1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. admin@dailyamarsomoy.com : admin :
ওয়াসার ডিএসটিপি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মমতাজুর রহমানের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ - দৈনিক আমার সময়

ওয়াসার ডিএসটিপি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মমতাজুর রহমানের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ

নাজমুল সাগরঃ
    প্রকাশিত : বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ডিএসটিপি) প্রকল্পে নির্বাহী প্রকৌশলী মমতাজুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ক্রয়, জমি অধিগ্রহণে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো এবং প্রকল্পের নেটওয়ার্ক সংযোগ না করায় প্রকৃত সুফল না পাওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও উক্ত প্রকল্পটি অকার্যকর উন্নয়নের পিছনেও তিনি অন্যতম প্রধান ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

২০১৫ সালে অনুমোদিত প্রকল্পটির প্রাথমিক বাজেট ছিল ৩,৩১৭ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে বাড়িয়ে ৩,৭১২ কোটি টাকা করা হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল গুলশান, বনানী, তেজগাঁও, মগবাজার, বাড্ডা, ধানমন্ডি ও হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকার পয়োবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদে নিষ্কাশন করা। যেখানে বিশেষজ্ঞরা দাবী করেছিলেন, উক্ত প্ল্যান্টে উৎপাদিত স্ল্যাগ বা মল দিয়ে বায়োগ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেই বিদ্যুৎ দিয়ে প্ল্যান্ট চালানো হলে উক্ত প্ল্যান্টে সরকারী ব্যয় শুধু সংকোচন নয় বরং ধীরেধীরে প্ল্যান্ট পরিচালনার ব্যয় জিরোতে নামানো সম্ভব ছিল। কিন্তু প্ল্যান্ট উন্নয়ন ও পরিচালনা ব্যয় এর জন্য সরকারী বাজেট বা খরচ নিয়ে অর্থ লুটপাটের ধারনায় সেটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বরং উক্ত প্ল্যান্ট পরিচালনার নামে আগে যেমন হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি হয়েছে এখনও পরিচালনার নামে বছরে শতশত কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। সবচেয়ে ধোঁকাবাজি করা হচ্ছে যে প্রকল্পের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও উক্ত প্ল্যান্টে সংযুক্ত না হওয়ায় বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্য শোধনাগারে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, ফলে প্রকল্পটি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

 

উক্ত প্রকল্পটি রাজধানীর প্রায় অর্ধেক সুয়েজ লাইনের বর্জ্য শোধন করার কথা থাকলেও প্ল্যান্টের সঞ্চালন লাইন বা নেটওয়ার্ক লাইন না দিয়ে বিগত কয়েক বছর পরীক্ষামূলক প্ল্যান্ট পরিচালনার নামে শুধু মাত্র হাতিরঝিলের পানি শোধন করেই বছরে প্রায় ৫১২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। প্ল্যান্টের যথাযোগ্য ও কার্যকর উন্নয়ন দেখাতে পারেনি বরং সরকারী টাকার পিন্ডদান হয়েছে। বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্য শোধন তো হয় নি বরং প্ল্যান্টের উদ্দেশ্য এখনও বাস্তবায়িত হচ্ছে না শুধু মমতাজুর রহমানের দূর্নীতির সম্রাজ্যে গড়ে তোলার কারণে। এতে ঢাকা ওয়াসা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাছাড়া, সঞ্চালন লাইন (নেটওয়ার্ক) না থাকায় পরিশোধিত পানি বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে, যা পরিবেশ দূষণ রোধের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ। পাশাপাশি প্ল্যান্ট পরিচালনার নামে বছরে শতকোটি টাকা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

 

উক্ত ডিএসটিপির প্রকল্প প্রকৌশলী হিসেবে প্ল্যান্টের শুরু থেকে মমতাজুর রহমানকে বিশেষ ক্ষমতাবলে আওয়ামীলীগের একনিষ্ঠ ও ঘনিষ্ঠজন হিসেবেই ১০জন সিরিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। যা ছিল সেইসময়ে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত এবং সেই থেকে ডিএসটিপি প্রকল্প দরবেশ বাবা হিসেবে বিগত আওয়ামীশাসনামলে তিনি দাঁপিয়ে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে প্ল্যান্টটি পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যেমন সুবিধা দিয়েছেন, তেমনি নিজেও স্বজনদের নামে করেছেন প্রচুর ধন সম্পদসহ বাড়ী গাড়ী থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ। ৫ আগস্টের পরে বিদায় নেয়া ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম এ খান, সাবেক প্রকল্প পরিচালক মহসিন আলী মিয়া, একজন ডিএমডির অনুগত হিসেবে প্রকল্প প্রকৌশলী হিসেবে মমতাজুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। আর হাইড্রো চায়না কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দেয়ায় ডিএসটিপির প্রকল্প পরিচালক মহসিন আলী মিয়াকে হাইড্রো চায়নার কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ডিএসটিপির মেইনটেনেন্স ও বিদেশীদের নিয়োগের নামে বছরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা লোপাট করা হয় যা এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই করা হয়।

 

