1. : admin :
সাংবাদিক রানার কারাদণ্ডের তদন্তে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে তথ্য কমিশন - দৈনিক আমার সময়

সাংবাদিক রানার কারাদণ্ডের তদন্তে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে তথ্য কমিশন

আমার সময় ডেস্ক
    প্রকাশিত : সোমবার, ১১ মার্চ, ২০২৪

দৈনিক দেশ রূপান্তরের শেরপুর জেলার নকলা উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানাকে (৪৫) ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৬ মাসের সাজা প্রদানের ঘটনার বিষয় সরেজমিন তদন্ত করতে শেরপুরে আসেন তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক।

গতকাল রোববার (১০ মার্চ) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনার বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হলে তাদের প্রশ্নের জবাবে শহীদুল আলম বলেন, তথ্য চাইতে গিয়ে সাংবাদিক রানাকে সাজা দেওয়া হয়েছে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে তথ্য কমিশন একটি বিশেষ সভা করেছে। কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিষয়টি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সাজাপ্রাপ্ত সাংবাদিক রানা তথ্য চাইতে গিয়ে ওই অবস্থার শিকার হয়েছেন কি না সে বিষয়টি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রানার স্ত্রীর কাছ থেকে দুটি কাগজ পাওয়া গেছে। যা তদন্তে বেশ সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি যেভাবেই হোক না কেন বর্তমানে তা আইনের আওতার মধ্যে এসে গেছে। কাজেই বিচারাধীন বিষয়ে কোনো কমেন্টস করা উচিত নয়। তা বলতে গেলে আইনের বরখেলাপ হবে। তথ্য কমিশন বেশ গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তদন্ত শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকায় গিয়ে কমিশনের কাছে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করবো। রোববার তদন্তের প্রথম দিনে তথ্য কমিশনার জেলা কারাগারে গিয়ে সাংবাদিক রানার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি নকলা শহরের সাংবাদিক রানার ভাড়া বাসায় গিয়ে তার স্ত্রী বন্যা আক্তার ও দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে শাহরিয়ার জামান মাহিমের (১৫) সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন, সাজা প্রদানকারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল আরিফ ও ইউএনওর সিএ শিলা আক্তারসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া তিনি জেলা পর্যায়ে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গেও একান্তে কথা বলেন। জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দুপুরে নকলা ইউএনও কার্যালয়ে প্রবেশ করে সিএ শীলা আক্তারকে নাজেহাল, অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল তছনছ এবং উপজেলা পর্যায়ে দাপ্তরিক এক সভায় ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিনের কর্তব্য কাজে বাধাসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে সাংবাদিক রানাকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল আরিফ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক রানার ছেলে শাহরিয়ার জাহান মাহিম বলেন, ‘সেদিন ইউএনও অফিসে গিয়ে বাবা একটি কাগজ ওই কার্যালয়ের গোপনীয় শাখার সিএ শীলা ম্যাডামের কাছে জমা দিয়ে অনুলিপি চান। শীলা ম্যাডাম অনুলিপি না দিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন। তখন বাবা বলেন কতক্ষণ অপেক্ষা করবো সময়টা বলে দেন। তখন ইউএনও ম্যাডাম বেরিয়ে এসে বাবাকে ধমকাধমকি করতে থাকেন। একপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আমার বাবাকে কারাদণ্ড দেন। আমি আমার বাবার মুক্তি চাই।’ আরেক প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মুনছর জানান, আমি একটি কাজে ইউএনও অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে বিশৃঙ্খলার আওয়াজ শুনে রানাকে থামাতে গেলে সে আমাকেও মানেননি। রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার বলেন, ‘তথ্য কমিশনার মহোদয় আমার কাছে বিস্তারিত সব ঘটনা শুনেছেন। আমি সবই বলেছি। আমার স্বামী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার শাশুড়ি অসুস্থ। এর মধ্যে আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে কারাদণ্ড দেওয়ায় সংসারটাই তছনছ হয়ে গেছে। তাই আমার স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’ নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিন জানান, তথ্য চাওয়ার কারণে সাংবাদিক রানাকে সাজা দেওয়া হয়নি। সেদিন তথ্য চাওয়ার কোনো বিষয় ছিল না। সরকারি অফিসে এসে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, একজন নারী কর্মচারীকে নাজেহাল ও ফাইলপত্র তছনছের পর ব্যক্তি রানাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। আর ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি যে তথ্য চেয়েছেন সেটি দেওয়া হয়েছে। তথ্য তো মেইলেও দেওয়া যায়, হার্ড কপিতেও দেওয়া যায়। এদিকে রোববার (১০ মার্চ) বিকেলে ইউএনওর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে নকলা উপজেলা অফিসার্স ক্লাব ও সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি। এছাড়া সাংবাদিক রানার কারাদণ্ডের ঘটনার বিষয়ে শনিবার ((৯ মার্চ)) রাতে নকলার ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন তার সরকারি বাসভবনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। ওইসময় তিনি বলেন, সাংবাদিক রানার পরিবার দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আপিল করলে তার সাজা মওকুফ বা জামিনে মুক্তি পেতে পারেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com