নিমতলায় বসে চা আর বিড়ি টানছি।পাশে ঝুলে আছে তারেক মাহমুদের শোকের বানার। সামনে বামে কিংবা উপরে টাঙ্গানো লাল নিল হরেক রঙ্গের থিয়েটারের ফেসটুন। মাঝে মধ্যে বারংবার রক্তখেকো মশা চুম্মন দিচ্ছে আমায়। অস্পট রবিন্দ্র সঙ্গিত ভেসে আসচ্ছে আমার থেক কিছুটা দুর থেকে। হঠাৎ হাজির হলো ভাস্কর রাসা, রানা আপনি বসে আছেন! চলুন কিছু একটা খেয়ে আসি। আমি বললাম দাদা না আমি এখন ভারী খাবার খাব না কিন্তু সে জোর করে আমাকে নিয়েই গেল। তবে রাসা ভাইকে রাজি করালাম যে, আমি আপনার শুধু পাশে বসে থাকবো আর আপনি খাবেন। শর্তে রাজি হওয়াতেই আমি তার সঙ্গে গেলাম। অবশ্য রাসা ভাইয়ের চাপে এক কাপ দই আমি খেলাম। আর রাসা ভাই প্রতিদিনের মত কাজ শেষ করে গ্রীল আর নান খাচ্ছেন। খাওয়ার মাঝে আমাকে প্রশ্ন করলো রানা বলেন তো চলচ্চিত্র কাকে বলে! আমি বল্লাম পারিন না দাদা- আপনি বলুন। তারপর আবারও প্রশ্ন চলচ্চিত্রের বৈশিষ্ট্য কি? আমি ভুল না বলে নতুনদেরমত ই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলাম। দেখছি রাসা ভাই রিতিমত ক্ষেপে যাচ্ছে আর বলছে আপনি মিয়া বইই পড়েন না, আপনার প্রচুর পড়তে হবে। তারপর আবার প্রশ্ন করলো আপনি বলুনতো চলচ্চিত্রের ভাষা কি! আমি ইচ্ছে করেই আবার উত্তরটা দিলাম না। তারপরতো সে আমার উপর ভয়ংকর রকমের ক্ষিপ্ত। বললেন আপনি মোস্তফা সরোয়ার ফারুকির মত, একটি নিদৃষ্ট জায়গায় গিয়ে ঘুরবেন আর দৌড়াবেন না। কারন দৌড়াতে পারবেন না, পড়তে হবে বিশ্বকে জানতে হবে। আমি অবাক অনেক জ্ঞানের কথা বললেন সম্মানিত ভাস্কর রাসা ভাই। আমি যতই তার সঙ্গে মিশছি, ততই অবাক হচ্ছি। কারন প্রতিটি মানুষের কিছু বিষয়ে স্পেশাল জ্ঞান থাকে। বিশ্ব সাহিত্য কিংবা বিশ্ব বিখ্যাত ব্যাক্তি সম্পর্কে ভালো জানা থাকে তবে একটা সময় সে জানাটা বলতে বলতে শেষ হয়ে যায়। তখনই আমি শুরু করি আমার জানা থলের বিড়াল বের করা। তবে মজার বিষয় হলো রাসা ভাই আমাকে একটা গদ্দব গাদা বোবা নিরব দর্শক মনে করেন। সোজাসাপটা মুর্খ, জ্ঞানশূন্য আদম মনে করছেন। আসলে সত্যিই আমি এমনই। তবে মজার বিষয় হলো আজ নিমতলায় রাসা ভাই সহ সিনিয়রা আড্ডা দিচ্ছেন প্রতিদিনেরমত। রাসা ভাইয়ের টানে- তার পাশেই বসতে গেলাম কিন্তু রাসা ভাই সঙ্গে সঙ্গে অপমানের তীর ছুড়ে দিলো। না রানা আপনি না বসলে আমি খুশি হবো কারন এখানে সবাই জ্ঞানিজন এবং বই পড়ুয়া জানাশুনা মানুষ। আপনি বরং আমি একা থাকতেই আসবেন। আমি যদিও সবার সামনে এই প্রথম লজ্জা পেলাম, অপমানবোধ করলাম কিন্তু এ লজ্জা, এ অপমান আমি শিক্ষা হিসাবেই নিলাম। আমি বিশ্বাস করলাম আসলেই আমি পড়ছিনা। আসলেই আমি জানছিনা। প্রচুর পড়তে হবে, প্রচুর জানতে হবে, প্রচুর লিখতে হবে। রাসা ভাই যে শিক্ষাটা আজ আমাকে দিলো যা, আমার সামনের পথগুলোর জ্ঞান অর্জনের জন্য সহজ করে দিলো। আমাকে নতুন করে জন্ম দিলো। আসলেই আমাদের প্রজন্ম থেকে নতুন প্রজন্ম পড়াশুনাই করছেন না। আমাকে জহির রায়হানের জিবন থেকে নেওয়া, তিতাস একটি নদির নাম দেখছি কিনা প্রশ্ন করেছিলো! আমি বলেছিলাম না দেখিনি। আসলে আমি জানি কিনা সেটা বিষয় নয়, বিষয়টা হলো চর্চা করা, সাধনা করা, আরাধনা করা। যা আমি আপনি আমরা অনেকেই করছিনা।
Leave a Reply