সেবা রপ্তানিতে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে দেশ। মোট রপ্তানিতে সেবা খাতের অবদান এখনো ১০ শতাংশের কম। কয়েক বছর ধরে সেবা রপ্তানি ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেবা রপ্তানি ১৬ শতাংশের মতো কমেছে। রপ্তানি নেমে এসেছে সাড়ে ৭০০ কোটি ডলারের নিচে। এমনিতেই সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা কম করে ধরা হয়। কিন্তুবিগত কোনো অর্থবছরে সেই লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বরং যেসব সেবা রপ্তানি করা যেত সেগুলোর কোনো কোনোটি এখন আমদানি করা হয়। গত অর্থবছরও লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম হয়েছে ১৭ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেবা রপ্তানিতে গত অর্থবছর সবচেয়ে বেশি ১০৫ কোটি ডলার আয় এসেছে পরিবহন খাত থেকে। আকাশ, সমুদ্র, সড়ক ও রেলপথের পরিবহন মিলে এই রপ্তানি আয় গত অর্থবছরে এসেছে। এই চারটির মধ্যে আকাশপথের সেবা রপ্তানি থেকে এসেছে সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার। সমুদ্রপথে পরিবহন সেবার রপ্তানি আয় ৮৩ কোটি ডলার। সবচেয়ে পিছিয়ে রেলপথ। রেলের পরিবহন সেবা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে মাত্র ১০ লাখ ডলার। সূত্র জানায়, সেবা রপ্তানিতে দ্বিতীয় বড় খাত হচ্ছে নির্মাণ। গত অর্থবছর এ খাত থেকে মোট ১১৭ কোটি ডলারের সেবা রপ্তানি হয়েছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি ডলার আয় এসেছে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যসেবা রপ্তানি থেকে। এ খাতের কম্পিউটার সেবা যেমন বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার, ডেটা প্রসেসিং ও পরামর্শ সেবা রপ্তানি থেকে এসেছে ৬০ কোটি ডলারের মতো। সেবা রপ্তানির তালিকায় আরো রয়েছে পর্যটন, ব্যাংক-বীমা ও মেধাস্বত্ব। এ ছাড়া বিদেশি বিমান, জাহাজ কিংবা অন্যান্য পরিবহন বাংলাদেশ থেকে জ্বালানি নিলে সেটিও সেবা রপ্তানির অন্তর্ভুক্ত। ২০২২ সালের জাতীয় শিল্পনীতিতে অটোমোবাইল, এভিয়েশন, যোগাযোগ, ওয়্যারহাউস, সুপারশপ, বিপণিবিতান, রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদিকে সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সূত্র আরো জানায়, সেবা রপ্তানিতে মানের উন্নয়ন খুব বেশি জরুরি। যেমন দেশের চিকিৎসাসেবা উন্নত হলে এ দেশে সেবা নিতে আসত বিদেশিরা। এতে সেবা রপ্তানি বাড়ত। এখন হচ্ছে তার উল্টো। চিকিৎসাসেবা নিতে বিদেশে যেতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। এর অর্থ সেবা রপ্তানির পরিবর্তে আমদানি করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষাসহ অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। ব্যবসায়িক স্বার্থে বেসরকারি খাতকেই এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সেবা রপ্তানিতে খুব বেশি কিছু করার নেই। চলতি অর্থবছর পণ্য ও সেবা মিলে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার কোটি ডলার। গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ১২ শতাংশের মতো বেশি। এদিকে সেবা রপ্তানি কমা প্রসঙ্গে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান জানান, সেবা রপ্তানিতে পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ এ খাতে যথেষ্ট মনোযোগের অভাব। সেবার মান বিশ্বমানের না হওয়ায় রপ্তানি সে হারে বাড়ছে না। গত অর্থবছরে সেবা রপ্তানি কমার কারণ অবশ্য ভিন্ন। অতিমারি করোনাকালে বৈশ্বিক পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এ কারণে গত দুই অর্থবছর পরিবহন সেবা রপ্তানি থেকে বেশি আয় সম্ভব হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এ খাতের আয়ও স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
Leave a Reply