টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে। এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন। এদিকে ধর্ষণ ঘটনার এলাকার রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে গেছে। বড় মনির ছোট ভাই সংসদ-সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের নির্বাচনি এলাকায়ো এর প্রভাব পড়েছে। দলের অনেক নেতাও এখন তাকে এড়িয়ে চলছেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, বুধবার রাতে সদর থানায় বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন এক কিশোরী। মামলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ভিকটিমের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের জন্য নানা প্রচেষ্টা চলছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়-১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় নিজ বাড়ির পাশে একটি ভবনে বড় মনি কিশোরীকে ডেকে নেন। এরপর তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও আপত্তিকর ছবি তুলে রাখা হয়। আপত্তিকর ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে পরবর্তীতে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। এতে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ২৯ মার্চ রাতে আদালত পাড়ার একটি বাড়িতে তুলে নিয়ে তাকে আবারও ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনার পর বড় মনির স্ত্রী নিগার আফতাব তাকে মারধর করেন।
মামলার পর টাঙ্গাইল শহর এবং ভূঞাপুর গোপালপুরে সংসদ-সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বিরোধী পক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। শনিবার ভূঞাপুর উপজেলা সদরে দুই শতাধিক নারী ঝাঁড়ু মিছিল করে।
মামলাকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল ও ভূঞাপুরে মিছিল এবং পোস্টার লাগানো প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি জানান, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন কয়েকজন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব রয়েছে। তারা আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার’ করতে চাচ্ছে।
রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীন জানান, মামলার তদন্ত ও আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বড় মনির বিরুদ্ধে করা মামলার অবস্থা সম্পর্কে জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি শরীফ হাজারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ তথ্য জানান।
ছোট মনির অনুসারী জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর আমিনুর রহমান বলেন, ষড়যন্ত্র করে মামলা দেওয়া হয়েছে। আর একে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের ইন্ধনে মিছিল হচ্ছে। তারা পোস্টারও লাগিয়েছে। তিনি আরও বলেন, তদন্তে সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মাসুদুল হক বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি তাদের জন্য ঘটনাটি খুবই বিব্রতকর। তিনি আরও বলেন, বড় মনি যে জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছেন। সে ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারছি না, সইতেও পারছি না। ভূঞাপুরে নারীদের মিছিলটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়েছে। পুরো শহরে পোস্টার লাগানো হয়েছে। সচেতন নাগরিক সমাজের নামে লাগানো এ পোস্টারে বড় মনিরের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।
এদিকে, রোববার সকালে ‘সচেতন নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে বড় মনির পক্ষে মিছিল বের করা হয়। এতে তার অনুসারীরা অংশ নেয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে পথসভা করা হয়। এতে পৌর কাউন্সিলর আমিনুর রহমান ও কামরুল হাসান বক্তব্য দেন। তারা বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বড় মনির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
Leave a Reply