এক মিনিট বা দুই মিনিট নয়; টানা চল্লিশ মিনিটেও কেউ কাউকে কুপোকাত করতে পারেনি। তাই শেষমেশ কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহি ডিসি সাহেবের বলি খেলার ৬৮তম আসরে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুমিল্লার বাঘা শরিফ ও উখিয়ার নুর মোহাম্মদ বলী। তবে আয়োজকরা বলছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহি খেলাটি আগামী বছর থেকে আরও বড় পরিসরে আয়োজন করা হবে।
শনিবার (২০ মে) দুপুর না হতেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম।
গ্যালারিতে দর্শকের চাপ সামাল দিতে না পেরে নেমে যায় মাঠে। বলী খেলার স্থানের চারপাশে ঘিরে ধরে দর্শক।
এরপর মাঠের চারপাশ এক ঝলক চক্কর দেন বলীরা। বানশি আর ঢাকের তালে বলীদের নাচে উল্লাসে মেতে উঠে গ্যালারির দর্শকরা। আর বলীদের লড়াই শুরু হতেই দর্শকের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বহুগুনে।
উখিয়া থেকে আসা হামিদ উল্লাহ বলেন; তরুণরা বলী খেলায় অংশ নিতে আগ্রহী নয়, এই খেলা দেখতে আগ্রহী। তাই ঐতিহ্যবাহি খেলা দেখার জন্য স্টেডিয়ামে ছুটে আসে।
ভারুয়াখালী থেকে আসা রহিম উদ্দিন বলেন, উখিয়ার নুর মোহাম্মদ বলী ও মহেশখালীর বজল বলীর খেলা দেখার জন্য টিকেট সংগ্রহ করে স্টেডিয়ামে এসেছি। খেলা দেখে খুব মজা পেয়েছি। তবে নুর মোহাম্মদ বলী যদি এককভাবে চ্যাম্পিয়ন হতো, তাহলে আরও বেশি ভালো লাগত।
বিকেল ৪ টা, শুরুতেই লড়াইয়ে নামে কুমিল্লার বাঘা শরিফ ও মহেশখালীর শফি বলী। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে বাঘা শরিফের কাছে পরাস্ত শফি। আর ১০ মিনিট লড়াইয়ের পর মহেশখালীর বজলকে কুপোকাত করেন উখিয়ার নুর মোহাম্মদ বলী।
বিকেল ৫ টায় ফাইনালে উখিয়ার নুর মোহাম্মদ বলীর প্রতিপক্ষ কুমিল্লার বাঘা শরিফ বলী। দু’জনের মধ্যে এক মিনিট, দু’মিনিট করে লড়াই চলে টানা ৪০ মিনিট। কিন্তু কেউ কাউকে হার মানাতে পারেনি। অবশেষে উখিয়ার নুর মোহাম্মদ ও কুমিল্লা বাঘা শরিফকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। তবে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণায় হতাশ দু’জনই। যৌথ চ্যাম্পিয়নের জন্য একে অপরকে দুষছেন তারা।
কুমিল্লার বাঘা শরিফ বলী বলেন, নুর মোহাম্মদ বলী অনেক বাজে খেলেছে। সেই যদি ভালোভাবে বলী খেলতে তাহলে আমি চ্যাম্পিয়ন হতাম।
আর উখিয়ার নুর মোহাম্মদ বলী বলেন, বাঘা শরিফ বলী খেলতে জানে না। সেই আমাকে মাথায় বুকে ও পায়ে প্রচণ্ড আঘাত করেছে। এটা তো পায়ে আঘাত করার খেলা না। সে যদি বলী খেলা জানতো তাহলে আমার কাছে হেরে যেত।
এদিকে বলী খেলায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান, পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মানবসম্পদ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপ্তি চাকমা, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে ডিসি সাহেবের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ জসীম উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা, পৌর নির্বাচনসহ নানা কারণে এবার বলী খেলার আয়োজনটা একটু জমজমাট কম হয়েছে। তবে আগামীবার পুরো জেলা জুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহি খেলাটি আরও বড় পরিসরে আয়োজন করা হবে।
১৯৫৬ সাল থেকে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ঐহিত্যবাহি ডিসি সাহেবের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা। এবার আসরে অংশ নেন প্রায় ৩ শতাধিক বলী।
Leave a Reply