*রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও ব্যাপক প্রস্তুতি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানতে পারে আগামী রোববার ভোর থেকে দুপুরের মধ্যে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার, মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ হয়ে মিয়ানমারে আঘাত হানতে পারে। তাই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কক্সবাজার, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ দুশ্চিন্তায় আছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান বলেন, বর্তমান আবহাওয়ার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে অনুমান করা যায় আগামী রোববার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানবে। সেক্ষেত্রে এনালাইসিস করে দেখা গেছে, এবারের ঘূর্ণিঝড় কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলবর্তী এলাকা দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই জন্য আমাদের প্রয়োজন সর্বাত্মক জনসচেনতা বোধ, সঠিক আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত যাতে মানুষের মনে বিভ্রান্তি বা ভয়-ভীতির উদ্বেগ যাতে না হয়। সঠিক তথ্য পেয়ে আমরা যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।
মো. আবদুর রহমান আরও বলেন, বিশেষ করে উপকূলবাসি আগামী শনিবার (১৩ মে) দুপুর থেকে ১৪ ও ১৫ মে পর্যন্ত সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে থাকা উচিত। এরই মধ্যে প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তাই সংকেত বাড়লে প্রশাসনের নির্দেশ পেলে দ্রুত যাতে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। উপকূলবাসি সতর্ক হলেই এই দুর্যোগে কোন ধরণের প্রাণহানি হবে না।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তীব্র দাবদাহ:
কয়েক দিনের মতো বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকাল থেকে কক্সবাজারে তীব্র দাবদাহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সমুদ্রসৈকত এলাকায় এই চিত্র দেখা গেছে। তবে মাঝেমধ্যে উত্তর দিক থেকে দমকা হাওয়া ছুটলেও দিনের বেশির ভাগ সময় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে নেমে দেখা যায়, সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চাইতে এক থেকে দেড় ফুট বৃদ্ধি পেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অন্যান্য দিনের মতোই সমুদ্রের পানিতে নেমে গোসল করতে দেখা গেছে।
সী সেফ লাইফ সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরিস্থিতি আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। তবে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে পানির পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। ঢেউগুলো এলোমোলাভাবে আসছে। ঢেউয়ের উচ্চতা কিছুটা বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে ৫ হাজারের বেশি পর্যটক সৈকতে গোসল করছেন।
মোহাম্মদ শুক্কুর আরও বলেন, পর্যটকদের হাটু পানির নিচে নামতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা পর্যটকদের গতিবিধি নজরে রাখছি। একটু হাটু পানির নিচে নামলেই সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে উঠিয়ে দিচ্ছি এবং সচেতন করছি।
প্রস্তুত ৫৭৬ আশ্রয়কেন্দ্র ও ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক:
সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলাতে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। উপকূল ও দূর্গত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৫ লাখ ১০ হাজারের মতো। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু কক্সবাজারের দিকে আঘাত হানার কথা বলা হচ্ছে, সেহেতু প্রস্তুতিও আগেভাগে নিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন দুর্গত এলাকার লোকজনকে সরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক যানবাহন ও সরঞ্জাম সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।’
মো. আবু সুফিয়ান আরও বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৪৯০ মেট্রিক টন চাল, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি) ৮ হাজার ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোভার স্কাউট সদস্য, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও অন্তত দেড় হাজার সদস্যকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতায় নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের রেসকিউ টিম, রেসকিউ বোট, মেডিকেল টিম ও কমান্ডো প্রস্তুত রাখা হবে। আশা করি, সবার সহযোগিতা এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও ব্যাপক প্রস্তুতি:
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকালে প্রস্তুতি সভা করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। এই সভায় আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও সংস্থা, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীসহ ক্যাম্প সংশ্লিস্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় কিভাবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে হবে এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী কি কি করতে হবে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
এব্যাপারে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন। এরই মধ্যে প্রস্তুতি সভাও করা হয়েছে। কারণ ঘূর্ণিঝড়ে ঝড়-বৃষ্টি কিংবা বাতাস হলেই বসতিগুলো বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তবে সব বিষয় মাথায় রেখে ক্যাম্পের হাসপাতাল, লার্নিং সেন্টার, ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়, এনজিও সংস্থার কার্যালয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্রে ঘোষণা করে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হবে। এরই মধ্যে ৩ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্টসহ দাতা সংস্থাগুলো স্বেচ্ছাসেবক দুর্যোগ মুহুর্তে কাজ কবরে। আশা করি, সকলের সহযোগিতায় এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা সম্ভব হবে। আর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি হলে তার জন্য ব্যবস্হা গ্রহনের প্রস্তুুতি রয়েছে।
Leave a Reply