স্বাস্থ্য সেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ রোগ নির্নয়। যততাড়াতাড়ি রোগ নির্নয় হবে তত তাড়াতাড়ি সুচিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হবে।সরকারি ও বেসরকারি খাতে রোগ নির্নয় জনবল হিসেবে কর্মরত আছে মেডিকেল টেকনোলজিস্টগন, বায়োকেমিস্টগন, মলিকুলার বায়োলজিস্টগন, মাইক্রোবায়োলজিস্টগন।সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদবী নিয়ে রোগ নির্নয় শাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছে।নমুনা সংগ্রহ, হাতে কলমে পরীক্ষা নিরীক্ষা, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, নমুনা সংরক্ষণ, রিপোর্ট প্রিন্ট ও প্রস্তুত করে কনসালটেন্ট বা প্যাথলজিস্টদের নিকট প্রতি স্বাক্ষরের জন্য উপস্থাপনেত দায়িত্ব পালন করছে।বেসরকারি হাসপাতালে গ্রাজুয়েট মেডিকেল টেকনোলজিস্টগন সাইন্টিফিক অফিসার পদবী নিয়ে, বায়োকেমিস্ট পদবী নিয়ে কাজ করে চলেছেন।দু:খজনক বিষয় হচ্ছে এ সকল জনবলের কোন জব রেজিস্ট্রেশন বা প্রাক্টিস রেজিস্ট্রেশন নেই।এমনকি সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশন প্রদানের কোন প্রতিষ্ঠানই নেই।
স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর মেডিকেল সংশ্লিষ্ট কাজে খুব ব্যস্ত থাকায় এবং জনবলের ঘাটতির কারনে এলাইড হেলথ প্রোফেশনালসদের কাজে কোন গতি থাকে না।ফলে মন্ত্রনালয় থেকে কোন বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হলে অধিদপ্তরগুলো বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে পারছে না।বর্তমানে ১৩ টি সরকারি আই এইচ টি তে নতুন ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে।পদসৃজন করা না থাকায় শিক্ষক ও স্টাফ সংকট। অথচ ৩-৫ ব্যাচ পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রী অধ্যায়রত রয়েছে।স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ডা মামুন বলেন কম জনবল দিয়ে এত কাজ করা সম্ভব নয় এমনকি মেডিকেল কলেজের কাজই শেষ করতে পারছি না। অন্যদের নিয়ে কাজ করবো কখন ।ফলে সরকারের আগ্রহ থাকলেও বিশেষ কারনে অগ্রগতি হয় না।প্যারামেডিকেল শিক্ষাবোর্ড নামে শিক্ষাবোর্ড হওয়ার কার্যক্রম আলোরমুখ দেখেনি।এলাইড হেলথ প্রোফেশনালস কাউন্সিল এর কার্যক্রম ফাইল বন্ধি।পদশুন্য কিন্তু নিয়োগ বন্ধ মেডিকেল সহায়ক জনবলের।খরচ হচ্ছে বেশি কিন্তু পরিপুর্ন সেবার জন্য প্রাইভেট সেক্টরের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্পদের সুষম বন্টনের মাধ্যমে সেবা প্রদান বাড়ানো যায় অনায়াসে।উদাহরণ স্বরুপ- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ল্যাবরেটরি বা এক্সরে বিভাগ ৩ শিফিট চালু থাকলে স্বল্প সময়ে রোগ নির্নয় করা যেত এবং কয়েকগুন বেশি লোকের সেবা নিশ্চিত করা যেত।সরকারি আয় বাড়তো এবং মেশিন ও রিএজেন্টের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যেত।প্রতি শিফটে প্রাথমিকভাবে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ল্যাব ও রেডিওলজি নিয়োগদান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অন্যান্য শাখার জনবল এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার বা সাইন্টিফিক অফিসার পদায়ন বা পদোন্নতি দেয়া গেলে স্বল্প খরচে কয়েকগুন সেবা প্রদান, রাজস্ব আয় ও কর্মসংস্থান করা যায়।একইসাথে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত কিরতে ব্যক্তিগত ব্যয় কমানো ও দীর্ঘায়ু বাড়ানো যেত।
এলাইড হেলথ প্রোফেশনালসগন দেশে ভাল ক্যারিয়ার না পেয়ে বিদেশমুখি হচ্ছে।কেউ পি এইচ ডি নিতে দেশের বাইরে যাচ্ছে।জাপানে পি এইচ ডিতে গবেষণারত হারুন অর রশিদ বলেন দেশে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের পি এইচ ডি করার সুযোগ না থাকায় দেশের বাহিরে আসতে হয়েছে।আমেরিকায় মেডিকেল ল্যবরেটরি সাইন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত নাসির উদ্দিন বলেন বাংলাদেশ আমাকে উচ্চ শিক্ষা নিতে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির পর সুযোগ প্রাপ্তিতে সুবিধা না পাওয়ায় বিদেশে চলে এসেছি।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়ে সাইন্টিফিক অফিসার বা কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার পদ তৈরি করার কোন দৃশ্য অগ্রগতি নেই।২০২৫ সাথে ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গ্রাজুয়েট মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের পদ সৃজন, নিয়োগবিধি ও স্ট্যান্ডার্ড সেট আপে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি প্রেরন করা হলেও কার্যত অগ্রগতি নেই।বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ১৯৮৫ সালে মেডিকেল টেকনিসিয়ান পদ বিলুপ্ত করে দিলেও ২০২০ সালে কোভিড ১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৩০০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদ তৈরির ঘোষনা দিলেও ১৮০০ টেকনিসিয়ান পদ তৈরি করা হয়।সকল ডিপ্লোমা ১০ম গ্রেডে উন্নিত হলেও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের বিশেষ কারনে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে।জনবলের অভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এলাইড প্রোফেশনালদের উন্নতিতে যথাযথ পরিকল্পনা নিতে পারছে না।এজন্য মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অধিদপ্তর অথবা এলাইড হেলথ অধিদপ্তর আলাদা করা দরকার। অন্যথায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর এলাইড হেলথ ডিরেক্টর পদসহ আলাদা জনবলের পদ সৃস্ট ও নিয়োগ দিয়ে গতিশীল করা যেতে পারে।কাজের স্বীকৃতি ও যথাযথ মর্যাদা প্রদানে এলাইড হেলথ কাউন্সিল গঠন করার মাধ্যমে যুগান্তকারী পদক্ষেপ কার্যকর হবে।বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জনবলের অনুপাত কার্যকরা সম্ভব হবে।মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো সোহেল রানা বলেন স্বাস্থ্য সেবা একটি সমন্বিত টীম ওয়ার্ক হলেও বাংলাদেশে টীম স্পিরিট তৈরি হয়নি।রোগ নির্নয় জনবলের অগ্রগতি বন্ধ রেখে রোগ নির্নয় সেবা গতিশীল করা যাবে না।মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কাউন্সিল গঠন করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।এখনই সময় সেবা বৃদ্ধি ও কাংখিত পরিবর্তনের।
Leave a Reply