1. : admin :
মা হয়ে সন্তানের কাছে নিজের দেশ নিয়ে আজ আমি লজ্জিত - দৈনিক আমার সময়

মা হয়ে সন্তানের কাছে নিজের দেশ নিয়ে আজ আমি লজ্জিত

আমার সময় ডেস্ক
    প্রকাশিত : শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

রানা বর্তমান
সাহিত্যিক ও নির্মাতা

প্রবাসী কর্মীরা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে রেমিটেন্স প্রবাহের অন্যতম অক্সিজেন। পৃথিবীর প্রায় দেশে এক কোটির বেশি বাংলাদেশের মানুষ কোননাকোন কাজে নিয়োজিত।এই সম্মানিত প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতিকে সচল রাখছেন। অথচ এইসব সম্মানিত রেমিটেন্স যোদ্ধারা নিজ দেশের বিমানবন্দরে এসে প্রতিনিয়ত সীমাহীন দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুধু প্রবাসী নয় বিমানবন্দর থেকে দেশের রফতানি বাণিজ্যের অংশীদার, বিনিয়োগকারি, পর্যটক এবং কূটনীতিকরাও এ বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা ও যাত্রী দুর্ভোগ আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি ও দেশের ভাবমর্যাদার উপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে যা সত্যিই একটি জাতির জন্য লজ্জার। বিদেশ থেকে আসা অতিথিদের কাছে দেশের শিক্ষা, আইন শৃঙ্খলা তথা নৈতিকতার একটি ভয়ঙ্কর দৃশ্য প্রদর্শিত হয় যা দেশের সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। যা লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন অনিয়ম অব্যবস্থাপনা, যাত্রী হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হওয়ার ঘটনা বিশ্বে বিরল। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপণা, শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা ও যাত্রী পরিষেবার মান দেখে দেশের সংস্কৃতি ও সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা অনেকটাই আঁচ করা যায়। আমাদের দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আর এখানের অনেক দিন ধরেই বিশৃঙ্খলা ও যাত্রী হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে। টার্মিনালের একাধিক প্রবেশ দ্বার বন্ধ রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে যাত্রীদের। এ কারণে অনেক যাত্রীর ফ্লাইট মিস করার মত ঘটনাও ঘটে চলেছে বলে জানা যায়। যাত্রীদের জিম্মি করে বিমানবন্দরের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা লাইন বাণিজ্য করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগ বার বার সামাজিক মাধ্যমে ঘুরতেই দেখেছি অথচ কোর সমাধানের পথ আজও হলোনা। অথচ দেশের সরকার দুর্নীতি র উপরে জিরো টলারেন্স দিয়েছিল। আজ আমি আবার এ বিষয় নিয়ে লেখতে বাধ্য হচ্ছি কারন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্নীতির ঘটনা চোখে আটকে গেলো। পোস্ট টি পড়ে চোখের পানি চলে আসলো । আমি হুবহু পোস্ট টি নিন্মে তুলে ধরছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলাখুলি কিছু কথা
মা হয়ে সন্তানের কাছে নিজের দেশ নিয়ে আজ আমি লজ্জিত
আমার দুই মেয়ে ব্রিটিশ নাগরিক। দীর্ঘ ৭ বছর পর তাদের নিয়ে নিজ দেশে মাত্র ১০ দিনের জন‍্য ঘুরতে এসেছিলাম এই চিন্তা করে, আমি যেমন আমার দেশকে ভিষন ভালোবাসি তেমনি আমার মেয়ে দুটা ও আমার দেশকে চিনবে, জানবে,ভালোবাসবে। দেশে নিয়ে যাচ্ছি শুনেই আমার বড় মেয়ে খুব কান্না করেছিলো কেন তাদের নিয়ে যাচ্চি, কি বা আছে,আর কোনদিন যেন জোর করে না নিয়ে যাই। নিজের দেশ এর সৌন্দর্য তুলে ধরতে আমি দেশে নেমেই কোন বিশ্রাম না নিয়ে তাদের নিয়ে ছুটে গেছি কক্সবাজারে, আবার ঢাকায় এসেই পরের দিন ছুটে গেছি শ্রীমঙ্গ এবং সিলেট। এই অল্প কিছুদিনের মাঝেও নিজের দেশের গর্বের দিকগুলা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রচন্ড গরমে মেয়েদের খুব কষ্ট হয়েছে তারপরও তারা আমার সাথে নিউমার্কেট, মিরপুর, বসুন্ধরা, ইষ্কাটন, পল্টন ঘুরেছে, লন্ডনে প্রতিদিন উন্নত ট্রেইন এ তারা চড়ে তাপর ও