দেশে ফিরেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আলোচিত কর্মকর্তা বেলাল হোসেন চৌধুরী। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে অফিসও শুরু করেছেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখিও হন তিনি। আলোচিত এই কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার দিয়ে বলেন, একটি গোষ্ঠীর অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন তিনি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করেই তাকে সরকারি সফরে বিদেশ যাওয়ার অনমুতি দিয়েছেন। আর দুদকে অভিযোগ সেখানকার কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। তদন্তে যদি দোষী প্রমাণিত হই তবে না শাস্তি পাবো। কিন্তু তার আগেই একটি গোষ্ঠী নানা ধরনের অপপ্রচার করেই চলেছে। আলোচিত এই কর্মকর্তা গত ১৯ সেপ্টেম্বর সরকারি সফরে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া যান। অভিযোগ ওঠে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তিনি পুলিশকে ম্যানেজ করে দেশত্যাগ করেছেন। পুলিশ সদরদফতর পরে অবশ্য এর ব্যাখ্যাও দিয়েছিল। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি আদালত মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিদেশ গমন রোধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। তবে পরে ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেন। সরকারি কাজে বিদেশ গমনের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন (জিও) জারিও করা হয়। বেলাল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এনবিআরকে দুভাগে বিভক্ত করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাভাবিকভাবেই এই সিদ্ধান্তে কিছু মহলে অসন্তোষ দেখা দেয়। তবে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে আমি সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করি এবং তার কার্যক্রমে অটল থাকি। এরই মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সূচনা হয়। তিনি বলেন, এনবিআর বিভাজনের পর সরকার যখন দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থান নেয়, তখন দুদক কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এবং অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে আমার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে আমার কর্মজীবনে কলঙ্ক লাগানোর চেষ্টা চালায়। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি সরকার ক্ষমতায় থাকায় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে ছবি থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই স্বাভাবিক বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমার ছবি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে বোঝানোর চেষ্টা চলছে যে, ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়েছি। অথচ অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা। এনবিআরের এই কর্মকর্তা বলেন, সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ শুধু তার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নয়, প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। ফলে এই ষড়যন্ত্রের গভীরে প্রবেশ করে প্রকৃত অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করা অত্যন্ত জরুরি। তাই সরকারের উচিত দ্রুত এই অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দুদুকের অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, দুদক আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে করুক। আমার ভেতরে কোনো দুর্বলতা নেই। বলা হলো আমি আর অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরবো না। কিন্তু ফিরেছি। এগুলো মোকাবিলা করার সৎ সাহস আমার আছে। প্রসঙ্গত, বেনাপোল কাস্টমসের সাবেক কমিশনার ও বর্তমান এনবিআর সদস্য বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকে দেওয়া অভিযোগে জ্ঞাত আয়বর্হিভুত বিপুল সম্পদের মালিক বলে অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তও শুরু করে দুদক কর্মকর্তারা। এরই মাঝে তিনি যেন দেশ ছেড়ে চলে যেতে না পারেন তার কারণে আদালতে বিদেশ যাত্রার নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুরও করেন। পরবর্তী সোময়ে তার বিদেশ যাত্রার নিষেধাজ্ঞা বাতিলও করে আদালত। এরই মাঝে সরকারি কাজে তিনি ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া গেলে তাকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
Leave a Reply