বয়স যদি কেবল একটি সংখ্যা হয় তাহলে, শ্রীমঙ্গলের রাম সিং গোড় ‘তিন ডিজিট’ অতিক্রম করছেন। সম্ভবত তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ! জাতীয় পরিচয়পত্র বলছে, তাঁর বয়স এখন ১১৯ বছর। শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের মেকানিছড়া চা বাগানে রাম সিং গোড়ের বসবাস।
হতে পারে, তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ! স্থানীয় প্রশাসন উনার খোঁজ খবর রাখছে, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তালিকাভুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে রাম সিং গোড়ের দাদা ও বাবা বুগুরাম গোড় ভারতের মধ্যপ্রদেশের জবলপুর থেকে চা-শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের গ্রাম মেকানিছড়ায় তারা বসবাস শুরু করেন। এখনো সেই গ্রামেই বসবাস করছেন।
রাম সিং গোড় সাংবাদিকদের জানান, তার বাবার আদি ভূমি ছিল ভারতে। চা চাষের জন্য তার বাবা এবং দাদা এই এলাকায় প্রথম আসেন। তার দাদা ও বাবার হাতে প্রথম পুটিয়াছড়া চা বাগান সৃজন হয়। তার হাতে সৃজন হয় হরিণছড়া চা বাগান। যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয় ১৯১৪-১৫ খ্রিষ্টাব্দে তখন তিনি বাগানের চৌকিদার ছিলেন। ইংরেজদের কাছে এই যুদ্ধের কথা শোনেন। ১৯৩৯ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় ইংরেজদের কাছ থেকে সেই খবরও শোনেন তিনি।
তিনি জানান, তিনি শ্রীমঙ্গলের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। তখন ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক পাশে পাকা ঘর, অন্য পাশে ছিল ছনের ঘর। তিনি এক আচার্য্য ব্রাহ্মণ পরিবারে থেকে পড়াশোনা করতেন। সেসময় শ্রীমঙ্গলে পাকা সড়ক হয়নি।
রাম সিং গোড়ের ভাষ্যমতে, পাকা ঘর বলতে শ্রীমঙ্গল পুরাতন বাজারে ত্রিপুরা রাজ্য ব্যাংক, রামরতন বানিয়ার বাসা ও জগন্নাথ জিউর আখড়ার পশ্চিমে ত্রিপুরা রাজার বাংলো (রাজ কাচারি) ছিল। মাঝেমধ্যে ত্রিপুরা রাজা হাতির পিঠে চড়ে ওই বাংলোয় এসে থাকতেন। সেখানে থেকে খাজনা আদায় করতেন। চা বাগানে নিজস্ব ট্রলি দিয়ে পাতা আনা-নেওয়া করা হতো। সেই ট্রলির লাইন স্থাপনও তিনি দেখেছেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, রাম সিং গোড়ের বয়স ১১৯ বছর। সেখানে তাঁর জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ৬ আগস্ট ১৯০৫। বাবার নাম বুগুরাম গোড় ও মায়ের নাম কুন্তী গোড়। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম রাম সিং গোড় লেখা হলেও তিনি নিজের স্বাক্ষরে লিখেছেন শ্রীরামসিং গোঁড়।
শ্রীমঙ্গলের হরিণছড়া চা বাগানের আরেক প্রবীণ মণিকা রিছিল বলেন, আমার জন্ম ১৯১৭ সালে। আমি ছোট থেকে রাম সিং গোড়কে দেখছি। তার শারীরিক গঠন ভালো। জীবনী শক্তিও অটুট রয়েছে। তার অনেক নাতিপুতি আছে।
রাম সিং এখনও লিখতে-পড়তে পারেন। ছেলে জগদীশ জানান, ‘টাকার অভাবে বাবাকে ফলমূল, হরলিক্স খেতে দিতে পারি না। ডাক্তার বলেছে হরলিক্স খাওয়ালে শরীরে শক্তি আসবে।’
চা শ্রমিকদের সংগ্রামী জীবনের শেষ নাই। দুইশত বছরেও অগ্রগতি লেখার মতো নয়! তাঁরা সমগ্র জীবন দিয়ে আমাদের চা পানের আনন্দের উৎস হয় মাত্র।
Leave a Reply