1. : admin :
"বেশ্যা কিংবা নায়িকার পিছনে গল্প" - দৈনিক আমার সময়

“বেশ্যা কিংবা নায়িকার পিছনে গল্প”

আমার সময় ডেস্ক
    প্রকাশিত : বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩

 

গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায় , তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয় । লালন বলে জাত কারে কয়, সেকথা ভেবে বলো না,, জাত গেল জাত গেল বলে, একি আজব কারখানা।। আমাদের সমাজে বেশ্যাদের সবাই খুব খারাপ চোখে দেখে । কিন্তু একেকজন নারীর বেশ্যা হয়ে ওঠার পেছনের গল্পটা খুব করুন এবং কষ্টের। সমাজের পুরুষ (ঘরে বউ থাকার পর ও) গুলো নিজের জৈবিক চাহিদা মেটাতে তাদের কাছে যায়! আবার যখন সেই বেশ‌্য তা‌কে সু‌যোগ দেয়না তখন তাকে বেশ্যা বলে গালি দিতে ও ভুল করে না। দেখাগেছে আমাদের সমাজে অধিকাংশ সুন্দরী মেয়ে, সেটা হোক মি‌ডিয়া কিংবা সাধারন কোন মহল্লার প্রথমে ধর্ষিত হয় চো‌খের ধারা,তারপর সু‌যোগ পে‌লে শ‌রি‌রের ঘর্ষনে করা হয় ধর্ষন কিন্তু অধিকাংশ মেয়েই সেটা চেপে যায় কেউ বিশ্বাস করবে না বা সমাজের ভয়ে। মায়ের পাঁয়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত হলে ও সমাজ নারীকে এখনো শুধু ভোগের পন্য হিসেবেই দেখেন। আমরাতো সেই পুরুষজাতী যে ধর্ষিতা নারীকে নিয়ে লিখি মানব বন্ধন করি আবার আমি অন্য নারীকে শয্যা সঙ্গী হতে প্রস্তাব দেই আর তাকে বুঝাই সেটা হলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ! মিলনেই নাকি ভালোবাসার পূর্ণতা পায় ! ‌ঠিক তাই, অা‌মি এক চিত্র না‌য়িকার কথা বল‌ছি, বাচ্চা সুলভ অাচারন, খোলা ম‌নের মানুষ, ছোট বড় সবাই‌কে প্রান খু‌লে ঝ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে, ভালবা‌সে। গ‌রিব মানুষ‌দের অা‌র্থিক সহ‌যোগীতা সহ অ‌নেক মান‌বিক কাজ সে ক‌রে‌ছেন। দর্শক‌দের বি‌নোদন দেওয়ার জন‌্য শ‌রিরের অ‌ধিকাংশ বা‌হি‌রে রা‌খতেন প‌রিচাল‌কের কারনে অথবা দৃ‌শ্যের প্রয়ে‌াজনে। শত ব‌্যাস্ততার ম‌াঝেও তার খোলা শ‌রির দেখ‌বে, খোলা রান দেখ‌বে , দেখ‌বে বু‌কের কিছু অংশ । অথচ সে কিছু দিন আগে যখন বিপ‌দের মু‌খে পড়েছিলো! সাংবা‌দিক স‌ম্মেলন লাইভ করেছিলো তখন আমিও লাইভটি দেখ‌ছিলাম, সাধারন দর্শক যে ক‌মেন্টস গু‌লো ক‌রে‌ছি‌লো তা স‌ত্যিই ক‌ষ্টের ছি‌লো, যা স‌ত্যিই একজন শিল্পীর জন‌্য অপমা‌নের ছি‌লো। আমার মনে হয়েছিলো এখানে এই সাহসি চিত্রনায়িকা না হয়ে অন্য কেউ হলে নিশ্চিত আত্মহত্যা করতো বলে আমার মনে হয়। এত‌দিন মি‌ডিয়া‌তে কষ্ট ক‌রে, ধৈর্য‌্য ধ‌রে, অক্লান্ত প‌রিশ্রম ক‌রে, সাধারন মে‌য়ে থে‌কে সে আজকের জনপ্রিয় কিংবা জননিন্দিত চিত্র নায়িকা হ‌য়ে‌ছেন। তার মি‌ডিয়ার প‌রিশ্রম‌কে অাপনারা মুল‌্যায়ন না ক‌রে, উ‌ল্টো তাকে বলছেন বেশ‌্যা, কর্পোরেট পতিতা, খোলা‌ড্রেস পড়া নোঙ্গরা মে‌য়ে ব‌লে গা‌লি