পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিসহ সাপ্তাহিক ছুটিকে ঘিরে লাখো লাখো পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। শনিবার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্ট ২ টার দিকে উত্তাল সমুদ্রে নেমে গোসলে ব্যস্ত প্রায় হাজার হাজার পর্যটক। সৈকতের কয়েক টি স্থানে বেশ কিছুদিন আগে দেখা মিলেছে সৈকতের বালিয়াড়িতে দুটি খাল।
প্রকৃতির নিয়মে জোয়ার-ভাটার কারণে খালের দিক পরিবর্তন হয়। এই খালকে বলা হয় চুরাখাল বা গুপ্তখাল। ঈদের দিন থেকে অধ্যবধি আট দিনে সৈকতে গোসল করতে নেমে এই গুপ্তখালে আটকা পড়ে দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে।মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১৫ জনের বেশি পর্যটককে।এদের মধ্যে একজন হলেন সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে শাহজাহান নামের ৪০ বছর বয়সী এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর দেড়টায় সৈকতের লাবণী পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত পর্যটক চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার শুলকবহর এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের পুত্র। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহিন।
তিনি বলেন, আজ সকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শাহজাহান গোসল করতে নামেন। তিনি সাগরের হাঁটু পরিমাণের চেয়ে কম পানিতে গোসল করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি স্রোতে ভেসে যান। কিছুক্ষণ পর তাকে স্বজন ও স্থানীয় লাইফগার্ড কর্মীরা উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেয়। সেখানে চিকিৎসক শাহজাহানকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরজন হলেন সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে দুইদিন ধরে নিখোঁজ থাকা হিমেল আহমেদ (২৪) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে কক্সবাজার শহরের বাকঁখালী নদী মোহনার নুনিয়ারছড়া এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
হিমেল আহমেদ গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আক্কাসের ছেলে। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার বেড়াতে এসে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গোসলে নেমে তিনি স্রোতের টানে ভেসে যান।
সৈকতের বালিয়াড়িতে এই খালের আশপাশে লোকজনকে গোসলে নামতে নিষেধ করে টাঙ্গানো হয়েছে একাধিক লাল পতাকা দিয়ে সতর্কতা নিশানা।সৈকতে আসা পর্যটকদের সতর্ক করতে চলছে মাইকিং করে লাইফগার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রচার প্রচারণা।কিন্তু সেদিকে কোন পর্যটকের কোন আকর্ষণ নেই।
সমুদ্র সৈকতের বেসরকারি লাইফগার্ড সি সেফ প্রতিষ্ঠানের ২৭ জন এবং জেলা প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৭ জন বিচ কর্মী গোসলে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, হিমেল আহমদের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ জন সমুদ্রে গোসলে নেমেছিলেন। হিমেল স্রোতের টানে ভেসে গেলেও বিচ কর্মীরা তৎক্ষণাৎ ৮ থেকে ৯ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। গুপ্তখালের আশপাশে গোসলে নামতে নিষেধ করে সৈকতে একাধিক লাল নিশানা তোলা হয়েছে। দূর থেকেও লাল নিশানা উড়তে দেখা যায়। পর্যটকদের সতর্ক করতে চলছে প্রচারণাও, কিন্তু লোকজনের সেদিকে নজর নেই। সমুদ্র দেখেই লোকজন ঝাঁপ দিচ্ছেন। পর্যটক বলে কঠোর হওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটি সহ সাপ্তাহিক ছুটি মিলে সাত- আট দিনে সৈকত ভ্রমণে আসেন ছয় লাখের বেশি পর্যটক। এখনো লাখো পর্যটক সৈকতে অবস্থান করছেন।বিপুলসংখ্যক মানুষের নিরাপত্তা এবং সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
Leave a Reply