আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বিচার ব্যবস্থাকে আরো সহজ করতে হবে। সীমাবদ্ধতা মেনে দায়িত্ব পালনে বিচারকদের দ্রুত, স্বল্প ব্যয়ে ও ভোগান্তিহীনভাবে বিচারিক সেবা দিতে হবে। বিচারকদের অন্যায়-অবিচার করার কোনো সুযোগ নেই। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা বাংলাদেশে আসেন।
গতকাল রোববার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ‘৫০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা একথা বলেন।
অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, যে মামলা তদন্তের মধ্যে থাকে, সে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার অধিকার শুধু পুলিশ অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রয়েছে। যদি একটি মামলার চার্জশিট হয়ে যায় তখন এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের মামলা প্রত্যাহার করার এখতিয়ার বা সুযোগ থাকে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করেছিল, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তখনকার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ প্রধানের (আইজিপি) সঙ্গে বৈঠক করে অনুরোধ করেছিলাম, এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি যেন নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেটা অনুযায়ী ওনারা সব মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছেন জেনেছিলাম। পরে আমাদের জানানো হয়েছিল, অল্প কিছু মামলা এখনো রয়ে গেছে, যেগুলো হত্যা সংক্রান্ত। ফাইয়াজের মামলা এমন একটি মামলা, যেখানে দুইজন আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। আমি খবর নিয়ে জানলাম, ওনারা যদি ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রত্যাহার না করেন, তাহলে এই মামলাটার নিষ্পত্তি বা ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া খুবই দুষ্কর। এটা সম্পূর্ণ পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের করার কিছু নেই।
উপদেষ্টা আরো বলেন, আমাদের যতই সদিচ্ছা থাক, একটি মামলা চার্জশিট পর্যায়ে আসার পরই কেবল আইন মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারে। তার আগে কোনো কিছু করার সুযোগ আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। আমি আশা করবো, কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তারা যেন সেটি প্রত্যাহার করার পদক্ষেপ নেন। যাতে এই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমি তার (ফাইয়াজ) ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তাকে বলেছি, এটা হচ্ছে প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় যদি আগানো হয়, তাহলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
ফাইয়াজের মামলা প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন, পুলিশ তাদের অত্যাচার-নির্যাতন করে সেটি নিয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই সরকার এসেছে আট মাস হয়ে গেছে। ওনারা (জবানবন্দি দাতারা) এখনো সেটি প্রত্যাহার করে নেননি কেন? এটা ওনাদের জিজ্ঞেস করেন। এটা করলে তো শিশু ফাইয়াজকে কোর্টে যেতে হতো না।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের, ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. সাব্বির ফয়েজ প্রমুখ।
Leave a Reply