সাভারে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে মারধর ও লুটপাটকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগী মাসুমসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার এবং স্থায়ী বহিস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভোগী ব্যবাসায়ীসহ এলাকাবাসীরা। ১৪ এপ্রিল রোববার দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গেন্ডা বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন তারা।
আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী চুন্নু বলেন, গত রমজান মাস থেকেই সাভার পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগী মাসুম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে আসছিলো। তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় গত ৬ মে সন্ধ্যায় একটি নোয়া মাইক্রোবাস ও ১০-১২টি মোটরসাইকেল যোগে অন্তত ৩০ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার মালিকানাধীন আনন্দপুর টিম্বার এন্ড স’মিল, বিসমিল্লাহ ওয়াশ কারখানা, গেন্ডা ফল মার্কেট এবং আমার ছোট ভাইয়ের নিউ আনন্দপুর টিম্বার এন্ড স’মিলে হামলা চালায়।
এসময় সন্ত্রাসী মাসুম দেওয়ান ও ধর্ষক সোহেল রানা, আলমগীর, মিলন, শামিম, অনিক, হাকিম, ইসমাইল, আরিফ, নাদিম, সাহিদ সরকার, সবুজসহ অন্যান্যরা আমাকে কারখানার ভিতরে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে এবং নগদ প্রায় ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। হামলার সময় আমাকে বাঁচাতে পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা আমার স্ত্রী, সন্তান, ভাতিজা ও ছোট ভাইকেও দা, চাপাতি, লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আহত করে।
এঘটনায় সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করলেও অদ্যবদি পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, আমি ছাত্রলীগ করেছি, যুবলীগ করেছি, স্বেচ্ছাসেবকলীগ করেছি এবং বর্তমানে দলের সাথে সম্পৃক্ত আছি। ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু সন্ত্রাসী আমার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে এসে চাঁদা না দেয়ায় পরিবারের সদস্যসহ আমাকে মারধর করে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেলো। এখনও তারা ফেসবুকে সক্রিয় থেকে বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করলেও দলীয় পরিচয়ে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরা সাধারন মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি সন্ত্রাসী মাসুম দেওয়ানকে সাময়িক বহিস্কার করায় ধন্যবাদ প্রদান এবং স্থায়ী বহিস্কারের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
আহত নান্নু মিয়া বলেন, আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। নিজেও ছাত্রলীগ করেছি। ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু সন্ত্রাসী চাঁদার জন্য আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালিয়েছে। চাঁদা না দেয়ায় আমার বড় ভাই, ভাবী, ভাতিজাদেরকে বেধরক মারধর করেছে। আমরা দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এজন্য আমার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা আরও বলেন, সন্ত্রাসী মাসুম দেওয়ান এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনা। মানুষের দোকান দখল করে ছাত্রলীগের কার্যালয় বানানো থেকে শুরু করে বাড়ি করলে চাঁদা আদায়, ফুটপাত ও রাস্তাঘাটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহন থেকে কুলি বিটের নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অরাধের সাথে জড়িত। তার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট সাধারন মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না। এই মুহুর্তে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলে সে ভবিষ্যতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন মানববন্ধনে উপস্থিত ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা।
মানববন্ধন শেষে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা সন্ত্রাসী মাসুম দেওয়ান ও তাদের সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিস্কারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদিব কুমার গোপ বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকেই আমরা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী মাসুম দেওয়ান ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। খুব শিঘ্রই তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও সাংবাদিকদের জানান।
Leave a Reply