1. : admin :
সুন্নতে খাতনা করাতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের ছাড় নয়- ডিবিপ্রধান - দৈনিক আমার সময়

সুন্নতে খাতনা করাতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের ছাড় নয়- ডিবিপ্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক
    প্রকাশিত : রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
সুন্নতে খাতনা করাতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী হাসপাতাল-ক্লিনিক কিংবা চিকিৎসক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আইনের স্বাভাবিক ধারায় প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। বাবা-মায়ের কোল থেকে এভাবে শিশু হারিয়ে যাবে এটা কেউ মেনে নিতে পারে না।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।

হারুন অর রশীদ বলেন, একসময় গ্রামাঞ্চলে সুন্নতে খাতনায় কোনো বৈজ্ঞানিক পন্থা ছিল না। এতে করে কোনো শিশুর ক্ষতি কিংবা কেউ আহত হতো না। কিন্তু এখন তথাকথিত ভুয়া ক্লিনিক যাদের কোনো লাইসেন্স নেই, সেসব ক্লিনিকে শিশুদের অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করা হচ্ছে। অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগের পর দেখা যাচ্ছে শিশুদের জ্ঞান ফিরছে না। যারা অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করছেন তাদের সে সম্পর্কে কোনো সঠিক জ্ঞান আছে কি না আমি জানি না।

তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে সুন্নতে খাতনা করাতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবিও এসব ঘটনায় ছায়া তদন্ত করছে। এটি একটি মারাত্মক গর্হিত কাজ।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, বাড্ডা থানায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শিশু আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ। তিনি আবেদন করলে মামলাটি থানা থেকে ডিবিতে নিয়ে এসে যথাযথভাবে তদন্ত করবো।

হাসপাতালগুলো অনেক বেশি প্রভাবশালী কিন্তু যারা মামলার বাদী তারা অনেক নিরীহ। অনেক সময় প্রভাবশালীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি-ধামকি দেয়। এ বিষয়ে ডিবির ভূমিকা কী- জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, যে মানুষটি তার আদরের শিশুসন্তানকে হারিয়েছেন তিনি অনেক গরিব মানুষ। সেই সন্তানকে নিয়ে মা-বাবার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল। এ বিষয়ে ডিবি সব অসহায় মানুষের পাশে আছে। যারা দায়ী কাউকে ছাড় দেবে না ডিবি।

এদিকে রাজধানীর বাড্ডা থানার সাতারকুল এলাকায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত চিকিৎসকদের ফাঁসি দাবি ও হাসপাতাল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন শিশু আয়ানের বাবা মো. শামীম আহমেদ। তিনি ডিবি কার্যালয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ দাবি জানান শামীম আহমেদ।

শিশু আয়ানের বাবা বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে হত্যার ভয় হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় আমি শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। অন্যদিকে বাড্ডা থানায় করা মামালতে জড়িতদের এখন পর্যন্ত কাউকে ধরেনি থানা পুলিশ। অথচ রামপুরার জে এস হাসপাতালে যে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো সঙ্গে সঙ্গে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অথচ আমার সন্তান আয়ানের ঘটনার দুই মাস হলেও কেউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

আমি ঢালাওভাবে সব ডাক্তারকে দোষারোপ করছি না, যারা ডাক্তার নামের কসাই, যারা অর্থ ও অবহেলার জন্য এমন ফুটফুটে শিশুদের হত্যা করছে তাদের শাস্তি চাই। যদি আমার সন্তান আয়ান হত্যার সঠিক বিচার হতো তাহলে হয়তো রামপুরায় আবার শিশুর খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো না। চিকিৎসকরা চাপে থাকতেন। আমার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবে না। কিন্তু আমি চাই- দেশের মানুষ সচেতন হোক, পাশাপাশি অভিভাবকরাও সচেতন হোক।

মামলার বিষয়ে শামীম আহমেদ বলেন, আমি মামলা করলেও কোনো অগ্রিগতি নেই। জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। ফলে আমি ডিবির শরণাপন্ন হয়েছি। আমি মনে করি ডিবি আমাদের শেষ ভরসাস্থল। ডিবি যদি একটি গরিব পিতা হিসেবে সহানুভূতি দেখায় তাহলে আমরা সুষ্ঠু বিচার পাবো। ডিবিপ্রধান বলেছেন তারা আমাদের অভিযোগ আমলে নেবেন।

ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খাতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর রেশ কাটকে না কাটতেই আরও এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুর হয়েছে। রাজধানীর মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে খতনা করাতে গিয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিন আয়হামের (১০) মৃত্যু হয়েছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় আহনাফকে সুন্নতে খাতনা করাতে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com