলার বৈধযোগ্যতা রয়েছে তার। গত পরশু আমি আর রহিম সুমন শিল্পকলায় চালাপ করছিলাম, তারেক ভাই এসে বিনয়ের সহিত বল্লেন, দু:খিত দুজনার চমৎকার কথারবেগ দৃশ্যমান সুতরাং ডিস্টার্ব না করি। কথাটা ভাবছি আর চোখ ভরে কষ্ট গুলো বের করছি। আপনার উপস্থিতি আমাদের ডিস্টার্ব নয়, আপনার উপস্তিতি আমাদের নতুন কোন শিক্ষা, আপনার উপস্থিতি মানে আড্ডার প্রান ফিরে আসা, আপনার উপস্তিতি মানে একটি বটবৃক্ষের ছায়া, আপনার উপস্তিতি মানে ছোটবড় সব মিলে একাকার হওয়া, আপনার উপস্থিতি মানে হিন্দু মুসলিম ভুলে মানুষ হয়ে আড্ডা দেওয়া। আপনার উপস্তিতি মানে সবাই মিলেমিশে হেসে খেলে এক সাথে বাঁচা। আপনার উপস্তিতি মানে ছোট একটি প্রশিক্ষন কর্মশালা কিংবা গ্রুমিং। পরিশেষে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে সবার যেতে হবে আগে কিংবা পরে। জন্মেছি একা আবার বিদায় নিতে হবেও একা, আসা যাওয়ার মাঝে যে যারমত করে বাঁচবে, কেউ গরিব হয়ে জাতীয় কবি হবেন আবার কেউ জমিদার হয়ে বিশ্ব কবি হবেন অতএব কে পেটপুরে খেয়ে কিব সাহিত্যিক হবেন আবার কেউ না খেয়েও কবি সাহিত্যিক হবেন এটা চিরাচরিত সত্য কথা তাই কবিদের, লেখকের, নির্মাতার সৃষ্টি নিয়ে কথা বলাটাই উত্তম, তারেক মাহমুদ জীবনযাপন কিভাবে করেছেন সেটা আলোচ্য বিষয় নয় বরং তিনি কি রেখে গেলেন! তিনি কি সৃষ্টি করলেন সেটাই তারেক মাহমুদ ভাইকে বাচিয়ে রাখবেন। তাই আমাদের উচিৎ তার স্বপ্নগুলোকে সফল করা, তার চিন্তাটা আমাদের সবার মাঝে ছিড়িয়ে দেওয়া। তার লেখা গুলোকে বাচিয়ে রাখা। তবে এটা সত্য যে অনেক গুনিনরা ক্ষনজন্মা হয়। তারেক ভাই আপনিও আমাদের চোখে একজন গুনিন, আপনিও একজন নাট্যদল, আপনিও একজন দক্ষ অভিনেতা, আপনিও একজন কবি, নাট্যকার, লেখক, প্রকাশক, সংগঠক ও নির্মাতা, আপনিও একজন খাটি মানুষ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com