1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. admin@dailyamarsomoy.com : admin :
সাতক্ষীরা হারিয়ে গেছে গরুর গাড়ি - দৈনিক আমার সময়

সাতক্ষীরা হারিয়ে গেছে গরুর গাড়ি

সিরাজুল ইসলাম শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
    প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের গরুর গাড়ি। এখন আর গ্রামগঞ্জে আগের মতো চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি যা এক সময় কলারোয়া উপজেলার সকল জনপদে দেখা মিলতো। কেঁড়াগাছী, বাঘাডাঙ্গা, কাকডাঙ্গা, ভাদিয়ালি, সোনাবাড়িয়া, গয়ড়া, চন্দনপুর, জয়নগর, জালালাবাদ, হেলাতলা, কুশোডাঙ্গা, কেরালকাতা, দেয়াড়া, যুগিখালী, কয়লা, লাঙ্গলঝাড়াসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ও সাতক্ষীরা জেলার সাত উপজেল লার ‍ ৭৮ টি ইউনিয়নের কোথাও আর গরুর গাড়ির দেখা মেলে না,

সকল গ্রামের মেঠোপথে দেখা যেত গরুর গাড়ি। ছিল সর্বত্র এই গরুর গাড়ির মর্যাদাও। দু’টি গরু দিয়ে পিছনের গাড়ি চলতো ‘ঠাই ঠাই’ করে। বিয়েশাদি থেকে শুরু করে অন্য কোন অনুষ্ঠানে মানুষ বহনের জন্য ‘ছই ওয়ালা’ গরুর গাড়ি ছাড়া যেন কল্পনাই করতে পাতেন না এইসব গ্রামের মানুষ। মানুষ পরিবহনের পর গরুর গাড়ি হরহামেশা ব্যবহৃত হতো মাঠের ফসল আনা-নেয়ার কাজে। সেটাও যেনো এখন বিলুপ্তপ্রায় আধুনিকতা আর যান্ত্রিক বাহনের আধিক্যতায়। এমনকি ফসল কাটার পর ফাঁকা মাঠে গরুর গাড়ির প্রতিযোগিতা হতো- গাড়ি নিয়ে কার গরু আগে যায় দেখার জন্য। সেই বিশেষ প্রতিযোগিতাও এখন তেমনটা আর দেখা যায় না। বাঁশ আর বাঁশের চটা দিয়ে পিছনের ফ্রেম তৈরি করে গরুর গাড়ি বানানো হতো। সেই গাড়ির চাকার জন্য কামারের কাছ থেকে লোহার পাত সংযুক্ত করা হতো। শতভাগ জ্বালানী বিহীন ও পরিবেশবান্ধব গরুর গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কোন খরচ হতো না। শুধু গাড়ি বহনের দু’টি গরুর পিছনে যা খরচ হতো। আবার সেই গরুও বিক্রি করে আর্থিক লাভবান হওয়া যেতো। প্রবীন অনেকে জানালেন- কলারোয়া উপজেলায় এক সময় গরুর গাড়ি চলত প্রতিনিয়ত। কিন্তু এখন এই সব জনপদে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই গরুর গাড়ি। অবশ্য এখনো মাঝে মধ্যে গ্রামাঞ্চল গুলোতে দুই-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়ে। কিন্তু সেগুলোর অবস্থাও নাজুক। চন্দনপুর গ্রামের ৮০উর্দ্ধো বয়সী নজরুল ইসলাম জানান- ‘আজ শহরের ছেলে মেয়েরা তো দূরের কথা, গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ি যানবাহনটির সাথে খুব একটা পরিচিত নয়। আগে অনেকেরই গরুর গাড়ি ছিল উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন।’ কেঁড়াগাছী গ্রামের মুনছুর আলী বলেন- ‘আমার বাবা দাদারা গরুর গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করে আমাদের বড় করেছেন। এই আধুনিক যুগে গরুর গাড়ি নেই, আছে অটো বা ইঞ্জিন চালিত যানবাহন। মানুষের গরুর গাড়ির ওপর চাহিদা নেই।’ কুশোডাঙ্গা এলাকার গরুর গাড়ির মালিক সুব্রত বলেন- ‘আগে মালামাল বহন করার জন্য গরুর গাড়ির বিকল্প ছিল না। শুধু মালামালই নয়, বিয়ের জন্য বা আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার একমাত্র ভরসা ছিলো গরুর গাড়ি। মাঠের ফসল বহনের জন্য গরুর গাড়ির বিকল্প ছিল না, যদিও যতসামান্য সেটা এখনো দেখা যায়। এমনকি ফসল কাটার পর ফাঁকা মাঠে গরুর গাড়ির প্রতিযোগিতা হতো- গাড়ি নিয়ে কার গরু আগে যায় দেখার জন্য। সেই বিশেষ প্রতিযোগিতাও এখন তেমনটা আর দেখা যায় না।’ বর্তমানে আমরা নিজেদের ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার বা মাইক্রো ক্রয় করি ঠিক তেমনি কয়েক যুগ আগেও গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন লোকজন ও গৃহস্থরা গরুর গাড়ি নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করে বাড়িতে রাখতেন। আপদ-বিপদে তা তারা বাহন হিসেবে ব্যবহার করতেন সেটা। মাঝেমধ্যে তা আবার ভাড়াও দিতেন। এখন গরু আছে কিন্তু গাড়ি নেই। গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি হতে চলেছে। পরিবর্তনের যুগে এসে গ্রাম বাংলার সেই জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com