1. : admin :
সাভারের এসআই সুব্রত দাসের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ!  - দৈনিক আমার সময়

সাভারের এসআই সুব্রত দাসের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ! 

মোঃ শাহীনুর ইসলাম ধ্রুব নয়ন
    প্রকাশিত : শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩
সাভার মডেল থানার এসআই সুব্রত দাসের (বিপি নং- ৮৮১৪১৬৭৭৭৬) বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এবং অনৈতিক উপায়ে লাভবান হয়ে আইনের তোয়াক্কা না করেই চারজন আসামী ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন নির্যাতিত-ক্ষতিগ্রস্থ এক ব্যবসায়ী। গত ২৪ মে (বুধবার) বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের আইজিপি’স কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে আইজিপি বরাবর জমা দেয়া অভিযোগপত্রের সিরিয়াল নং-৩৫২ এবং একই দিনে বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর দেওয়া অভিযোগপত্র রাশেদ স্বাক্ষরিত অফিসার  গ্রহণ করেন।
উক্ত অভিযোগপত্রগুলোর সূত্র ধরে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করা হয় সেই ব্যবসায়ীর সঙ্গে। জানা যায়, তিনি ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানাধীন বনগ্রাম-কাউন্দিয়া সাকিনে এএবি নামক ব্রিকসের (ইটখোলা) মালিক মোঃ মইনুল ইসলাম।  তিনি রাজধানী ঢাকার মিরপুরের দারুস-সালাম থানার গাবতলী ১ম কলোনির সি ব্লকের ১১২/বি নং বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা এবং মৃত ডাক্তার আব্দুস সাত্তারের ছেলে। সেই ব্যবসায়ীর জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ৭৭৫৩৭৪০৬৮২।
অভিযোগপত্রের সত্যতা স্বীকার করে অভিযোগকারী মোঃ মইনুল ইসলাম দৈনিক আমার সময়-কে বলেন, এএবি ব্রিকসের (ইটখোলা) আমি মালিক।  গাংচিল বাহিনীর সক্রিয় সদস্য এবং অত্র এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাভারের আমিন বাজারের মোঃ সবুর দেওয়ানের ছেলে মোঃ অনিক দেওয়ান(৩০),  হাবিবুর রহমান টিটুর ছেলে মোঃ শাওন দেওয়ান(২৭), মোঃ এখলাস(৪০), ধোবড়াই আমিন বাজারের আওয়াল ড্রাইভারের ছেলে টিটু(২৫), বনগ্রামের হেলাল উদ্দীনের ছেলে বেলায়েত উল্লাহ ওরফে বেনু ডাকাত(৫৭) এবং আব্দুল আজিজের ছেলে মুন্না ডাকাত(২৮) ও জাহিদ ডাকাতরা(২৬) আমার এএবি ব্রিকস অর্থাৎ ইটখোলা থেকে ইট চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে চলতি মাসের গত ২০ মে সকাল আনুমানিক দশটার দিকে ইটভাটা দেখতে যাই। তাদের কাউকে দেখতে না পেয়ে আনুমানিক বেলা এগারোটার দিকে মোঃ মইনুল ইসলাম সহ তার এএবি ব্রিকসের ম্যানেজার মোঃ নাজিমউদ্দীন (৩৭), ট্রাকচালক মোঃ দিদার(২৭) ও আব্দুর রাজ্জাক(৩০) নৌকাযোগে কাউন্দিয়া সাকিনের ইটভাটা থেকে মিরপুরের বাসার উদ্দেশ্যে ফেরার পথে আনুমানিক বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে সাভার মডেল থানার কাউন্দিয়া ইউনিয়নের পাঁচকানিয়া খেয়াঘাটে পৌঁছামাত্র উপরে উল্লেখিত সাতজন সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জন সন্ত্রাস, ডাকাতরা নৌকা যোগে দেশীয় মারাত্মক অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনি জনতাবদ্ধে ব্যবসায়ী মোঃ মইনুল ইসলামের নৌকার গতিরোধ করে এবং অতর্কিত হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই শাওন রামদা দিয়ে মইনুলকে মাথায় কোপ দিলে তিনি ডান হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলে সেই কোপের আঘাতে মইনুলের মধ্যমা আঙ্গুল থেকে ডান হাতের তালু পর্যন্ত মারাত্মক জখম হয়। গাংচিল বাহিনীর সক্রিয় সদস্য অনিক দেওয়ান লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে, এখলাস তার হাতে থাকা দা দিয়ে কাঁধের বাম পাশে আঘাত করলে ইট ভাটার মালিক ব্যবসায়ী মইনুল পড়ে যান। এসময়, বেনু ডাকাত লোহার রড দিয়ে মইনুলের বাঁ পায়ে পিটাইতে থাকে। টিটু, মুন্না ডাকাত চাকু দিয়ে পিঠে টান দেয়, জাহিদ ডাকাত সহ অন্যান্য অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে একপর্যায়ে গুম করার উদ্দেশ্য নৌকা থেকে তাদের নিজেদের নৌকায় জোরপূর্বক তুলে নেয়ার চেষ্টা চালায় যার ভিডিওচিত্র ইতিমধ্যে সাধারণ জনগন নদীর পাড় থেকে তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ম্যানেজার নাজিম হোসেন ও ট্রাকচালকরা ব্যবসায়ী মইনুলকে উদ্ধার করতে গেলে তাদের উপরেও হামলা চালানো হয় বলে জানান তিনি।
