র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতার এবং হত্যার রহস্য উদঘাটনে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
গত ২১ জুলাই ২০২৩ ইং মধ্যরাতে শাহজাহানপুর থানাধীন মালিবাগ বাজার রোড বিভাবরী বাড়ির সামনে অলিউল্লাহ রুবেল’কে কতিপয় দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের আর্ত-চিৎকারে তার পরিবারের লোকজন ও পথচারীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। উক্ত ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপকভাবে আলোচিত হলে দেশব্যপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তৎক্ষণাৎ উক্ত দুর্ধর্ষ ও নির্মম হত্যাকান্ডে জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ২২ জুলাই ২০২৩ ইং রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানাধীন এলাকা হতে উক্ত হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত মোঃ আদনান আসিফ (২০) এবং মোঃ শাকিল (২০)ঢাকাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
ভিকটিম অলিউল্লাহ রুবেল রাজধানীর শাহজাহানপুর থানাধীন মালিবাগ এলাকায় স্ব-পরিবারে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করত। সে শান্তিবাগ এলাকায় ইন্টারনেট ও ডিমের পাইকারি ব্যবসা করত এবং সম্প্রতি ওই এলাকায় পানির ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হতে চেষ্টা করছিল। মূলত স্থানীয় এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে উক্ত এলাকায় শাহজালাল নামক ব্যক্তির সাথে তার শত্রæতার সৃষ্টি হয়।
এই শত্রুতার প্রেক্ষিতে ঘটনার একদিন আগে মালিবাগ সরকারি কলোনীর মাঠে শাহজালালের নির্দেশে হাবিব, সানি, আলিফ, শাকিল, আসিফ এবং আরও কয়েকজন মিলে রুবেলকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা সাজায়। ঘটনার দিন ২০ জুলাই ২০২৩ রাত ১১. ঘটিকার সময় যে রাস্তা দিয়ে রুবেল বাসায় যাবে সেই গলির মুখে অবস্থান নেয় ধৃত আসিফ এবং শাকিল। সেখান থেকে আর একটু সামনে একই গ্রæপের অন্যান্য সদস্য হাবিব, সানি, আলিফসহ অন্যান্যরা রুবেলকে মারার জন্য দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহকারে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষমান ছিল।
ধৃত শাকিল এবং আসিফ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে রুবেলকে হত্যার জন্য অপেক্ষারত হাবিবকে প্রতিনিয়ত রুবেলের অবস্থানের আপডেট দিতে থাকে। এরপর রুবেল সামনে এগিয়ে গেলে সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থান নেয়া হাবিব তার দলবল সহকারে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে রুবেলের উপর আক্রমণের চেষ্টা চালায়। তখন রুবেল বাঁচার জন্য দৌড়াতে শুরু করে এবং হাবিব ও অন্যান্যরাও তার পেছনে অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে।
কিছুদূর দৌড়ে আসার পর ২১ জুলাই ২০২৩ ইং রাত ১২.৪০ মিনিটের সময় শাহজাহানপুর থানাধীন ১৫৬ মালিবাগ বাজার রোড বিভাবরী বাড়ির সামনে এসে হাবিব ও তার দল রুবেলকে ধরে ফেলে এবং তাকে রাস্তায় ফেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এলোপাতাড়ীভাবে মাথা, দুই হাত, পা, পিঠসহ সারা শরীরে কোপাতে থাকে এবং ভিকটিমের পায়ের পাতা কুপিয়ে শরীর হতে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
এ অবস্থায়ও বাঁচার জন্য রুবেল রক্তাক্ত শরীর নিয়েই এগিয়ে গিয়ে মালিবাগ সরলতা ভবনের সামনে রাস্তায় গুরুতর জখমপ্রাপ্ত ও রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।পরবর্তীতে ভিকটিমের আর্ত-চিৎকার শুনে তার স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনরা এগিয়ে এসে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে কাকরাইল ইসলামী হাসপাতাল, পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য পঙ্গু হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জুলাই ২০২৩ ইং রাত ২ ঘটিকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় ভিকটিম রুবেলের স্ত্রী তানজিনা দেওয়ান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় ২১ জুলাই ২০২৩ তারিখ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দুপুরে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান,মূল পরিকল্পনাকারী শাহজালাল এর পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে। শাহজালাল এর সাথে স্থানীয় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রুবেলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এতে শাহজালাল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেলকে হত্যার জন্য হাবিবকে দায়িত্ব দেয়। এরই জের ধরে হত্যাকারীরা রুবেলকে হত্যার নীলনকশা সাজায় এবং সে অনুযায়ী নৃশংস হত্যাকান্ডটি সম্পন্ন করে।
শাকিল ও আসিফ ঘটনাস্থলে সক্রিয় অংশগ্রহণের পর দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে যায়। শাকিল ও আসিফ পরদিন টঙ্গিতে শাকিলের এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে গা-ঢাকা দেয় এবং অন্যান্যরা কুমিল্লার দিকে পালিয়ে যায় বলে জানায়।গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply