মাদক বর্তমানে দেশ ও প্রজন্মের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটি এখনো রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা অনুধাবন করতে পারে নি। মাদকবিরোধী এত অভিযান হলো, গণসচেতনতায় এত অর্থ খরচ হলো, কথিত বন্দুকযুদ্ধে এত মানুষ মারা গেল, তারপরও মাদকের ভয়াবহতা কমানো গেল না। মাদক-সংশ্লিষ্ট অর্থ পাঁচারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর পাঁচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। সম্প্রতি আঙ্কটাডের (ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ওয়েবসাইটে অবৈধ অর্থপ্রবাহসংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নয়টি দেশের মাদক-সংশ্লিষ্ট অবৈধ অর্থপ্রবাহের অনুমানভিত্তিক হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। অন্য আটটি দেশ হলো আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, মিয়ানমার, নেপাল ও পেরু। আমাদের দেশে নানা উন্নতির পাশাপাশি মাদকের রমরমা বাণিজ্য চলছে। আর এ মাদক পাঁচার ও কারবারের সঙ্গে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটা যোগসূত্র রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়েই মূলত বাংলাদেশে মাদক আসে। অতীতে ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ফেনসিডিল আসত। সাম্প্রতিককালে আসছে ইয়াবা ও আইস। মাদক সমস্যা কমবেশি আগেও ছিল। তবে ২০১৭ সালে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে এখানে আসার পর সেটি আরও প্রকট হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলো মাদক ব্যবসার বড় বড় আস্তানায় পরিণত হয়েছে। এসব মাদক কারবারির মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের নামও আছে। সেখানে মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। মাদকের টাকায় গাড়ি-বাড়িও করেছেন কেউ কেউ। রাজনৈতিকভাবে তাঁদের মধ্যে যত দ্বন্দ্বই থাকুক না কেন, মাদক ব্যবসাটি চলছে মিলেমিশেই। আন্তর্জাতিক মাদক পাঁচারকারীরা বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবেও ব্যবহার করছে এবং শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। তবে মাদক যে দেশ ও প্রজন্মের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই রাষ্ট্রের কর্ণধারদের অনুধাবনের পাশাপাশি দেশের ভেতরে মাদকের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কক্সবাজার এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে, জনজীবনে অভিঘাত তৈরি করছে, তাই রহিঙ্গাদের প্রতি সরকারের নজরদাঁড়ি বারানো উচিত এবং এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। কেননা এখনই যদি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সজাগ না হয়, তাহলে আরও ভয়াবহ পরিণতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে পারে।
Leave a Reply