বাংলাদেশে বেকার সমস্যা যখন শিক্ষিত সমাজে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে , তখনই দেখা যায় একজন মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি করে,একই পরিবারের চারজন সরকারি চাকরি করছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে ।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ চৌধুরীর স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদ সুত্রে জানা যায়,
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ লাল খান, পিতা-মৃত মোঃ খান্দু খান, মাতা-বনা বিবি গ্রাম-আদমপুর ডাকঘর-পেয়ারপুর, উপজেলা-মাদারীপুর সদর,জেলা-মাদারীপুর । মুক্তিযোদ্ধা সনদ নাং-৩৭১৮৮,তারিখ-৬ ডিসেম্বর ২০০০
মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের মৃত্যুর পর গত ১৮-১২- ২০২২ ইংরেজি তারিখে, পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাহফুজুর রহমান ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার তাজনেহার স্বাক্ষরিত ওয়ারিশ সনদে দেখা যায়, আমেনা বেগম তার স্ত্রী, লুৎফা বেগম কন্যা, মোঃ দেলোয়ার হোসেন পুত্র,মৃত মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান পুত্র, নাজমা আক্তার কন্যা, মোঃ শহিদুল ইসলাম পুত্র, মনিরুজ্জামান পুত্র, মোছাঃ অনিতা আক্তার সালমা কন্যা, মোছা মনিকা কন্যা ও মো রকিবুল ইসলাম ইসলাম পুত্র । এই দশজনকে ওয়ারিশ হিসাবে দেখানো হয়েছে ।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান সাহেবের সাথে কথা বললে আমার সময়ের প্রতিবেদককে সত্যতা নিশ্চিত করেন ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের অষ্টম সন্তান মোছাঃ মনিকার সাথে বিয়ে হয় একই গ্রামের আলী ইসলাম ওরফে আসলাম পিতা-মৃত সিদ্দিক মুন্সী, মাতা-তাছলিমা খাতুনের সঙ্গে । সেই আলী ইসলাম ওরফে আসলাম ১৩-০৮-২০১৮ সালে আইনজীবী অহিদুজ্জামান (বোরহান) এর মাধ্যমে সিনিয়র জজ আতিকুল ইসলাম এর আদালতে জালিয়াতি করে এফিডেভিট করে নিজের মা তাছলিমা কে বানিয়েছেন তার মৃত শশুর মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের মেয়ে, তিনি হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার নাতি এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বর্তমানে আয়কর অফিসের ভৈরব কিশোরগঞ্জে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন ।
আলী ইসলাম ওরফে আসলাম এর আপন ছোট ভাই আসাদুজ্জামান ও নকল ওয়ারিশ সনদের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মাদারীপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ।
এ বিষয়ে আলী ইসলাম ওরফে আসলামের নিকট কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার মামা সব জানে, আসাদুজ্জামান তার ছোট ভাই নয় বলে জানায় ।
আসাদুজ্জামানের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে বলেন যে,সে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করে, কিন্তু কিভাবে কি হয়েছে সে কিছু বলতে পারে না, তার ও ইঙ্গিত একই মামার দিকে ।
দশ জন ওয়ারিশ ছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের তৃতীয় পুত্র মৃত নজরুল ইসলাম খানের দুইজন স্ত্রী লাল খানের মেয়ে পরিচয়ে ওয়ারিশ সনদ ও সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে চাকরি করতেছেন । তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরিতে কর্মরত । মৃত নজরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী মোছাঃ রহিমা আক্তার যাহার এনআইডি নাম্বার ১ ৯ ৮ ৩ ৯ ১ ৯ ৬ ২ ১ ২ ২ ৪ ২ ৯ ৫ ৪ পরিচয় গোপন করে বর্তমানে পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত । তার জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতার নাম- লালা খান লেখা আছে ।
মৃত নজরুল ইসলাম খানের দ্বিতীয় স্ত্রীঃ মোছাঃ জেসমিন ইসলাম স্বামী মৃত নজরুল ইসলাম, মাতাঃ মোছাঃ পেয়ারা হক জন্মতারিখ ২১ শে মার্চ ১৯৭০, আইডি নাম্বার ৫ ৪ ১ ৫৪ ৮ ৩ ৩ ৫ ০ ৫ ৮ ৫
মোছাঃ জেসমিন ইসলাম পরিচয় গোপন করে নকল ওয়ারিশ সনদ তৈরী করে গত ১৩-৮-১৮ সালে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের মেয়ে পরিচয় দিয়ে ওয়ারিশ সনদ তৈরি করেন । এবং বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এনবিআর এর অধীন পেনশন ক্লোজিং সেকশনে অফিস সহকারী হিসেবে চাকুরীরত ।
জেসমিন ইসলাম শুধু ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি করেনি, তার এসএসসির সার্টিফিকেট ও জাল বলে যানা গেছে , সেখানে দেখা যায়, তার নাম-জেসমিন আক্তার পিতার নাম- মৃত লাল খান
মাতার নাম-আমেনা বেগম
সার্টিফিকেট এ জন্ম তারিখ ১/১/১৯৮৮ সাল দেওয়া, অথচ তার এনআইডি তে দেওয়া ২১/০৩/১৯৭০ সাল ।
মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের দ্বিতীয় পুত্র,
স্বামী-নজরুল ইসলামের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলেও, কিভাবে সে বেতন তুলতে পারে এ বিষয়টি সত্যি ভাবনার জন্ম দেয় ।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, সব মিলিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদের পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের ১৩/১৪ জন জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদে সরকারী চাকরি করে ।
Leave a Reply