দি‌চ্ছি‌লেন অথচ সেই নায়িকার শ‌রির দেখার জন‌্য প্রতি‌নিয়ত হাজার হাজার মানুষ এক‌টি ফটোর জন‌্য তার পে‌জে ওৎ পে‌তে থা‌কেন। যাই হোক সেই নায়িকা ধৈর্য‌্য ধর‌তে ধর‌তে সে এমন একটা জায়গায় এ‌সে পৌছাই‌ছে যা স‌ত্যিই অমান‌বিক একটি থ্রিলার সিনেমার গল্পে রুপ নিয়েছে। সে দে‌শের অা‌লো‌চিত একজন না‌য়িকা হ‌য়ে এরকম একটি স্টেট‌মেন্ট এম‌নি এম‌নি দেয়নি, অবশ‌্যই সে ক্ষ‌তিগ্রস্থ, সে নির্যা‌তিত। যা‌নিনা তার স‌ঠিক বিচার হ‌চ্ছে কিনা ত‌বে এতটু‌কো বল‌বো, শিল্পী‌দের কাজ দেখার অা‌গে অাপনার মনটা শিল্প‌বো‌ধে ডু‌বি‌য়ে অান‌তে হ‌বে। তার শরীর ও অভিনয় দেখে বি‌নোদন নি‌বেন কিন্তু সেই শিল্পী বিপ‌দে পড়‌লে তা‌কে গা‌লি ছু‌ড়ে দি‌বেন? মহল্লার মেয়েকে ভোগ করবেন কিন্তু সে সুযোগ আপনাকে না দিলেই তাকে বেশ্যা বলে গালিও দিবেন! না এটা ১০০% মূর্খ‌্যতার প‌রিচয়।
অামা‌দের সিনেমা/ নাটক’র গল্প নির্মান কর‌তে গে‌লে, বেশ‌্যা, ইমাম, ঠাকুর, দালাল, রাজ‌নি‌তি‌বিদ , শিক্ষক ,বাবা, মা সবাই‌কে প্রয়োজন প‌রে। তার মা‌নে এই নয় যে, নগ্ন পোশাকে যে অশ্লীলতা করবে সেই অশ্লীল, তারমানে এই নয়যে বেশ‌্যার চ‌রি‌ত্রে ‌যে অ‌ভিনয় কর‌বে, সেই বেশ‌্যা! অবশ‌্যই বেশ‌্যা‌কে বেশ‌্যা ম‌নে না ক‌রে, একজন শিল্পী ম‌নে করা উ‌চিৎ, মহল্লার পতিতাকে পতিতা মনে না করে একজন মানুষ ম‌নে করা শিখতে হ‌বে। আজকের নায়িকা, অভিনেত্রী কিংবা সস্তা দামের বেশ্যা হওয়ার পিছনে একটি কিংবা একাধিক ঘটনা রয়েছেন। যা শুনলে আপনি অবাক হবেন অথবা নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলবেন। তাই আমি বলবো একজন খারাপ মেয়ে কিংবা পতিতা মায়ের পেট থেকেই ভুমিষ্ট হয়নি বরং সমাজ আর সমাজের মানুষ খারাপ হতে বাধ্য করেছে, পতিতা হতে বাধ্য করেছে। তাই আমরা চোরকে চোর বলে গালি দেওয়ার পূর্বে একটু ভেবে চিন্তে অপমানের তিরটা ছুড়ে দিন। আমরা উপর থেকেই ঘটনাটা দেখে কিংবা শুনে মন্তব্য করি আসলে একটু গড়িয়ে গিয়ে খবর নিলে দেখা যাবে হয়তো ঘৃনিত অথবা করুন একটি গল্প তাই অা‌মি তিব্র নিন্দা যানাই এমন অাচার‌নের, অা‌মি তিব্র প্রতিবাদ যানাই যারা অনলাইন কিংবা অফলাইনে এমন উল্টাপাল্টা ক‌মেন্টস করেন। বরাবরই দেশ বিদেশ সব মি‌ডিয়ার উপ‌রে শকু‌নের দৃ‌ষ্টি থা‌কে, এই শকু‌নের হাত থে‌কে অামার অাপনার অামা‌দের সবার প্রতিবাদ ও সহ‌যোগীতার মাধ‌্যমে আমাদের শিল্পকে বাচা‌তে হবে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের দেশের ভিতর কিংবা দেশের বাহিরেও অ‌নেক না‌য়িকা/ অভিনেত্রী হয়‌তো কা‌রোনা কা‌রো কা‌ছে জি‌ম্মি থাকে কিন্তু কে‌নো? ক্ষমতার দাপু‌টে? এটাও সত্য যে প্রতি‌টি অভিনেত্রী/না‌য়িকার মোটামুটি বে‌ঁচে থাকারমত পর্যাপ্ত অর্থ সম্পদ অা‌ছে কিন্তু ক্ষমতাধর হায়নারা কিংবা অন্যকেউ কে‌নো মি‌ডিয়ার অ‌ভি‌নে‌ত্রিদের উপ‌রে হানা দেয়? কেন রাতবেরাত যখনতখন