মাদক উপদ্রব্য তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের মানুষদের জীবনে একটি ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে যুব সমাজ ও দেশ ধ্বংসের পথে হাঁটছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি প্রশাসন। মাদকের বিস্তার রোধে জিরো টলারেন্স কঠোর নির্দেশনা থাকলেও নানা কৌশলে দেশের প্রত্যেকটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে মাদক দ্রব্য। তাহলে প্রশ্ন হলো প্রশাসনের নজরদারির পরেও কেনো দেশে মাদকের এমন উৎপত্তি? তাহলে কি প্রশাসনরাও মাদক ছড়াতে ঘুষ নিয়ে অনিয়ম করছে? যেখানে সরকারের নির্দেশনা মাদকের বিরুদ্ধে বিন্দু পরিমাণও ছাড় নয়, জিরো টলারেন্স নির্দেশনা সেখানে কীভাবে মাদক ছড়িয়ে পড়ে প্রত্যেকটি শাখায় প্রশ্ন থেকেই যায়। খবর পাওয়া গেছে, কোকেন, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সীমান্ত দিয়ে পাঁচার হয়ে দেশে আসছে তার ৫ শতাংশও জব্দ করা যাচ্ছে না। মাদক কারবারিরা নৌ, সড়ক, রেল ও আকাশ পথ ব্যবহার করে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদক রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার মাদক বিক্রির ক্ষেত্রেও নিত্যনতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গত বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সীমান্তবর্তী ১৯ জেলার ৯৫ পয়েন্ট দিয়ে সবচেয়ে বেশি মাদক আসছে। কক্সবাজার ও বান্দরবান দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাঁচারের ১৫ রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। গাঁজার জন্য পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার ৯ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬ পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের নওগাঁর সীমান্তবর্তী সাতটি নতুন রুট দিয়ে ফেনসিডিল আসছে। সাতক্ষীরার সাতটি পয়েন্ট দিয়ে আসছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুরের ২৪ পয়েন্ট দিয়ে ফেনসিডিলের পাশাপাশি হেরোইন আসছে। এ ছাড়া যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ১৩ পয়েন্ট দিয়ে দেশে ফেনসিডিল ঢুকছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিকভাবে যতটুকু মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়, তা পাঁচার হয়ে আসার মাত্র ২০ ভাগ। তবে এ দেশে মাদক উদ্ধারের হার শতকরা ৫ ভাগের বেশি। এ সর্বনাশা মাদকে ঘরে ঘরে আসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এভাবে যদি মাদক দ্রব্য সহজেই মানুষের হাতে পৌঁছায় তাহলে আগামীতে মাদক গ্রহণকারীর সংখ্যা শুধু বাড়তেই থাকবে। যার ফলে সমাজে খুন-খারাপ, ইভটেজিং, হত্যা ইত্যাদি বাড়তেই থাকবে। এতে একটি রাষ্ট্রের বুকে কালো ছায়া নেমে আসবে। আমরা আমাদের স্বাধীন দেশে এমন কালো ছায়া দেখতে চাইনা না। আমরা চাই মাদক মুক্ত সমাজ, মাদক মুক্ত স্বাধীন দেশ। এখনি উপযুক্ত সময় ঘোষণাকৃত জিরো টলারেন্স নির্দেশনা সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করার। দেশে যে-সকল জায়গা দিয়ে মাদক ছড়াচ্ছে ঐ সকল জায়গায় কঠোরভাবে চেকিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হোক।
Leave a Reply