বাংলাদেশের জাদুশিল্পে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করল কনসোল ম্যাজিক একাডেমী। রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হল ৩৪তম জাতীয় জাদু উৎসব—যা ছিল এক অনন্য সাংস্কৃতিক আয়োজনে ভরপুর ঐতিহাসিক দিন।
প্রধান অতিথির দীপ্তিতে মঞ্চ আলোকিত উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন – বাংলাদেশের জাদুশিল্পের জীবন্ত কিংবদন্তি ম্যাজিশিয়ান জুয়েল আইচ। তাঁর উপস্থিতি উৎসবকে এনে দেয় এক অনন্য মাত্রা। শুধু একজন শিল্পী নয়, তিনি এদিন ছিলেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণার প্রতীক। তাঁর জাদুশিল্প বিষয়ক দর্শন ও মূল্যবান বক্তব্য তরুণ জাদুশিল্পীদের জন্য হয়ে উঠেছে পাথেয়।
গুণীজনদের শুভেচ্ছা ও দিকনির্দেশনায় উৎসব সমৃদ্ধ উৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন— আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ম্যাজিক আইকন আলী রাজ অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা পীরজাদা শহিদুল হারুন ডক্টর আশরাফুল নেতা, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও উপদেষ্টা, কনসোল ম্যাজিক একাডেমি, ময়মনসিংহ মোহাম্মদ মাহবুব রেজা করিম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মনোনীত ময়মনসিংহ জেলার সর্বোচ্চ করদাতা মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু, সভাপতি, ম্যাজিক ফেডারেশন সিকদার আব্দুস সালাম, লেখক ও সাধারণ সম্পাদক, ম্যাজিক ফেডারেশন জাদুশিল্পী রবিন খান, প্রেসিডেন্ট, IDM Ring 289, USA – ঢাকা, বাংলাদেশ; উপদেষ্টা, ম্যাজিক ফেডারেশন লায়ন একলাছ উদ্দিন খান, অধ্যক্ষ, ময়মনসিংহ কমার্স কলেজ মোহাম্মদ অলিউল আলম খোকন, সহ-সভাপতি, ম্যাজিক ফেডারেশন বিশিষ্ট জাদুশিল্পী গোল্ড মেডেলিস্ট ফখরুল ইসলাম শিপুরাজ, একেএ শাহ্, জাদু রাজ বিপ্লব, রাজিব বসাক, জাদু আজাদ, এম ইউ হাওলাদার প্রমুখ ।
তরুণদের মঞ্চ মাতানো পারফরম্যান্স উৎসবে কনসোল ম্যাজিক একাডেমির বিভিন্ন প্রজন্মের তরুণ শিল্পীরা উপস্থাপন করেন মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। তাঁদের অভিনব কৌশল, মঞ্চনৈপুণ্য এবং সৃজনশীলতা দর্শকদের অভিভূত করে তোলে। এটি ছিল তরুণদের জন্য আত্মপ্রকাশের এক অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তাঁরা জাদুশিল্পকে উপস্থাপন করেছেন এক আধুনিক রূপে।
প্রশিক্ষণভিত্তিক ওয়ার্কশপে শিল্পের গভীরে প্রবেশ উৎসবের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় মানসম্মত ওয়ার্কশপ, যেখানে ম্যাজিশিয়ান হাবিবুর রহমান (ময়মনসিংহ) এবং জুয়েল আইচ সরাসরি জাদুশিল্পের কলা-কৌশল ও নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করেন। এই সেশনে অংশগ্রহণকারীরা শিল্পের গঠনমূলক দিক, নৈতিকতা এবং আন্তর্জাতিক মান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা লাভ করেন।
ম্যাজিক শপের প্রথমবারের মতো মিলনমেলা: নতুন ইতিহাসের সূচনা এই উৎসবে আরও এক অনন্য সংযোজন ছিল—বাংলাদেশে এই প্রথম দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ম্যাজিক শপগুলোর অংশগ্রহণে এক বিশাল মিলনমেলা।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ দেশের আট বিভাগের ৬৪ জেলা থেকে আগত প্রায় ২০০ জন ম্যাজিশিয়ান ও ম্যাজিক সরঞ্জাম ব্যবসায়ী এই আয়োজনে একত্রিত হন। এটি ছিল একপ্রকার ম্যাজিক ফেস্টিভাল মার্কেট, যেখানে নতুন প্রপস, লার্নিং টুলস ও প্রযুক্তিনির্ভর জাদুর নানা সরঞ্জাম প্রদর্শন ও বিক্রয় হয়। এই উদ্যোগ দেশের জাদুশিল্পের অর্থনৈতিক ও পেশাগত বিকাশে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
পরিকল্পনার পেছনে নিবেদিত নেতৃত্ব আয়োজনে সদস্য সচিব হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন মোঃ তরিকুল ইসলাম সরকার (টি সরকার)। একাডেমির দীর্ঘদিনের এই নিবেদিত প্রাণ সংগঠক সুচারু পরিকল্পনা ও কর্মনিষ্ঠায় পুরো উৎসবকে পরিণত করেন সফলতার এক অনন্য উদাহরণে।
সভাপতি মুস্তাক ওয়াসেল-এর অভিজ্ঞ নেতৃত্ব ও দূরদর্শী পরিচালনায় আয়োজনটি পেয়েছে সর্বাঙ্গীন সফলতা ও পরিপূর্ণতা।
গতকাল শুক্রবার দুপুর ২ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ উৎসব ছিল এক অসাধারণ সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা। কনসোল ম্যাজিক একাডেমীর ৩৪ বছরের নিরলস প্রচেষ্টা ও ঐকান্তিক প্রচারণায় আজ জাদুশিল্প উঠে এসেছে জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে।
এই আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে, জাদু আজ আর কেবল বিনোদন নয়, বরং একটি সম্মানজনক শিল্পমাধ্যম—যার নেতৃত্বে রয়েছে কনসোল ম্যাজিক একাডেমীর মতো দূরদর্শী প্রতিষ্ঠান। এই পথচলা একাডেমিকে যেমন নিয়ে যাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, তেমনি বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগতেও সৃষ্টি করবে নতুন দিগন্ত।
Leave a Reply