হাজিরা দিতে ডাকেন! শিল্পীরাও মানুষ, নায়িকারাও মানুষ, বেশ্যারাও মানুষ। আর মানুষ হয়ে মানুষের অবমূল্যায়ন করা, ছোট করে কথা বলা চরম অপরাধ। আমাদের নৈতিকতা সম্পর্কে জানতে হবে। নৈতিকতা সম্পর্কে প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। মানুষ হয়ে মানুষকে সম্মান করার সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। নিয়মিত নামাজ/ পূজা করলেই আপনার দায়িত্ব শেষ নয়, আপনার সমাজ, সমাজের মানুষের ভালমন্দ সব দিকে খবর রাখা, সামর্থ মত সহযোগিতা করাও একজন আদর্শিক মানুষের কাজ। আমাদের সমাজে কোনাে মানুষই পাপী হয়ে জন্মায় না। প্রতিকূল পরিবেশে কিংবা সমাজ ব্যাবস্থা পাপ মানুষকে কলুষিত ও কলঙ্কিত করে তােলে। সুতরাং, পাপী বলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না, কেননা সে স্বেচ্ছায় পাপী হয়নি। তাই পাপীকে নয়, তার পাপী হয়ে ওঠার কারণ তথা পাপকে ঘৃণা করা উচিত।
আমি আপনি কিংবা এই সমাজের ভন্ড বাটপার অথবা পতিতা সবাই নিস্পাপ হয়ে পৃথিবীতে আসে। ধীরে ধীরে সে বড় হয়। তার চাহিদার বিস্তৃতি ঘটে কিন্তু অনেক সময়ই তার চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়। না চাইতেই যে পায় সে হয়তাে এ সংঘাতকে এড়াতে পারে। কিন্তু যেশিশু জন্মের পর থেকে বা পরবর্তীতে বিরূপ পরিবেশে বড় হয়, দুঃখ-কষ্ট, ক্ষুধা আর নির্যাতনের সাথে যার বাস, জীবনের প্রয়ােজনে তার পক্ষে সমাজের নিষিদ্ধ পথে, পাপের পঙ্কিল পথে পা বাড়ানাে অস্বাভাবিক নয়। বাধ্য হয়েই সে পাপী হয় কিন্তু জন্মের সময় তাে সে পাপী ছিল না বরং পরিবেশের প্রতিকূলতাই তাকে পাপী করেছে। অনুকূল পরিবেশ পেলে, একটু স্নেহ-ভালােবাসার পরশ পেলে হয়তােবা তার হৃদয়ে সৃষ্টি হতে পারে অনুতাপের অমিয় ধারা। হয়তােবা সেই অমিয় ধারায় স্নান করে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে একসময়। এভাবে সমাজের বন্ধুর পথে চলতে গিয়ে বিপথগামী হওয়া ব্যক্তিদের সুপথে ফিরিয়ে এনে সমাজকে কলুষমুক্ত করা অসম্ভব কোনাে কাজ নয়। শত খুনের নায়ক ইতিহাসখ্যাত হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া বা উন্মুক্ত তরবারি হাতে নবিজি (স)-কে হত্যা করতে যাওয়া ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কিন্তু পাপীকে ঘৃণা করে সমাজকে কলুষমুক্ত করা সম্ভব নয়। আর তাই মায়ের ঘৃণা সন্তানের বিরুদ্ধে নয়, সন্তানের গায়ে মাখা মলের বিরুদ্ধে সাবানের জেহাদ কাপড়ের বিরুদ্ধে নয়, ময়লার বিরুদ্ধে। অতএব অপরাধীকে ঘৃণা না করে তার পুনর্বাসনে এগিয়ে এলে সমাজে অপরাধীর সংখ্যা হ্রাস পাবে। তাই আমাদেরসকলের উচিত পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করে পাপীকে পাপমুক্ত হতে সহায়তা করা।
রানা বর্তমান
সাহিত্যিক ও নির্মাতা

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com