1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. admin@dailyamarsomoy.com : admin :
হারিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরার রপ্তানিমুখী টালি শিল্প - দৈনিক আমার সময়

হারিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরার রপ্তানিমুখী টালি শিল্প

সিরাজুল ইসলাম শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
    প্রকাশিত : সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ না পাওয়া ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টিতে সরকারের সহযোগিতার অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী টালি শিল্প।

উৎপাদন খরচ বাড়াসহ নানা সমস্যার কারণে কলারোয়া উপজেলার পৌর এলাকার মুরারিকাটি ও শ্রীপতিপুর এলাকায় ৪১টি কারখানার মধ্যে বর্তমানে সচল আছে মাত্র ৭টি। বর্তমানে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪ হাজার শ্রমিকের অবস্থা করুণ।

টালি কারখানার মালিক ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও কলারোয়া ক্লে টাইলসের মালিক গোষ্ট চন্দ্র পাল বলেন- পূর্ব পুরুষদের পেশা অনুযায়ী এখানকার পালরা প্রতিমা তৈরি করতেন। এই প্রতিমা তৈরি করে মুরারিকাটি ও শ্রীপতিপুর এলাকার পাল বংশের লোকরা সারাদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেন।

কলারোয়া উপজেলার কয়লা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মেম্বার বলেন – দুই হাজার সাল থেকে এখানে টালি নির্মাণ শুরু হয়। ২০০২ সালে ইটালির ব্যবসায়ী রাফাইলো আলদো আসেন বাংলাদেশে। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে নারায়ণগঞ্জে টালি তৈরির কাজ শুরু করেন। ওই এলাকার তৈরি টালি পছন্দসই না হওয়ায় তিনি আবারও নিজ দেশে ফিরে যান। কোম্পানির ম্যানেজার রুহুল আমিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পোড়া মাটির টালি তৈরির জন্য মাটি খুঁজতে খুঁজতে কলারোয়ার কুমারপাড়ায় এসে পেয়ে যান তার মনমতো মাটি।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট প্রা. লিমিটেডের মালিক রুহুল আমিন কলারোয়া কুমারদের প্রথম মাটির তৈরি টালির সম্ভবনার পথ দেখান। শুরুতেই পাঁচটি কারখানার উৎপাদিত এই টালি ইতালিতে রপ্তানি হতো। এ কারণে এই এলাকা ইতালিনগর বলে পরিচিত। দুই বছর যেতে না যেতেই এখানকার উৎপাদিত টালি নজর কাড়ে জার্মান, দুবাই, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের। মোংলা বন্দর দিয়ে কলারোয়ার উৎপাদিত টালি চলে যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বিনিময়ে দেশে আসে বৈদেশিক অর্থ। আস্তে আস্তে টালির চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এখানে বৃদ্ধি পেয়েছিল টালি তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় প্রায় চার হাজার শ্রমিকের। ২০১০ সাল পর্যন্ত টালি শিল্পের মালিকদের সুদিন ছিল। প্রতিটি টালি ৩০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর এই টালি শিল্প থেকে ৩০০ কোটিরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো।

কলারোয়া টালি সমিতির সভাপতি গোষ্ট চন্দ্র পাল বলেন, ১ কন্টেইনারে ১৫ হাজার পিস টালি বোঝাই করা হয়। এমনও হয়েছে যে মাসে ৩০ কন্টেইনারেরও বেশি টালি ইতালিতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে যা নেমে এসেছে ৪ থেকে ৫ কন্টেইনারে। প্রতি বছর নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে টালি তৈরির মৌসুম শুরু হয়ে চলে মে মাসের শেষ পর্যন্ত। বর্তমানে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় অনেকখানি ক্ষতির মুখে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী টালি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। এক একটি পোনের টালি সাজানোর মধ্যেই নতুন নতুন স্বপ্নকে সাজায় এই টালি শ্রমিকরা। আজ সে স্বপ্ন হারিয়ে যেতে বসেছে। এই টালি শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পান।

এই ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি কন্টেইনার টালির উৎপাদন খরচ প্রায় এক লাখ টাকার বেশি। ইউরোপের বাজারে যার মূল্য দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বছরে প্রায় ৪০০ কন্টেইনার টালি রপ্তানি করে শতকোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব । কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মালিকদের অসম প্রতিযোগিতার কারণে এ শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

ব্যবসায়ী আবুল হোসেন মেম্বার আরও বলেন- বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন সরকারি ভবনে টালি ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যেখানে দেশের তৈরি টালি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে আর সেখানে আমাদের দেশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ব্যক্তিস্বার্থে আমাদের দেশের কাজে ব্যবহারের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া থেকে টালি আমদানি করছে। গুণগতমান বিচারে আমদানিকৃত ইন্ডিয়ান টালির তুলনায় কলারোয়ার তৈরি টালি অনেকগুণ বেশি ভালো। যদি এই টালিগুলো আমদানি বন্ধ করা যায় তাহলে লাভবান হবে দেশের ব্যবসায়ীরা, দূর হবে এই এলাকার বেকারত্ব। পাশাপাশি টিকে থাকবে হাজার বছরের এই টালি শিল্প।

এ বিষয়ে কলারোয়া নির্বাহী অফিসার।বলেন, কলারোয়ার টালি শিল্পের অনেক সুনাম রয়েছে পৃথিবীর অনেক দেশে। এই টালি শিল্পে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। একটা সময় এই টালি শিল্প বিদেশে রপ্তানি করে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলারোয়ার ঐতিহ্য এই টালি শিল্প এখন প্রায় ধ্বংসের পথে। এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে দরকার সরকারি সহযোগিতা। স্বল্প সুদে ঋণ পেলে ব্যবসায়ীরা এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারবে এই টালি শিল্পকে। এই এলাকার অনেক মানুষের আবারও নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান সাতক্ষীরার ঐতিহ্যব বাহি টালি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে অতি জরুরি হয়ে পড়েছে সেজন্য টালি শিল্পকে যাতে সাতক্ষীরার মাটিতে ধরে রাখা যায় সেজন্য আমরা অতি দ্রুত এই টালি শিল্পের সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের নিয়ে একটি মিটিং করে তাদের কি কি অসুবিধা সেগুলো জানার পরে সরকারিভাবে যা যা উদ্যোগ নেওয়ার দরকার সবকিছু না হবে সাতক্ষীরার টালি শিল্প কোন কায়দায় বিলুপ্তি হতে দেওয়া যাবে না।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com