উখিয়ায় মিনি ট্রাকের চাপায় বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামানকে হত্যার ঘটনায় জড়িদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারি, পরিবেশে নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের কর্মীরা।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বেলা ১২ টা থেকে দুপুর পৌনে ১ টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন ও সমাবেশ চলে।
এ সময় অংশগ্রহনকারীদের হাতে ছিলো হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার। এসময় বক্তারা বলেন, হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করলে অপরাধীরা পার পাবে এবং বারবার এ ধরনের অপরাধ সংগঠিত করবে। জেলা জুড়ে যেসব অবৈধ ডাম্পার বা মিনি ট্রাক চলাচল করছে সেগুলোর চলাচল বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় অবশিষ্ট বন ও রক্ষা করা সম্ভব হবেনা।
মানববন্ধনে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সারওয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় বিভিন্ন সময় অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হই। আর কত হামলার শিকার হবো? সজলকে পাহাড় খেকোরা ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট করে হত্যা করেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সেইসঙ্গে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সারওয়ার আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন সরকার, কক্সবাজার প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা, সহকারী বন সংরক্ষক আনিছুর রহমান, ন্যাকম এর আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোঃ শফিকুর রহমান, রেঞ্জ কর্মকর্তা সরওয়ার জাহান, ফরেষ্টার মো. কামরুজ্জামান শোভন, কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষন পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপুসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন ।
এদিকে উখিয়ায় বনবিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানকে (৩০) ডাম্পার ট্রাক-চাপায় হত্যার ঘটনায় থানায় ১০ জন পাহাড়খেকো ও বালু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঘটনার দিন রাতে ( রবিবার) রাতে উখিয়া থানায় উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী মো. শফিউল আলম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলার পরপরই সোমবার সকালে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলায় আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী গাজী মো. শফিউল আলম জানান, ‘বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান খুব সাহসী ছিলেন। গতমাসে ( মার্চ) পাহাড়খেকো ও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেছিলেন। এরপর অভিযুক্তরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এজন্য তারা পরিকল্পিতভাবে বিট কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে’।
নিহত সাজ্জাদুজ্জামান কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর গ্রামের মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন বিভাগে যোগদান করেন সাজ্জাদুজ্জামান।
মামলার আসামিরা হলেন, রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিণমারার মো. কাশেমের ছেলে ডাম্পারচালক বাপ্পি (২৩), একই গ্রামের সুলতান আহমদের ছেলে ডাম্পার মালিক ছৈয়দ আলম (৪০), তাঁর ছেলে মো. তারেক (২০), তুতুরবিল গ্রামের নুরুল আলমের ছেলে হেলাল উদ্দিন (২৭), হরিণমারার আবদুল আজিজের ছেলে ছৈয়দ করিম (৩৫) ও আনোয়ার ইসলাম (৩৭), আবদুর রহিমের ছেলে শাহ আলম (৩৫), হিজলিয়া গ্রামের ঠান্ডা মিয়ার ছেলে মো. বাবুল (৫০) ও ফরিদ আলমের ছেলে মো. রুবেল (২৪) এবং বাগানপাড়ার শাহ আলমের ছেলে কামাল উদ্দিন ড্রাইভার (৩৯)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন জানান, পাহাড় খেকোদের ট্রাকের চাপায় বনবিট কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। পরে আমরা অভিযান চালিয়ে ট্রাকের মালিক এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি ছৈয়দ করিম (৩৫) গ্রেফতার করেছি এবং অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিাযান চলছে।
অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন পরিবেশবাদী, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন অধিদপ্তরের সামনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বনবিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের (৩০) বড় ভাই মো. কামরুজ্জামান।
তিনি বলেছেন, ‘এলাকার সবাই জানেন কারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে, তারপরও আসামিরা গ্রেপ্তার হচ্ছে না কেন? এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি ভাইয়ের লাশ দেখেছি। আমি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। ভাইয়ের স্ত্রী ও মেয়ের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্য কোনো ঘটনা সামনে আসায় ভাইয়ের হত্যার ঘটনা যাতে চাপা পড়ে না যায় তা–ও চাই।’ এ সমাবেশেই প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার ভোর রাতে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় পাহাড় রক্ষায় অভিযান চালাতে গিয়ে মাটি পাচারকারীদের ডাম্পারের চাপায় নির্মমভাবে খুন হন সাজ্জাদুজ্জামান সজল।
Leave a Reply