বরিশালে এবার রসালো ফল তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কমেছে দামও। খুচরা পর্যায়ে কম দামে তরমুজ কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা। তবে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে বেশীরভাগ তরমুজ ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ায় মূলধন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষীরা। চৈত্রের মাঝারী থেকে ভারি বর্ষণে বিপাকে পড়েছেন বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক তরমুজ চাষি। বৃষ্টি ও অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষেতের তরমুজ নিয়ে এখন বিপদে এলাকার চাষিরা। বৃষ্টির কারণে এক সাথে অনেক তরমুজ ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করায় বাজারে সরবরাহ অনেক বেড়েছে। অগণিত তরমুজ যে শুধু ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে, এমনটা নয় পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষেতের তরমুজ পাইকার মোকামে আনা হলেও পচন ধরছে এবং নষ্ট হচ্ছে ফলগুলো। ফলে বরিশালের মোকাম সংলগ্ন জেলখালসহ কীর্তনখোলা নদী তীরে মৌসুমের রসালো ফল তরমুজ ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, গত বছর বরিশাল জেলায় ৬৪৬ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ২৫ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন তরমুজ। বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় বরিশালে দিন দিন তরমুজের চাষ বাড়ছে। এ বছর বরিশালে ৭শ’ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৬ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন চাষীরা। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪১ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন। প্রকারভেদে ড্রাগন, জাঁগর এবং সুপার নামে ৩ ধরনের তরমুজ চাষ হচ্ছে বরিশালে। অনুকূল আবহাওয়া এবং বেলে-দোআশ মাটির কারণে এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে বরিশালে। কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টির কারণে ক্ষেতের তরমুজ নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতেই। অনেকে তরিঘরি করে ক্ষেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে নিয়ে যান বিভিন্ন মোকামে। কিন্তু একই সময়ে মোকামগুলোতে প্রচুর তরমুজ সরবরাহ হওয়ায় কমে গেছে দামও। নিরুপায় হয়ে ১০ হাজার টাকা মূল্যের প্রতি শ’ (১শ’) তরমুজ ৩ হাজার টাকায়, ২০ হাজার টাকার তরমুজ ৮ হাজার টাকা এবং ৮ হাজার ছোট তরমুজ ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন পাইকাররা। এতে হতাশা প্রকাশ করেন চাষী এবং পাইকররা। বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে গিয়ে দেখা গেছে মাছের আড়তগুলো এখন তরমুজে সয়লাব। পোর্ট রোড ঘাটে নোঙ্গর করে পণ্য তরমুজ খালাশের অপেক্ষায় আছেন আরও অন্তত অর্ধশত নৌকা-ট্রলার। চাষী ও পাইকাররা হতাশ হলেও কম দামে তরমুজ কিনতে পেরে খুশি খুচরা ক্রেতারা। দেড়শ’-দুইশ’ টাকা মূল্যের একটি তরমুজ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে পারছেন ক্রেতারা। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মুরাদ হাসান বলেন, বরিশালের বেলে-দোয়াশ মাটি এবং আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী। তরমুজ স্বল্প সময়ে লাভজনক ফসল। তরমুজ চাষে কৃষক বেশী লাভবান হতে পারে। তাছাড়া জাত উন্নত হওয়ায় তরমুজের চাষ এবং উৎপাদনও বেড়েছে। এবার বরিশালে ১ হাজার ৪৬ হেক্টর জমিতে ৪১ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে বলে তিনি জানান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এবারো দেশে আবাদ ও উৎপাদনের ৭০ ভাগেরও বেশি তরমুজের যোগান দিচ্ছে দক্ষিণাঞ্চল। দর ভালো পাওয়ায় দিন দিন তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। তবে এবার চৈত্রের বর্ষণে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল স্বপ্নের তরমুজে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটছে কৃষকের।
Leave a Reply