সাভারের বিরুলিয়ায় সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও স্থানীয় টিপু-ব্রিটিশ বাহিনীর মধ্যে হামলা-সংঘর্ষের সুরাহা এখন পর্যন্ত হয়নি। কয়েকটি দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের দায়ী করে এক তরফা যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
২১ মে রোববার সাভারের বিরুলিয়ার খাগানে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিটি ইউনিভার্সিটির নিজস্ব ক্যাম্পাসের কনফারেন্স হলে প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, আহত শিক্ষার্থী সহ সকল ছাত্রছাত্রীবৃন্দ, বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম মন্ডল, সাভার মডেল থানার অপরেশন ইনচার্জ (ওসি-অপারেশন) নয়ন কারকুন, বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই দিদার, বিরুলিয়া ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাইজুল মেম্বার সহ শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী মনিরুজ্জামান টিপু ও তার ছোট ভাই ব্রিটিশের পক্ষ থেকে তার বড় ভাই আব্দুল মান্নান মীমাংসার জন্য বসলেও কোন সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী মনিরুজ্জাম টিপু ও তার ছোট ভাই ব্রিটিশ আগামী মঙ্গলবার উপস্থিত থাকলে শিক্ষার্থীরা আপোষ-মীমাংসায় বসবেন বলে জানা গেছে।
এসময় শিক্ষার্থীরা দৈনিক আমার সময়-কে জানান, চলতি মাসের ১৬ তারিখ আনুমানিক রাত সাড়ে ন’টার দিকে টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহীম ও সিফাত নামের আরেক ছাত্র রাতের খাবার শেষে হোস্টেলে ফেরার সময় এলাকার বিশিষ্ট মাদক ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান টিপুর ছোট ভাই মাতাল ব্রিটিশ হাইস্পিডে বাইক চালিয়ে দুজন ছাত্রের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মাতলামো শুরু করে। প্রতিবাদ করলে সে দু’জন ছাত্রকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। এসব বিষয়ে ঐ দুই শিক্ষার্থী সহ আর একজন ছাত্রকে নিয়ে মাতাল ব্রিটিশের বড় ভাই মনিরুজ্জামান টিপুর খাগান মুজাহিদ গলির এএন ফ্যাশনের সামনের বাসায় বিচার নিয়ে গেলে বাসার মেইন গেইট বন্ধ করে দিয়ে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর টিপু সহ তার ক্যাডার বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময়, বিচারপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের হাত ভেঙ্গে দেওয়া হয়। মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় যেতে হয় সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইব্রাহীম, সিফাত, রাকিব সরকার নীল ও হাবীব আহমেদকে। তাদেরকে মারধর করার পর সেখানে ফেলে রাখা হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
হামলার বিষয়ে খবর পেয়ে সিটি ইউনিভার্সিটির অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের বন্ধুদের উদ্ধার করতে গেলে তাদের উপরেও টিপু-ব্রিটিশ বাহিনী হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময়, বিরুলিয়া ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাইজুল মেম্বার নিজে মনিরুজ্জামান টিপুর হাতের লাঠি কেড়ে নিয়ে নিরীহ ছাত্রদের রক্ষা করেন বলে জানা গেছে। এরপরপরই সিটি ইউনিভার্সিটির সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলার প্রতিবাদে আশপাশের আরো কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালে শিক্ষার্থী, পরিবহনের স্টাফ ও স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীরা দৈনিক আমার সময়-কে আরও বলেন, সিটি ইউনিভার্সিটির সুনাম নষ্ট করতে একটা স্বার্থান্বেষী মহল মিডিয়া লেলিয়ে দিয়েছে। প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ না করে একতরফা সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। তাই, সংবাদ প্রকাশের আগে সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের অনুরোধ করেন তারা। সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এখনো হুমকির মুখে রয়েছেন বলেও জানান তারা।
এদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারাও আতঙ্কে দিন পার করছেন। বেশ কয়েকটি দোকানে হামলা-ভাংচুর হওয়ায় প্রায় বিশ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
তবে, এ সব কিছুর জন্যই মনিরুজ্জামান টিপু ও তার ছোট ভাই মাতাল ব্রিটিশ-কে দায়ী করেন শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অতি দ্রুত বিষয়টি মীমাংসা করে তাদের ক্ষতিপূরুণ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিশ্চিতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের নিকট দাবী জানান ব্যবসায়ীরা।
এসকল অভিযোগের সত্যতা জানতে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও মনিরুজ্জামান টিপু ও ব্রিটিশের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়ে বর্তমানে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানান এলাকাবসী।
এদিকে, সর্বশষ তথ্যানুযায়ী আজ রোববার ২১ মে আপোষ-মিমাংসা না হওয়ায় আগামী মঙ্গলবার আবারো আলোচনায় বসা হবে বলে জানা গেছে। খাগান ভার্সিটি পাড়া জুড়ে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
তবে, অতিদ্রুত স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে এমনটায় প্রত্যাশা সকলের।
Leave a Reply