কুষ্টিয়ায় বাড়ছে মশা বাহিত রোগাক্রান্তদের সংখ্যা। ডেঙ্গুতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে মারা গেছেন ৩ জন। জেলার দৌলতপুর উপজেলা হটস্পট হিসেবে চিহিৃত হয়ে উঠছে। কুষ্টিয়া ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও রাজবাড়ী জেলার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে চাপ আরও বাড়ছে।
এছাড়াও কুষ্টিয়ায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের ভিতরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তারপরও কুষ্টিয়াবাসীর মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে দৃশ্যমান সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই রোগের বাহক এডিস মশা নিধন ও প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন দৃশ্যমান কার্যক্রম চোখে পড়েনা। জনগণের অভিযোগ অপরিচ্ছন্নতা ও মশা নিধন না করার জন্যই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সদর হাসপাতালে ৫৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসে ১২ তারিখ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী।
গত শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়ায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে তানহা (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সকাল ৯টায় মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটির মৃত্যু হয়। তানহা দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের ছাতারপাড়া গ্রামের মোকলেস উদ্দিনের মেয়ে।
আগেরদিন (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বর্ষা(১৮) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। বর্ষা গত ৫ সেপ্টেম্বর ভর্তি কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু ।
এর আগে গত ২৯ আগষ্ট ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আছিয়া খাতুন(২৫) নামে আরেক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর এলাকার লাল চাঁদ আলীর স্ত্রী।
কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা.তাপস কুমার সরকার জানিয়েছেন গত ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ভর্তি হয়েছেন নতুন ১৫ জন, বর্তমানে ৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। কুষ্টিয়া ছাড়াও অন্যান্য জেলা থেকেও রোগীরা আসছে। সদর হাসপাতালে ২৫০ শয্যা থাকলেও ডেঙ্গু ওয়ার্ডে প্রয়োজন বিবেচনায় শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
শহরের থানাপাড়া এলাকার শরিফ বলেন, সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িতে বাচ্চা ও বৃদ্ধ মা রয়েছে। সবসময় তো মশারি টাঙিয়ে থাকা যায় না। যেহেতু এডিস মশাই এর একমাত্র বাহক সেহেতু এই মশার আবাস ও প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে পারলেই কেবলমাত্র আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষের তেমন কোন তৎপরতা নেই। আগে যাও বাড়ির আশে পাশের ড্রেনগুলোতে মশা নিধন স্প্রে করা হতো। এখন তার চোখে পড়ে না।
এদিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,এডিস মশা নির্মূলে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাদের কাজ হবে প্রতিদিন মশা নিধন স্প্রে করা।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তবে ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার ও মশার বংশ বিস্তাররোধ করা প্রয়োজন। এ কারণে অযথা কোন পাত্রে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
Leave a Reply