1. : admin :
পরিচয় গোপন করতে হত্যার পর পোড়ানো হয় সাইফুলের মুখ! - দৈনিক আমার সময়

পরিচয় গোপন করতে হত্যার পর পোড়ানো হয় সাইফুলের মুখ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
    প্রকাশিত : সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪
মাসুকের কাছ থেকে ভাগিনার জন্য মোটরসাইকেল কিনে দিতে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে বাইক দিতে না পারায় মাসুকের চাপে ফয়সাল বাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। তারা ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালানো  সাইফুলের মোটরসাইকেল ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছিনতাই করার জন্য ছুরিও কিনেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাসুক ভুক্তভোগী সাইফুলকে এক সাংবাদিকের তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিও চিত্রধারণের জন্য নেত্রকোণায় যেতে হবে বলে জানায়।
ঘটনার ৩ দিন আগে (১৩ মার্চ) বিকেল ৩ টায় মিরপুর ১৪ থেকে মাসুক ৩ হাজার টাকা ভাড়ায় সাইফুলকে নিয়ে নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে রওনা করে। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে একই বাইকে উঠে ফয়সালও।
নেত্রকোণা শহরে পৌঁছার পর ফয়সালকে পেছন থেকে রাস্তার পাশের পাথর দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করা হয়। মাটিতে পড়ে অচেতন হয়ে গেলে ছুরি দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তার পরিচয় গোপন করতে পরিহিত শার্ট-প্যান্ট খুলে তার মুখমণ্ডল পেঁচিয়ে মোটরসাইকেলের পেট্রোল দিয়ে মুখমণ্ডলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর মোটরসাইকেলটি মাসুক তার ভাগিনাকে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
গলা কেটে হত্যার পর নৃশংসভাবে লাশের মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় রহস্য উন্মোচনসহ জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র্যাব।
সোমবার(১৮ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৪ মার্চ দুপুরে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের দেওরাজান বালুর চরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ দেখে স্থানীয় লোকেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে। লাশ উদ্ধার ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানা যায়, নিহতের নাম সাইফুল ইসলাম। বাবা আব্দুস সামাদ, বাড়ি ঝিনাইদহ।
ওই ঘটনায় বড় ভাই বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গত রাতে র্যাব-১৪ এর একটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের হত্যাকারী মো. মাসুক মিয়া (২৯) ও আল-ইমরান ফয়সালকে (৪৪) গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা সাইফুল হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মাসুক ও ফয়সাল মূলত আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই/চুরি চক্রের সদস্য। সাইফুল ৩/৪ বছর যাবত রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করে আসছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল দিয়ে ভাড়ায় চালাতেন।
গত ১০-১৫ দিন পূর্বে গ্রেপ্তার মাসুক গ্রেপ্তার ফয়সালকে জানায় তার ভাগিনার একটা মোটর সাইকেল দরকার। সেই সুবাদে মাসুক তার ভাগিনার নিকট থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ের ফয়সালকে দেয়। কিন্তু ফয়সাল বাইক দিতে না পারায় মাসুক চাপ দিতে থাকে। পরে দুজন মিলে ফয়সালের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পিতভাবে তারা গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছুরি কেনে। এক সাংবাদিকের তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিও চিত্রধারণের জন্য নেত্রকোণায় যেতে গত ১৩ মার্চ ৩ হাজার টাকা ভাড়ায় সাইফুলকে ভাড়া করা হয়। বিকেল ৩ টায় মাসুক সাইফুলকে নিয়ে মিরপুর ১৪ থেকে নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে রওনা করে। গাজীপুর থেকে উঠে ফয়সালও। ময়মনসিংহ  শহরে পৌঁছলে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকায়। ফয়সাল নিজেকে দৈনিক শেষ খবর পত্রিকার ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চলে যায়। নেত্রকোণা শহরে চলে আসে এবং সংবাদের তথ্য সংগ্রহের অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।
পরে রাত ৩টার দিকে পাথর দিয়ে প্রথমে মাথায় সজোরে আঘাত করা হয়। অচেতন হয়ে গেলে ছুরি দিয়ে গলাকেট মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সাইফুলের। পরিচয় গোপন করতে গ্রেপ্তারকৃতরা ভুক্তভোগী সাইফুলের পরনের শার্ট-প্যান্ট খুলে তার মুখমণ্ডল পেঁচিয়ে মোটরসাইকেলের পেট্রোল দিয়ে মুখমণ্ডলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও  সাইফুলের মোবাইল ফোন পানিতে ফেলে তারা বাইক নিয়ে চলে আসে। বাইকটি মাসুকের ভাগ্নের নিকট মোটরসাইকেল রেখে দুজনেই আত্মগোপনে চলে যায়।
কমান্ডার মঈন বলেন, রাজধানীর মিরপুর ১৪ এলাকায় বসবাস করতো মাসুক। দিনে রাজমিস্ত্রীর কাজ আর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো সে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়।
গ্রেপ্তার ফয়সাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাবের  হাতে গ্রেপ্তার হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com