রাজউক মহাখালী জোনের ইমারত পরিদর্শক সোলাইমানের ঘুষ গ্রহন ও দুর্নীতির একাধিক তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন সরকারী বেসরকরী পেশাজীবী দপ্তরে ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি অনিয়ম যেনো মরনব্যাধি ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে, সব দপ্তরেই এখন যেনো অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে।
দৈনিক আমার সময়ের অনুসন্ধানে, রাজউকের এমন এক পরিদর্শক সোলাইমানের সন্ধান মিলেছে।
বিগত ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার সুযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও জড়িয়ে পড়েছে এমন ঘুষ বাণিজ্য দুর্নীতি আর অনিয়মে । ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত মুখ খুলতে শুরু করেছে ভুক্তভোগী সাধারন জনগণ, বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে এ সব দপ্তরের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র।
এর মধ্যে রাজউকের অনেক কর্মকর্তার দুর্নীতি প্রকাশ্যে এলেও কিছু সংখ্যক কর্মকর্তার দুর্নীতি রয়েছে অগোচরে। বর্তমান সময়ে বাক স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ায় এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন সাধারণ ভুক্তভোগী জনতা। আর তাই এবার প্রকাশ্যে এলো রাজউকের ইমারত পরিদর্শক সোলাইমান হোসাইনের সব দুর্নীতি আর অনিয়মের চিত্র।
ঝিনাইদহের চাপড়ী গ্রামের মোঃ সোলাইমান হোসেন রাজউকে ইমারত পরিদর্শক হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন ২৫ অক্টোবর ২০১৫ সালে। যোগদানের পরে জোন ১/৩ এ কর্মরত থাকাকালিন নোটিশ ব্যবহার করে নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ ভাবে ঘুষ গ্রহন করে অনৈতিক ও আইন বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে অঢেল অবৈধ সম্পদের মালিক বনে জান তিনি।
তৎকালীন রাজউক অথোরাইজড অফিসার নূর আলম ও ইমারত পরিদর্শক মোঃ সোলাইমান হোসাইন জোন ৩/২ সাভার আশুলিয়ার বিরুলিয়া ব্রীজ পার হয়ে চারাবাগ বাজারের সাথে কিংশুক হাউজিং ও তার আশে পাশে নানান অপকর্ম সাধন করেছেন। এছাড়াও জানা গেছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানীর প্ল্যান বিহীন ভবন তৈরির পরে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহন করে তিনি রাজউকের প্ল্যান অনুমোদন করিয়ে দিয়েছেন। ৪ জুলাই ২০২৪ এ রাজউকের এড়িয়া পুনরায় ভাগের পূর্বে সোলাইমান জোন ১/৩ এ কর্মরত থাকাকালিন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোন ৩/২ এর এড়িয়ায় ঢুকে ও এই অপকর্ম করেছেন।
কিংশুক হাউজিং এর এক বাড়ির মালিক আলাউদ্দিন বলেন, পরিদর্শক সোলাইমান ও অথোরাইজড অফিসার নুর আলম তাদের কাছে ভবন ভেঙ্গে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৪০-৫০ লক্ষ টাকা দাবি করেন, পরে তারা ০৭ জন ভবন মালিকের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা গ্রহন করেন।
অন্য এক বাড়ির মালিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মোঃ তারিকুল ইসলাম ধ্রুব বলেন তার ভবনের নির্মান কাজ চলাকালিন পরিদর্শক মোঃ সোলাইমান হোসাইন সেখানে গিয়ে নাম পরিচয় না দিয়ে মাফিয়া স্টাইলে কাজ বন্ধ করতে বলেন এবং শ্রমিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ ইউসুব আলি জানান, ম্যাজিষ্ট্রেট উপস্থিত হয়ে ত্রুটিপূর্ন যে ভবনগুলো ভেঙে দিয়েছেন, সেই বাড়িগুলোর কাগজ ঠিক করতে পরিদর্শক সোলাইমান ও অথোরাইজড অফিসার নুর আলম প্রতি বাড়ি থেকে ১ লক্ষ করে টাকা নিয়েছেন।
কিংশুক হাউজিং এর মোঃ খোকন মিয়া জানান, আমরা প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমোদন নিয়ে বাড়ি তৈরি শুরু করলে ও রাজউকের কর্মকর্তারা তাতে বাধা দেয়। আমরা একাধিকবার রাজউকে অনুমোদনের জন্য গিয়েও অনুমোদন না পেলে পরিদর্শক সোলাইমান আমাদের কাছে প্রতি ভবনের জন্য সাড়ে ৬- ৭ লক্ষ টাকা দাবী করেন। তিনি আরো জানান যে অত্র হাউজিং এ সোলাইমানের নিজেরও জমি আছে।
একাধিক ব্যক্তি জানান, ইমারত পরিদর্শক সোলাইমান বিভিন্ন ভবন নির্মানে রাজউকের নোটিশের মাধ্যমে উচ্ছেদের ভয় দেখান তাতেও কাজ না হলে উচ্ছেদ করে অথবা ভবনের কিছু অংশ ভেঙে ফেলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
পরিদর্শক সোলাইমান ও অথোরাইজড অফিসার নুর আলমের এই অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে ভবন মালিকগন মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশনের আশ্রয় নিলে হাই কোর্টের বেঞ্চ ঐসকল ভবনগুলোতে রাজউকের সকল কার্যক্রমে স্থগিতের নির্দেশ প্রদান করেন।
মহাখালী রাজউক অফিসে গিয়ে ইমারত পরিদর্শক সোলাইমানের কাছে এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে, সে এ সকল বিষয় অসত্য ও বানোয়াট বলে দাবি করে আরও ভালোভাবে অনুসন্ধান করার অনুরোধ করেন।
Leave a Reply