নিজের দেশের গর্বের মেট্রো রেলে চড়িয়েছি। আমি খুব গর্বিত বোধ করেছি মেয়ে দুটা যখন বলেছে তারা আবার আসতে চায় আমার দেশে। অল্পদিনের মধ‍্যে তাদের মাঝে সেই ভালো লাগার জায়গা আমি তৈরি করতে পেরেছিলাম। কিন্তু নিজ দেশের এয়ারপোর্ট কর্মচারিদের অসৎ আচরনে আমি লজ্জিত হয়ে যাই। আমার সময়, আমার টাকা খরচ সব যেন এক মুহূর্তেই নষ্ট হয়ে যায় যখন আমার মেয়েরা অবাক হয় এয়ারপোর্ট কর্মকর্তাদের হয়রানিমূলক আচরনে। আমি খুব লজ্জিত আজ। মা হিসাবে সন্তানের কাছে নিজের দেশ নিয়ে লজ্জতি। জানিনা আমার এই লিখা আপনার পযর্ন্ত পৌছাবে কিনা। তবে এতোটুকু বলবো আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তারা নিজের দেশকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
কিছু দেশ আমরা ঘুরি কিন্তু বিশ্বের আর কোন দেশে এমন হয়রানিমূলক চেকিং আছে কিনা আমার জানা নাই।
১. আমরা প্রথম যখন এয়ারপোর্ট ঢুকি একটা স্ক‍্যান সহ শরীর চেক করা হয়। যা অন‍্য দেশে হয় না
২. ইমিগ্রেশনের চেক ইন এর পর আবার একটা চেক হয়। এইটা ই সব দেশে হয়।
৩. গেইট খোলা হবার পর যেখানে শুধু বোডিং পাস চেক করার কথা সেখানে কেবিন লাগেজ এর সাথে যাদের একটা আলাদা ব‍্যাগ থাকে তাদের দাড় করানো হয় এবং ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে তাদের ছাড়া হয়। যেটা বিশ্বের আর কোথাও নাই।
৩. গেইট এ ঢোকার পর আবার জুতা ঘরি খুলে স্ক‍্যান এবং শরীর চেক করা হয়। বাইরের দেশে স্ক‍্যানে কিছু ধরা পরলেই আলাদা করে শুধুমাত্র মাত্র সেই ভ্রমনকৃত মানুষের তল্লাশি করা হয়। বাকি সবার না।
৪. জীবনের প্রথম দেখা প্লেনে উঠার আগে আবার টেবিল বসিয়ে প্রতিটা যাত্রীদের ব‍্যাগ খুলে সব ঘাটিয়ে তল্লাসি করতে। তাহলে স্ক‍্যান মেশিনটির কাজ কি ছিলো?
শুধু তাই নয় যেখানে স্ক‍্যান মেশিন কোন জীবন নাশক কিছু ধরা পরেনি সেখানে যাত্রীদের ব‍্যাগ খুলে বলা হচ্ছে এসব জীবন নাষক এবং কিছু মিষ্টি খাবার টাকা দিতে যেহেতু আমরা সখ করে কিনে এনেছি। আমার প্রশ্ন হলো যদি জীবন নাশক জিনিস হয় তাহলে মিষ্টি খাবার টাকা দিলে সেটা কিভাবে জীবন বাচানোর জিনিস হয়ে গেলো? এইসব কর্মকর্তা তো তাহলে টাকা নিয়ে যে কোন দুর্বৃত্তকারী কে ও প্লেনে উঠার সুযোগ করে দিবে। আমরা কিভাবে এই ধরনের এয়ারপোর্ট কর্মচারিদের কাছে নিরাপদ। এমনকি আপনিও কি নিরাপদ? এইসব কর্মচারিদের হয়রানিমূলক আচরন কবে বন্ধ হবে? কবে আমাদের বাইরে থাকা সন্তান দেশে যেতে চাইবে, দেশের জন‍্য কিছু করতে চাইবে? আমি নিজে মিষ্টি খাবার টাকা দিয়ে প্লেনে বসেছি, নিজের চোখে দেখেছি এক ছোট ভাই কে টয়লেট যেয়ে তার কাধের ব‍্যাগ এর জন‍্য টাকা দিচ্ছে।
দেখলাম টয়লেটে লিখা যেন আমরা কোন কর্মকর্তা কে টাকা উপহার না দেই কিন্তু কোথাও লিখা নাই এসব কর্মকর্তা যদি আমাদের থেকে টাকা ছিনতাই করে তখন আমরা কি করবো? বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে নিজ সন্তানের কাছে আজ আমি সত‍্যি খুব লজ্জিত। লন্ডনে আমি সাধারন একটা চাকরি খুব আশা নিয়ে নিজ সন্তাদের কাছে নিজের দেশকে তুলে ধরতে ১০ দিনে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা যা আমার মতো মধ‍্যবিত‍্বের জন‍্য সহজ না। কিন্তু আমার দেশের এয়ারপোর্ট এর এসব অসাধু, অসৎ কর্মচারিদের মিষ্টি খাবার জ‍ন‍্য টাকা ছিনতাইয়ের পদ্ধতি আমার কাছে খুব জঘন‍্য মনে হয়েছে। ছোট দেশ হিসাবে অনেক কিছুই নেই আমাদের যা আমার মেয়েরা মেনেই নিয়েছিলো কিন্তু এয়ারপোর্ট এর কর্মচারিদের এইধরনের মিষ্টি খাওয়ার টাকা ছিনতাই পদ্ধতিতে আমার সন্তান আতঙ্কিত। আমরা কি তাহলে নিজ দেশে যাবার স্বপ্ন দেখবো না? আমরা কি নিজের সন্তানের কাছে এইসব ই তুলে ধরে দেশকে পরিচয় করিয়ে দিবো? কতোটা তল্লাশি হলে যাত্রী নিরাপদ হবে প্লেনে উঠার জন‍্য? কতোটা নির্লজ্জ জাতি হলে নিজের মতো করে নিয়ম বানিয়ে মিষ্টি খাওয়ার টাকা ছিনতাই করতেই থাকবে? এয়ারপোর্ট খুবই অনিরাপদ যেখানে মিষ্টি খাওয়ার টাকার উপর যাত্রীর প্লেনে উঠা নির্ভর করে।

এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ হয়তো অন্ধ বধির। এয়ারপোর্ট এসব অসৎ কর্মচারী থাকলে স্ক‍্যান মেশিন এবং সিসি ক‍্যামেরার মতো ব‍্যয়বহুল মেশিনের দরকার নেই।
আরো কষ্টের বিষয় আমাদের ভাই বোন রা যখন দেশের জন‍্য বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে অচেনা অজানা দেশে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন তারা জানেও না কতো কঠিন জীবন পরীক্ষা তাদের জন‍্য অপেক্ষা করছে আর সেই সময় আমাদের ইমিগ্রেশন অফিসার রা কতোটা অসম্মান নিয়ে তাদের কাগজপত্র চেক করে ছুড়ে ছুড়ে তাদের ফেরত দিচ্ছেন নিজের চোখে দেখা। এই অতি সাধারণ মানুষগুলো কি এতোটাই অসম্মানের যোগ‍্য? এই সহজ সলশ ভাইবোন গুলা কি সামান‍্য সম্মান আমাদের দেশের এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন অফিসার দের থেকে আশা করতে পারেনা? এতোটা ছোট মানসিকতার পরিচয় কেনো আমরা দিচ্ছি যেখানে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার উপর আমাদের দেশের উন্নতির অনেক কিছু নির্ভর করে!!

লিয়ানা। “”””

যেখানে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে ওয়ানস্টপ সার্ভিস দেয়া শুরু হয়েছে, সেখানে আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যা সত্যিই লজ্জার। লম্বা লাইনে যাত্রীদের সময় ক্ষেপনের দুর্ভোগ ছাড়াও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ এবং অনৈতিক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ দৃশ্যমান। আর এর বেশির ভাগ শিকার হচ্ছেন প্রবাসী যাত্রীরা। প্রবাসী কর্মীরা জমিজমা বিক্রি করে, টাকা লোন নিয়ে বিদেশ গিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে, দেশে ফেরার পথে অক্লান্ত শ্রমের আয়ে কেনা মূল্যবান জিনিসপত্র বিমান বন্দরে খুইয়ে নি:স্ব হয়ে বাড়ি ফেরার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। এরকম একটি দুটি ঘটনা নয় বরং বছরের পর বছর ধরে এমন অনিয়ম চলছেই চলছে। এদের অপরাধ দেখার কেউ নেই। হ্যাঁ বিমানবন্দরের মনিটরিং ব্যবস্থায় এসব দেখার কেউ নেই? বিমান বন্দরের এমন অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও যাত্রী হয়রানি কঠোর হাতে বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে শুধু অবকাঠামোগতভাবে বিশ্বমানে উন্নীত করলেই হবে না। সত্যিই যদি আমরা ডিজিটাল কিংবা স্মার্ট দেশ দেখতে চাই তাহলে অবশ্যই বিমানবন্দর এর পরিচালন ব্যবস্থাপনাকে এখনই স্বচ্ছ, গতিশীল, দুর্নীতিমুক্ত, নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com