গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে এলাকার আধিপত্য, জমি নিয়ে বিরোধ ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একের পর এক দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে। অশান্ত হয়ে উঠেছে কাশিয়ানী উপজেলা। গেল সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানায় ১১টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি ছাড়া এসব এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার। মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামী করায় পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ‘নিরপরাধ’ লোকজনও। ভয়ে বাড়ি ছাড়া চলতি এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীরা। জমির পাকা ধান কাটতে পারছে না কৃষকরা। এতে খেতের ধান খেতেই নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে সমাধানের আশ^াস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান।
গত ২২ এপ্রিল ঈদের নামাজ শেষে উপজেলার পুইশুর গ্রামে মোল্যা ও শিকদার বংশের লোকজনের মধ্যে পূর্বশত্রুতার জের ধরে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজন ঢাল, সড়কি, রামদা ও টেঁটাসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে নারী ও এসএসসি পরীক্ষাসহ উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় কাশিয়ানী থানায় উভয়পক্ষের দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
গত ২৪ এপ্রিল উপজেলার ঘোষকান্দিতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।
২৫ এপ্রিল সকাল ১০ টায় উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে জমির সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামরুল হাসান তুহিন ও সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম কালুর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে উভয়পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন। এ সময় পাশর্^বর্তী শিবপুর গ্রামে কয়েকটি বসতবাড়িতে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যাওয়া পুলিশের কাজে বাঁধা দেওয়ায় কাশিয়ানী থানার এসআই কামরুজ্জামান খান বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩৫-৪০ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও উভয়পক্ষের দুটি মামলা থানায় দায়ের হয়েছে।
২৬ এপ্রিল সকালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল ইউনিয়নের চরভাটপাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ৭ মাসের অন্তসত্ত¡া নারীসহ একই পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক। এ ঘটনার তিনদিন পর কাশিয়ানী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
একই দিন সকাল ৯ টায় উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের বাহিরপাড়া গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী জাহাঙ্গীর আলম ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুবুর আলম সেলিমের সমর্থকদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন এবং কয়েকটি বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় কাশিয়ানী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
২৭ এপ্রিল উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের সাতাশিয়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে জড়ালে তিনজন আহন হন। তারা কাশিয়ানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলার রাতইল ইউনিয়নের চরজাজিরা এলাকায় নৌকা-জাল নিয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এ সময় একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় কাশিয়ানী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
সর্বশেষ একই দিন দিবাগত রাতে উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের ছোট বাহিরবাগ গ্রামের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র শরীফ সোহরাফ হোসেন ও কওছার শরীফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
এ সময় কওছার শরীফের সমর্থকদের প্রায় ১০টি বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের থেকে থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
রোববার সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল মাঠজুড়ে পাকা ধান পড়ে আছে। গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রাম পুরুষশূন্য। ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পাকা ধান ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ আলম বলেন, ‘ঈদ পরবর্তীতে তুচ্ছ কিছু ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অধিকাংশ মামলা হয়েছে। আমরা ১৯ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছি। বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ছোট বাহিরবাগ গ্রামে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
Leave a Reply