এসময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে অনিক, শাওন, এখলাস সহ আরও অজ্ঞাত চারজন সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করলে তাদের হ্যান্ডকাফ পড়ায় পুলিশ। কিন্তু, সাভার মডেল থানার কাউন্দিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সুব্রত দাস ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারী চারজনের হ্যান্ডকাফ খুলে দিয়ে তাদের ছেড়ে দেন। এসময়, তাদের হামলায় মারাত্মক আহত ব্যবসায়ী মইনুলকে চিকিৎসা না দিয়েই ঘন্টার পর ঘন্টা কাউন্দিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী এই ব্যবসায়ী। মূর্মূর্ষ অবস্থায় আহত মইনুলকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়েই গাংচিল বাহিনীর ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের নিকট থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে তাদের পক্ষে এস আই সুব্রত দাস স্পষ্ট পক্ষ নিয়ে মিমাংসার চেষ্টা চালান বলে অভিযোগ করেন মইনুল।
এমন সময়, হামলার ঘটনা ও হামলাকারিদের ছেড়ে দেবার তথ্য পেয়ে  দৈনিক অগ্নিশিখার স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক বাহাউদ্দীন তালুকদার ঘটনাস্থলে পৌঁছালে এসআই সুব্রত দাস সেই সাংবাদিকের সাথে অপেশাদার আচরণ করে চরম দুর্ব্যবহার এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি-ধমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বাধ্য করারও অভিযোগ উঠে এসআই সুব্রত দাসের বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে আহত মইনুল বাধ্য হয়ে কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নিলে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ব্যবসায়ী মইনুল ইসলামের হাতে একহাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত সুচিকিৎসার জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ঘটনার দুদিন পর একটু সুস্থ্য হয়ে তিনি সাভার মডেল থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা অভিযোগ গ্রহণ না করে উল্টো এসব বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে চুপচাপ বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে সুস্থ্য হওয়ার পরামর্শ দেন এবং আর কোনদিন যেন থানায় না যায় কিংবা তাকে ফোন না দেয় এবং বেশি বাড়াবাড়ি করলে সমস্যা হবে বলেও সেই ব্যবসায়ীকে হুমকি দেন ওসি দীপক চন্দ্র সাহা এমন অভিযোগও করেন ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম।
এদিকে, মইনুলের মিরপুরের বাসার চারপাশ জুড়ে সেই সন্ত্রাসী, গাংচিল বাহিনীর ডাকাত সদস্যরা রেকি করছে এবং প্রশাসন থেকেও চাপ অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী মইনুল। সে ও তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এমন দাবি করে তিনি বলেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থে ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সুনাম রক্ষার্থে পুলিশের ছত্রছয়ায়  গাংচিল বাহিনীর ডাকাতি, চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য দাবি জানান। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের এবং এসআই সুব্রত দাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকটও আবেদন করেন।
ব্যবসায়ী মইনুল ইসলামের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাভার মডেল থানার কাউন্দিয়া ইউনিয়নে অনুসন্ধানে নামে জাতীয় দৈনিক আমার সময়’র অনুসন্ধানী টিম। এসআই সুব্রত দাসের আটক বাণিজ্যে, আদালতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে জমি দখল দেয়া, লাশ আটকিয়ে ঘুষ আদায়, পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে অর্থ আদায় সহ ভয়ঙ্কর সব অপকর্মের তথ্যচিত্র উঠে এসেছে আমাদের অনুসন্ধনে। এসআই সুব্রত দাসের নিজস্ব সোর্স টিপুকে দিয়ে কাউন্দিয়ায় গড়ে তুলেছে টেকনাফের ওসি প্রদীপের মতো এক অপরাধের স্বর্গরাজ্যে। সে সব রোমহর্ষক ঘটনার বিস্তারিত তথ্য থাকছে আগামী পর্বে।  এছাড়াও, ইতিপূর্বে এসআই সুব্রত দাসের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়েছিলো। এসআই সুব্রত দাসের কাউন্দিয়ার অপরাধ সাম্রাজ্যের সে সব তথ্য জানতে চোখ রাখুন জাতীয় দৈনিক আমার সময়-এর পত্রিকার পাতায়।
সাভার মডেল থানার কাউন্দিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সুব্রত দাসের বিরুদ্ধে উঠা এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করে দৈনিক আমার সময়-কে বলেন, সাংবাদিক লাঞ্ছিত কিংবা আসামী ছেড়ে দেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। ঐ সাংবাদিকের সাথে সাংবাদিক-পুলিশের বাইরেও আমার একটা সুসম্পর্ক রয়েছে।
হামলার ঘটনায় মামলা না নেয়া এবং ভূক্তভোগী ব্যবসায়ীকে  উল্টো হুমকি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা দৈনিক আমার সময়-কে বলেন, আসামী ছেড়ে দেয়ার এরকম কোন বিষয় জানা নেই। এরকম কোন ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যবসায়ী মোঃ মইনুল ইসলামের মামলা না নেয়া এবং হুমকি-ধমকির বিষয়ে তিনি বলেন, মইনুলের অভিযোগ নেয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে। আসামিদের নামের শেষে আপত্তিকর শব্দ সংশোধন করে বাদী মইনুলকে  অভিযোগপত্র জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
(চলবে)

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com