ভারতের মণিপুর রাজ্যে দুই নারী বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মণিপুর পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ খবর দেয়া হয়েছে। ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্য মণিপুরে গত প্রায় তিন মাস ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। প্রধানত মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এ সংঘাতে প্রায় দেড়শ’ মানুষের মৃত্যু, ৮০০-র বেশি গুরুতর আহত ও ২৯০টির বেশি গ্রামের সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে। সংঘাতের প্রথমদিকেই দুই কুকি নারীর ওপর ভয়াবহ যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটলেও এর একটি ভিডিও চিত্র গত বুধবার রাতে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায়, দুই নারীকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘুরানো হচ্ছে। বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘুরানোর আগে তাদের গণধর্ষণ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাধা দেয়ার চেষ্টা করায় নির্যাতনের শিকার এক নারীর ১৯ বছর বয়সী ভাইকেও হত্যা করা হয়েছে। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই ভারতজুড়ে আলোড়ন শুরু হয়। নতুন করে জাতীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। সর্বত্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, সুপ্রিম কোর্টও গভীর উদ্বেগ জানায়। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, সরকারের উচিত এখনই ব্যবস্থা নেয়া। না হলে সুপ্রিম কোর্ট পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। এরপরই এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। স্থানীয় সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন মতে, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, দুই নারীকে নগ্ন করে হাঁটানোর ভিডিও প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার নাম হুইরাম হেরোদাস। ভাইরাল হওয়া ভিডিও’র ভিত্তিতেই ৩২ বছর বয়সী ওই যুবককে চিহ্নিত করে থৌবাল জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, হেরোদাস এক নারীকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হেরোদাসকে গ্রেপ্তার করার কয়েক ঘণ্টা পর এদিন সন্ধ্যায় ওই ভিডিয়োর প্রেক্ষিতে আরও ১ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী। এরপর আরও ২ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় মণিপুর পুলিশ। তাদের নাম অবশ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি। মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। জড়িত অন্যাদেরকে যাতে তাড়াতাড়ি গ্রেপ্তার করা যায়, তার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রতিবেদন মতে, মণিপুর রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় চেকিংপয়েন্ট বসানো হয়েছে। রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী যৌথভাবে তল্লাসি চালাচ্ছে। মণিপুরের বিভিন্ন জেলায় মোট ১২৯টি চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে এবং নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে ৬৫৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে দুই কুকি নারী যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ভারতজুড়ে প্রবল ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মধ্যে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং বলেছেন, তার সরকার অপরাধীদের ‘মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি’ বিষয়টি বিবেচনা করছে। বহুল আলোচিত এ ঘটনাটি মূলত মে মাসের। মণিপুরে গত ৩ মে সহিংসতা শুরু হয়। এর পরের দিন অর্থাৎ ৪ মে ঘটনাটি ঘটে। এর ৭৭ দিন পর বুধবার রাতে ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। এতে দেখা যায়, একদল যুবক গ্রামের রাস্তা দিয়ে সম্পূর্ণ নগ্ন দুই নারীকে হাঁটিয়ে ধানখেতে নিয়ে যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতেই যুবকদের কয়েকজন দুই নারীকে যৌন নিগ্রহ করছেন। ওই দুই নারী কাঁদছেন এবং তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন। বিভিন্ন কুকি সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট’ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এই দুই নারী কুকি সম্প্রদায়ের সদস্য। তাদের একজনের বয়স ২১ ও আরেকজনের ৪০ বছর। কুকি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, মেইতেই সম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট সংগঠন নারীদের ওপর এ নির্যাতন চালিয়েছে।
Leave a Reply