অভিযোগ রয়েছে, উক্ত প্ল্যান্টে তার অনিয়ম দূর্নীতির সম্রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কামাল উদ্দিনকে উপ সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ডিএসটিপিতে বদলি করে নিয়ে এনে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন। তিনি নিজের শিক্ষা জীবনের বন্ধু ইমাম হোসেন আকন্দকেও উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে উক্ত প্রকল্পে নিয়ে আসেন এবং অনিয়ম কর্মকান্ডগুলোতে সহযোগীতা করার লক্ষ্যে। বিশেষ উদ্দেশ্যে ও ক্ষমতাবলে প্ল্যান্টের ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিষয়ে সার্টিফাইড নয় এমন লোকও নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এমন কোন অনিয়ম নাই যে তিনি উক্ত প্রকল্পটিতে তিনি করেননি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকল্পের যন্ত্রপাতি মেরামত করার জন্য অনেক অভিজ্ঞ প্রকৌশলী থাকা সত্বেও অর্থ আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে যন্ত্রপাতি নষ্ট হলেই নতুন ক্রয় করা হয়। এছাড়াও, দূর্নীতির খবর ফাঁস না হওয়ার জন্য উক্ত প্রকল্পে সাংবাদিক প্রবেশে কঠিন নিয়ম তৈরি করা হয়। আর উক্ত প্রকল্পে প্রবেশে কড়াকড়ি নিয়ম এবং সেটি লোকালয় থেকে একটু দূরে হওয়ার কারনেও অনেক দূর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়না। অনুসন্ধানে উঠে আসে, উক্ত প্ল্যান্টের জন্য ৫,০০০ টাকার ব্যাগ ফিল্টার ক্রয় দেখানো হয়েছে ২২,০০০ টাকায়। নবাবপুর ও ধোলাইখাল থেকে খালি চালানে ভুয়া বিল তৈরি করে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে যা অডিট ও মালামাল ক্রয়মূল্য ক্রসচেক করলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবী। এছাড়াও অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতা ও অযোগ্যতা তদন্ত করা প্রয়োজন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তার পছন্দের  ঠিকাদারদেরকে টেন্ডার পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে পক্ষে বিপক্ষে এখন সরগরম ডিএসটিপি প্রকল্প। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে দূর্নীতির আঁতুড়ঘর খ্যাত ওয়াসার ডিএসটিপি প্রকল্পটিকে অবৈধ অর্থের ও ক্ষমতার জোরে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রেখেছিল মমতাজুর রহমান।

 

সরকারি সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে মমতাজুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রকল্প থেকে বরাদ্দকৃত ঢাকা মেট্রো-ঘ-৬৮৫৯ গাড়িটি তার পরিবারের ব্যবহারাধীন, এবং অফিসের কাজের জন্য বরাদ্দকৃত ঢাকা মেট্রো-ঠ-৭৯০০ গাড়িটিও তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। মোহাম্মদপুরের স্বপ্নধারায় বিলাসবহুল  মমতাজুর রহমান তার ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ডিএসটিপির এক কর্মচারীকে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান স্বপ্নধারাতে নিয়োজিত রেখেছেন। তার বেতন ও যাতায়তসহ সবধরনের ব্যয় সরকারীভাবেই দেয়া হয়।

 

এছাড়াও, তিনি ওয়াসার এক ডিএমডির সঙ্গে মিলে তাদের নিজস্ব বা অর্থায়নে দাশেরকান্দি সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সম্পর্কিত মালামাল ও যন্ত্রাংশের কোম্পানি দিয়ে সেই কোম্পানি থেকেই মালামাল সরবরাহ করেছেন বলে তথ্য মিলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানিয়েছেন, উনি যেসব দূর্নীতি করেছেন তার প্রমাণ সব লোপাট করতে পারেনি প্রায় অনেক কিছু এখনও দৃশ্যমান রয়েছে যদি কাগজপত্র অডিট করা হয় সব অনিয়মের প্রমান মূহুর্তেই পাওয়া যাবে। যেসমস্ত মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে তা প্রকল্প প্রকৌশলী মমতাজুর রহমানকে অব্যহতি দিয়ে তদন্ত করলে তিনি যে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা শুধু মাত্র মমতাজুর রহমান জড়িত তাই প্রমানিত হবে। দৈনিক আমার সময়ের অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, মোহাম্মদপুরের স্বপ্নধারা আবাসিকে তার প্রায় ৩,০০০ বর্গফুটের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টসহ সাভারের আমিন বাজারে একাধিক প্লটের মালিক হয়েছেন। এছাড়া, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আরও জমি ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।

 

পরিবেশবাদী এক পদস্থ কর্মকর্তার দাবী, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পটি কেন রাজধানীর উপকারে আসলনা, এই প্রকল্পকে কারা ব্যর্থ করে দিল, এবং এই প্রকল্প নিয়ে কারা বেশি দুর্নীতি করেছে; সেই সম্পর্কে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে প্রকল্প প্রকৌশলী হিসেবে মমতাজুর রহমানের বিরুদ্ধে গভীর তদন্ত প্রয়োজন, যাতে জনগণের করের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং রাজধানীর পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধিত হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রকল্পে জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও সমান গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত পরিচালনা করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com