1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. : admin :
অভিনব কৌশলে একই ফ্ল্যাট একাধিক ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে লোনের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ  - দৈনিক আমার সময়

অভিনব কৌশলে একই ফ্ল্যাট একাধিক ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে লোনের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ 

আমিনুল ইসলাম বাবু  
    প্রকাশিত : শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
আজ ৪ঠা মে শনিবার দুপুরে সিআইডি মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিকট অভিনব কৌশলে একই ফ্ল্যাট একাধিক ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে লোনের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ এর মত প্রতারণার বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিআইডি প্রধান এডিশনাল আইজিপি, মোহাম্মদ আলী মিয়া, বিপিএম, পিপিএম। 
সম্প্রতি সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন পরিদপ্তরের কিছু অসাধু সদস্যদের সক্রিয় সহযোগিতায় চক্রের সদস্যদের নামে একাধিক সক্রিয় NID ও TIN  তৈরী করে। পরবর্তীতে উক্ত NID ও TIN ব্যবহার করে চক্রের সদস্যরা ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় অসাধু লোকদের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের নামে ফ্ল্যাট/ জমির একাধিক মূল দলিল তৈরী করে। অতপর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সৃজনকৃত একাধিক দলিল দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্টানে মর্টগেজ রেখে একটি ফ্ল্যাটের বিপরীতে একাধিক লোন গ্রহণের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট এ চক্রের সদস্যদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য ব্যাপক অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, এ সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মূল হোতা জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস ও তার সংবদ্ধ অপরাধ চক্রের সদস্যরা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের ক্রেতা হিসেবে হাজির হন। উক্ত ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য শুরুতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট বায়না করেন। এরপর ফ্ল্যাটের মালিকানার তথ্য যাচাইয়ের কথা বলে মালিকের কাছ থেকে দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্রের কপি সংগ্রহ করেন। ফ্ল্যাটের মালিকের কাছ থেকে নেওয়া দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্রের তথ্য নিয়ে ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় অসাধু লোকদের মাধ্যমে তৈরি করেন জাল দলিল। জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস জাল দলিলে কখনো নিজে মালিক হন আবার কখনো চক্রের অন্যান্য সদস্যদের মালিক বানান। এরপর সৃজনকৃত সেই জাল দলিল দিয়ে পাতেন ফ্ল্যাট বিক্রির ফাঁদ। ফ্ল্যাট পছন্দ হলে ক্রেতার কাছ থেকে বায়না বাবদ অগ্রিম টাকাও নেন জয়নাল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে রেজিস্ট্রিকৃত ক্ষমতা অর্পণ দলিল দেখিয়ে ক্রেতার নামে ব্যাংক ঋণ নিয়ে সেই টাকাও আত্মসাৎ করে।  এভাবে  জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ফ্ল্যাটের দলিলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস এর নেতৃতাধীন এ ফ্ল্যাট জালিয়াতি চক্র রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট বিক্রির ফাঁদ পেতে জাল দলিলের মাধ্যমে পথে বসিয়েছে বহু ফ্ল্যাট মালিককে। পাশাপাশি সম্ভাব্য ফ্ল্যাট ক্রেতাদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট বিক্রির অগ্রিম টাকা এবং ব্যাংক ঋণের বোঝা চাপিয়ে তাদেরকে করেছে নিঃস্ব।
সিআইডির অনুসন্ধানে ফ্ল্যাট জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোনের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস এর মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান রুমানা জুয়েলার্স, নীড় এস্টেট প্রোপার্টিস লিমিটেড, স্নেহা এন্টারপ্রাইজ, ই আর ইন্টারন্যাশনালসহ চক্রের ২৫ জন সদস্যের বিরুদ্ধে ডিএমপির উত্তরা-পূর্ব থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করে সিআইডি।
উক্ত মানিলন্ডারিং মামলা দায়েরের পর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। মামলা তদন্ত চলাকালীন ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম এর একটি চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে গত ০৩’মে শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এ সংঘবদ্ধ ফ্ল্যাট জালিয়াতি চক্রের মাস্টারমাইন্ড জয়নাল আবেদীন এর প্রধান সহযোগী মোঃ রাকিব হোসেন (৩৩), এ চক্রের সদস্য জয়নালের ভায়রা ভাই কে.এম.মোস্তাফিজুর রহমান(৫৪), জাল কাগজপত্র ও এনআইডি প্রস্তুতকারক মোঃ লিটন মাহমুদ(৪০), ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল প্রস্তুতকারক হাবিবুর রহমান ওরফে মিঠু(৩০), ব্যাংক কর্মকর্তা হিরু মোল্যা(৪৪), আব্দুস সাত্তার(৫৪) ও সৈয়দ তারেক আলী(৫৪) সহ এ পর্যন্ত ১১ জন’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
আটককৃতদের কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজনকৃত একই ফ্ল্যাটের একাধিক নকল দলিল ও দলিল রিসিট, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সীলমোহর, একই ব্যক্তির একাধিক NID ও TIN, ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডসহ নগদ ৩,০০,০০০ (তিন লক্ষ) টাকা জব্দ করা হয়েছে।
আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ ফ্ল্যাট জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ  আত্মসাৎ চক্রের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন পরিদপ্তরের কিছু অসাধুকর্মকর্তা ও দালাল, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু ব্যাংকার জড়িত।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস রাজধানীর মিরপুরে কোঅপারেটিভ মার্কেটের একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। পরবর্তীতে জয়নাল আবেদীন ও শহিদুল ইসলাম সবুজ মিলে ফ্ল্যাট জালিয়াতি শুরু করেন। এ চক্রের সাথে জড়িত হয়ে শতকোটি টাকার মালিক বনে যান জয়নাল। তার অন্যতম প্রধান সহযোগী দুই স্ত্রী রোমানা সিদ্দিক ও রাবেয়া আক্তার মুক্তা। প্রতারণার জন্য নিজ নামে ছয়টি সক্রিয় এনআইডি ব্যবহার করেন। এসব এনআইডি দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০টির অধিক হিসাব খুলেন। জয়নাল ফ্ল্যাটের মালিকানার দলিলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা। এ অবৈধ অর্থে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধার আবাসিক এলাকায় ৭ তলা বাড়ী, ৩টি ফ্ল্যাট, মিরপুর ও আশকোনায় ৩টি ফ্ল্যাট ক্রয় করে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com