স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, আমাদের দেশে অত্যন্ত সফল একটি সেক্টর হচ্ছে আরএমজি সেক্টর। যার সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে নারীদের বিপুল অংশগ্রহণ। আইসিটি সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কোথায় কোথায় প্রতিবন্ধকতা আছে তা চিহ্নিত করে সেভাবেই পলিসি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজ শনিবার রাজধানীর বিটিআরসি ভবনে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সেমিনারে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে । তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জন্য অনেক সম্ভাবনা তৈরির পাশাপাশি অনেক ঝুঁকিও তৈরি করেছে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় দেখি নারীরা সাইবার বোলিং, হ্যারাসমেন্ট বা ভায়োলেন্সের শিকার হন। আমাদের সরকার এগুলো শুরু থেকে বিবেচনায় নিয়েছে। আমরা চাই দেশের সাইবার স্পেস তথা তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিরাপদ থাকুক নারী পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সকলের জন্য।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আমরা একটি অভাবনীয় ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই রূপান্তর সমাজে সুযোগ তৈরির পাশাপাশি বৈষম্যও তৈরি করছে। ডিজিটাল গভর্নেন্স, ই লার্নিং, ইন্টারনেট সূচক এসব সূচকে সেবা গ্রহীতার দিক থেকে আমাদের নারীরা পিছিয়ে আছে। পলিসি মেকার হিসেবে নারীদের এই পিছিয়ে থাকার বিষয়টি মোকাবেলা করা আমাদের কর্তব্য। সে লক্ষ্যে আমাদের চেষ্টাগুলো অব্যাহত রেখেছি। তবে আমি মনে করি বৈষম্য দূর করতে ইন্ডাস্ট্রির সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে সরকারকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যদি ফাইবারাইজেশন এর টার্গেটগুলো অ্যাচিভ করতে পারি, এক্সেস টু ডিভাইস বানাতে পারি, ডিজিটাল সেবাগুলোকে অফিস থেকে বিকেন্দ্রীকরণ করে নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারি তাহলে বৈষম্য নিরসনে সফলতা আসবে। যে নিছক একটা দিবস উদ্যাপনের বাইরে এসে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম অর্জনকারী কৃতী সন্তান এবং সফল প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দিয়েছি।
প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী বলেন, সাইবার আইনের ২৫ ধারায় আমরা নারীবান্ধব একটি নতুন ধারা রেখেছি, যৌন হয়রানি ব্ল্যাকমেইলিং এবং অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশের ক্ষেত্রে নারীদের বর্ধিত সুরক্ষার কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইনে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। আমাদের নারী কেন্দ্রিক যে সফলতম প্রোগ্রামগুলো আছে তার মধ্যে অন্যতম হার পাওয়ার। আমরা এই প্রকল্পটির দ্বিতীয় ফেজ শুরু করছি এবং এখানে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সার্টিফিকেটধারী নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে অন্তর্র্বতী সরকার নারী পুরুষের সমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। শিল্পায়ন, নাগরিক জীবন এবং শিক্ষা স্বনির্ভরতা নারীকে ঘরের বাইরে কাজ করার সুযোগ করে দিয়ে প্রশস্ত করেছে দেশের কর্মক্ষেত্র। ফলে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তথ্য প্রযুক্তিসহ দেশের সকল ক্ষেত্রে নারীদের অবাধ বিচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে কর্মজীবী নারীদের তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরোধ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আইসিটি সচিব বলেন, নারীদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করছি। সাইবার সেফটি অর্ডিন্যান্স যা মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে তাতে সাইবার বুলিং এর বিষয় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষ সমতায়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মোঃ জহিরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান (অব.) মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারীসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা এবং টেলিকম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply