যৌতুকের টাকা না পেয়ে ছেলেসহ ৪-৫ জন মিলে নিজের স্ত্রীকে এসিড দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সাইফুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে।
নাজমা খাতুন এর প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর পুত্র সন্তানসহ বাবার বাড়িতেই থাকতেন। দুশ্চরিত্রের অধিকারী সাইফুল ইসলাম ও নাজমা খাতুনের বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে।স্বামী মারা যাওয়াই বাবার বাড়িতে থাকার কারণে পাশাপাশি গ্রামের ছেলে সাইফুল ইসলাম এর সাথে যেকোনোভাবে পরিচিত হয়। স্বামী নাই এই অসহায়ত্বের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কথাবার্তার একপর্যায়ে সাইফুল ইসলাম নাজমা খাতুন কে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখান। স্বামী হারা অসহায় নারী এক পর্যায়ে সাইফুল ইসলামের ফাঁদে পা দেন এবং ২০১২ সালের দিকে তাদের বিয়ে হয়। সাইফুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী বিষয়টা মেনে না নেওয়ার ফলে প্রথম স্ত্রী ছেড়ে দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা খাতুন এর বাড়িতেই আশ্রয় নেন সাইফুল ইসলাম । সাইফুলের শশুর কাঁচু মিয়া (৫৪) মেয়ে নাজমার সুখের জন্য তার বাড়ির পাশে একটু জমি দেন ঘর করে থাকার জন্য। এভাবে তাদের সংসার চলতে থাকে এবং নাজমার গর্ভে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। নাম মোছাঃসুরাইয়া আক্তার বন্যা ১০ বছর। অপরদিকে সাইফুলের প্রথম ঘরের ছেলে রাব্বি বড় হতে থাকে। স্ত্রী নাজমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পরেও যখন কাজ হয় নাই, তখনই সাইফুল মিয়া কৌশল খাটিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন। নাজমা খাতুন ও তার পিতা কাঁচুমিয়া ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর হতেই সাইফুল ইসলাম নাজমা খাতুন এর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। নাজমা খাতুনের উপর শারীরিক নির্যাতনের বিষয়কে কেন্দ্র গত ২৪/১১/২০২৩ ইং সহ কয়েকবার গ্রাম্য সালিশ পর্যন্ত বসেছে, কিন্তু নির্যাতনের সমাধান হয়নি।
দিনাজপুরের কাহারোল থানার সুলতানপুর গ্রামের ঘটনা। গত ২৯/০৯/ ২০২৩ ইং আনুমানিক সন্ধ্যা সাতটা বাজে। নাজমা খাতুন (৪১) টর্চলাইট হাতে নিয়ে বাড়ির পাশের বাজারে ঔষধ আনতে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে অন্ধকার হওয়ার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তার বর্তমান স্বামী সাইফুল ইসলাম (৪৫) পিতাঃ মৃত সাফির উদ্দিন, সতীনের ছেলে রাব্বি (২০)পিতাঃ সাইফুল ইসলাম, মোঃ মশিউর রহমান মিলন (৪০), মোঃ মামুন(৪৫) উভয়ের পিতা মোঃ মাসুদুর রহমান, সাং রায়পুর (৬ নং রামচন্দ্রপুর ইউ,প ২ নং ওয়ার্ড) থানা কাহারোল, জেলা দিনাজপুর। স্বামী সাইফুল ইসলামও সতীনের ছেলে রাব্বিসহ এই চারজন ওত পেতে থাকে রাস্তার পাশে। যখনই নাজমা খাতুন তাদের সামনে দিয়ে বাজারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে তখনই ওত পেতে থাকা চারজন অতর্কিত নাজমা খাতুন এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাথাড়ি আঘাতের এক পর্যায়ে সে দুর্বল হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন সাইফুল ইসলাম এর কথামতো তার বড় ছেলে রাব্বির হাতে থাকা কাঁচের বোতল ভরা এসিড নাজমার মুখে ছুড়ে মারতে বলেন।কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? রাব্বির ছোড়া এসিড নাজমার শরীরের ডান পাশে পড়ে।এতে নাজমার ডান পাশের স্তন ও ডান হাত সহ শরীরের একপাশ পুড়ে যাই। এসিড নিক্ষেপে অসহ্য যন্ত্রনায় নাজমা খাতুন চিল্লাচিল্লির এক পর্যায়ে পাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক কাহারোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।কিন্তু সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান রোগীর অবস্থা ভালো না, আপনারা তাকে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তাই চিকিৎসকদের কথামতো এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরও নাজমার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দায়িত্বরত চিকিৎসকগন তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। বর্তমানে নাজমা খাতুন ঢাকা মেডিকেল পুরাতন বার্ন এর পঞ্চম তলার ১০ নম্বর সিটে আছেন।
নাজমার শরীরে এসিড নিক্ষেপের সত্যতা জানতে কাহারোল থানার ওসি ফারুক উল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ঐ প্রতিবেদককে জানায়, ভিকটিমদ্বয় থানাতে মামলা করতে আসলে বিষয়টা আমরা জানতে পারি।
এসিড নিক্ষেপের বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান মিজানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমরা ঘটনাস্থলে এসিড মারার কোন আলামত পায় নাই।
নাজমার শরীরে এসিড নিক্ষেপের বিষয়ে পিবিআই তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফরহাদ রেজা বলেন, আমরা এসিড নিক্ষেপের সত্যতা পেয়েছি এবং নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিকে পাঠিয়েছি।
Leave a Reply