মাকসুমুল মুকিম, দোহার-নবাবগন্জ (ঢাকা)
যেখানে মানুষ টাকা দিয়ে শখের গাড়ি, বাড়ি আর বিলাসিতায় গা ভাসায়। সেখানে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাতে ব্যক্তিগত অর্থায়নে একের পরে এক শহীদ মিনার নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা ফ্রিডম (জেলা-৩১৫এ-১) এর চার্টার প্রেসিডেন্ট লায়ন আব্দুস সালাম চৌধুরী।
লায়ন আ. সালাম চৌধুরী জানান, এক’শ শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চান তিনি। এ পর্যন্ত ৫২ টি শহীদ মিনার নির্মাণ করেছেন। এক’শ শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোক্তা হিসেবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ধানমন্ডির কবি নজরুল ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নজরুল সম্মাননা ২০২৩ লাভ করেন এই শহীদ মিনার গড়ার কারিগরকে।
বুধবার(২২ মার্চ)সকালে সাভার ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে তার নিমির্ত ৫২ তম শহীদ মিনার উদ্বোধন করা হয়। শহীদ মিনার দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে মিনার নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে স্টেনলেস স্টিলের পাত। পাদদেশ নির্মাণ করা হয়েছে ইট, বালু, রড ও সুরকি দিয়ে। তার ওপরে লাগানো হয়েছে কালো রঙের মার্বেল পাথর। প্রতিটি শহীদ মিনার নির্মাণে ২ লাখ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা করে ব্যয় করা হয়েছে। বাংলাদেশের যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকলে, এই মানুষটিকে জানালে সেখানে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবেন বলে জানান।
তিনি ঢাকার দোহার উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের বিলাসপুর গ্রামের ক্বারি আবুল হাসেম চৌধুরীর ছেলে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে সালাম মেজো। তিনি শহরে বেড়ে উঠলেও গ্রামের মানুষের প্রতি তার রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা।
শহীদ মিনার নির্মাণে অনুরাগের সৃষ্টি কিভাবে জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০১৮ সালে বাড়ির অদূরে বিলাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১ শে ফেরুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসে অতিথি হয়ে স্কুলের অনুষ্ঠানে যান তিনি। সেখানে দেখতে পান বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কলা গাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। এক দিন পর গিয়ে দেখেন সেখানে শহীদ মিনারটি আর নেই। তখন তিনি ভাবলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার দরকার। সে ভাবনা থেকেই এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন।
তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালে বিলাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণের স্বপ্ন দেখলেও এর ব্যয়ভার জোগাড় করতে না পারায় সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেন নি। অবশেষে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিজ গ্রামে অবস্থিত বিলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের কাজ শুরু করেন। পরের বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা তার নির্মিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে এ মহৎ কাজে নিজেকে আত্মনিয়োজিত করেন।
তার নির্মিত শহীদ মিনারগুলোর মধ্যে দোহারে রয়েছে গণি সিকদার উচ্চবিদ্যালয়, মাঝিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পালামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাহমুদপুর উচ্চবিদ্যালয়, মধুরখোলা উচ্চবিদ্যালয়, জয়পাড়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, বেগম আয়েশা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মেঘুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ড্যাফোডিল উচ্চ বিদ্যালয়, কার্তিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামালচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, লটাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কাটাখালী মিছের খান উচ্চবিদ্যালয়, অরঙ্গবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাতনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘাটা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাটালীঘাটা মাসুম মিয়া উচ্চবিদ্যালয়, সাতভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মারুয়াপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রংপুরের হাতিবান্ধা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাগন করেছেন তিনি। বর্ণমালা আদর্শ স্কুল ও কলেজ (ইকুরিয়া-কেরানীগঞ্জ) ও চতরাহাট বহুমুখী দাখিল মাদরাসা (পীরগঞ্জ-রংপুর), মাদারিপুর ছিলারচর বালিয়াকান্দী বেগম ফজিলাতুন নেছা কলেজ, রংপুর বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজ, পীরগঞ্জ চতরা কারিগরি কলেজ। সর্বশেষ ৫২ তম শহীদ মিনার নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করেন সাভার ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। শুধু শহীদ মিনার নির্মাণকারি নন সমাজসেবক, দানশীল, সফল ব্যবসায়ী ও ভালো মনের মানুষ হিসেবে তিনি পরিচিত।
Leave a Reply