1. : admin :
অসাধু পুলিশের সোর্সরা নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক ব্যবসা - দৈনিক আমার সময়

অসাধু পুলিশের সোর্সরা নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক ব্যবসা

আমার সময় ডেস্ক
    প্রকাশিত : বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩
  • রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশের সাথে থাকা সোর্সরা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড বিশেষ করে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। অসাধু পুলিশদের পরোক্ষ সহযোগীতায় চলছে মাদক বেচা-কেনা। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসা এখন জমজমাট পাড়ায় পাড়ায় মহল্লার অলি-গলীতে।

প্রায় সময়ই দেখা যায় সোর্সরা আসামি ধরার নামে থানার পুলিশদের সাথে গাড়িতে ঘুরে বেড়ান। সাধারণত চাহিদামত দাবি পূরণ না হলে, যে কাউকে ফাঁসাতে পারে। তাই সোর্সদের নিয়ে আতঙ্কে সাধারণ মানুষ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, লালবাগ, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ, খিলগাঁও, সবুজবাগ, দক্ষিনখান, বাড্ডা, ভাটারা ,বনানীসহ বিভিন্ন এলাকার সোর্সেরা সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িত। পুলিশের গাড়িতে চলাফেরার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মানুষ ভয়ে মুখ খোলে না। পুলিশরা অপরাধীদের বা মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ধরতে সোর্সদের কাজে লাগিয়ে থাকে। আর এজন্য পুলিশদের একটি সোর্সমানি বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এই বরাদ্দকৃত সোর্সমানি সাধারণত তারা পাননা। কিন্তু সোর্সমানি না দিলেও জব্দকৃত মাদকের একটি অংশ সোর্সদের দেওয়া হয়ে থাকে। পরে সোর্সরা তাদের লোক দিয়ে এসব মাদক বিক্রি করে থাকেন।

  • অধিকাংশ সোর্সই মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় একাধিকবার পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক হন। এরপর থেকেই পুলিশের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে হয়ে ওঠে আরো ঘনিষ্ঠ। আইনের ফাঁকে বেরিয়ে এসেই শুরু করে তাদের পুরোনো কর্মকাণ্ড, সঙ্গে যোগ করেন পুলিশের সোর্স হিসেবে বাড়তি ক্ষমতা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, সোর্সদের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা আছে, তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তাদের দিয়ে দেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে যে সোর্স মানি বরাদ্দ রয়েছে তা সোর্সদের কাছে পৌঁছানো হয় না। ফলে ওইসব সোর্সরা যেসব আলামত উদ্ধার বা জব্ধ করা হয় তার থেকে কিছু নিয়েই তারা আবার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। এতে সোর্সরা বাধ্য হয়েই মাদক ব্যবসায় জড়িত হচ্ছে। পুলিশের সোর্সসহ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা যারা করেন, তাদের তথ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, মাদক কারবারে কেউ বাধা দিলে তাকে নিয়ে চলে ষড়যন্ত্র। কখনো ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি আবার কখনো মারধরের হুমকিও দেওয়া হয়। প্রায় সময়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালানোর আগেই সব মাদক কারবারিদের পূর্বেই সতর্ক করে দেন সোর্সরা। ফলে অভিযান চালিয়েও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সফলতা পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে সাধারণত পুলিশের সোর্স প্রয়োজন হয়। এজন্য পুলিশের নিয়মিত বাজেটের একটা বড় অংশ সোর্সমানি হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। তবে এ সোর্সমানির টাকা কখনো সোর্সদের দেওয়া হয় না। তারা এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করেই তাদের পাওনা পুষিয়ে নেন। আর এ কারণে সোর্সেরা কখনো ওই টাকা দাবিও করেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, অপরাধী গ্রেপ্তারে নানা তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করাই সোর্সের কাজ। পুলিশ এসব সোর্স নিয়োগ করে অপরাধীদের মধ্য থেকেই। বিনিময়ে তারা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু সোর্সেরা অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিয়ে নিজেরাই ব্যবসা শুরু করছেন। এরা মাঝেমধ্যে বিরোধী গ্রুপের দু-চার জনকে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা নিরাপদ রাখেন। ডিএমপির ৫০ থানার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় রাজধানী-জুড়ে মাদকের স্পট তৈরি হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, পুলিশের সোর্সসহ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা যারা করেন, তাদের তথ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। মাদক ব্যবসায়ী, তাদের গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের নাম, পিতার নাম, তাদের রাজনৈতিক দলীয় ও প্রশাসনিক পরিচয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে। সারা দেশের মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক গডফাদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। মাদক ব্যবসায়ী বা ইয়াবা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই মাদক আন্ডারওয়ার্ল্ডে তারা ডন হিসেবে পরিচিত। আবার তারা গডফাদার হিসাবেও পরিচিত। তাদের হাতেই দেশের মাদক বা ইয়াবা বাণিজ্যের সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল। আবার অনেকেই সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা। ওয়ার্ড, থানা বা মহানগর নেতা থেকে খোদ সংসদ সদস্য থেকে সিআইপি খেতাব পাওয়া ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরাও মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com