বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরা। সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি খাত থেকে এ জেলার রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসে। সত্তরের দশক থেকে সাতক্ষীরাবাসীর আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে চিংড়ি সম্পদ বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে। তবে চিংড়ির পর এবার রফতানি আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে পাবদা মাছ।
জেলায় উৎপাদিত পাবদা মাছ সাদ-আট বছর ধরে ভারতে রফতানি হচ্ছে, যা এ জেলার অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকায় সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলার কিছু জায়গায় পাবদা চাষ হয়। রফতানিজাত এ পাবদা মাছ উৎপাদন করে জেলার অনেক মৎস্যচাষী লাভবান হচ্ছেন। মিঠাপানির মাছ হিসেবে অনেক সম্ভাবনাময় বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মৎস্যচাষী ও রফতানিকারকরা জানান, সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে পাবদার পোনা খামারে ছাড়া হয়। ছয় মাসের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পাবদা মাছ ভারতে রফতানি হয়।
সাতক্ষীরার রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আল আমিন ফিশের স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার জানান, তিনিসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ভারতে পাবদা মাছ রফতানি করে। প্রতি মাসে ৮০০-৯০০ টন মাছ ভারতে যাচ্ছে। সে হিসাবে বছরে গড়ে ১৫০০-২০০০ টন মাছ রফতানি হচ্ছে। মণপ্রতি গড় মূল্য ১১ হাজার টাকা হিসেবে বছরে ৪১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা রফতানি আয় হচ্ছে।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা সদরের ঝিকরা গ্রামের রফতানিজাত পাবদা মাছ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাকি ফিশের মালিক মো. ইশারাত আলী জানান, পাঁচ-ছয় বছর ধরে রফতানিজাত পাবদা মাছ উৎপাদন করেন। ১২০ বিঘা জমির ঘেরে পাবদা চাষ করেন। এ ঘেরে বছরে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার পাবদা মাছ উৎপাদন করেন। এর অধিকাংশ মাছই তিনি রফতানি করে থাকেন।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে পাবদা মাছ ময়মনসিংহ জেলার ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে কিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন রফতানিকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতেন। এরপর তিন বছর ধরে তিনি ভারতে রফতানি করছেন বলে জানান।
পাবদা চাষী ইশারাত আলী আরো জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ৩ কোটি টাকার পাবদা মাছ রফতানি করেছেন ভারতে। যার প্রতি মণ ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্য পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, উৎপাদন ও অন্যান্য খরচ উঠিয়েও বছরে ৪০-৫০ লাখ টাকা লাভ হয় পাবদা চাষে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামের পাবদা মাছচাষী তানজির হোসেন বলেন, ৪৫ বিঘা জমির ঘেরে পাবদা মাছ করেন।
তিনি জানান, তুলনামূলকভাবে খাদ্যও সাশ্রয় হয় পাবদা চাষে। তাছাড়া অন্যসব মাছের তুলনায় পাবদা মাছের দাম ও চাহিদা বেশি বলে জানান তিনি। স্থানীয় বাজার ছাড়াও সাতক্ষীরার রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সাব্বির এন্টারপ্রাইজের মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে উৎপাদিত পাবদা মাছ ভারতে রফতানি করেন। তবে চলতি মৌসুমে করোনা সংকটের কারণে পাবদা মাছের দাম কিছুটা কম পাওয়া গেছে। তার পরও ৪৫ বিঘার ঘেরে পাবদা মাছ উৎপাদনে বছরে ১০-১২ লাখ টাকা তার লাভ হয়।
সাতক্ষীরার মৎস্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শফি জানান, তিনি সাতক্ষীরা থেকে বিভিন্ন প্রকার মাছ ভারতে রফতানি করেন। এর মধ্যে পাবদা, পারশে, ভেটকি, ট্যাংড়া ও রুই উল্লেখযোগ্য। তবে এসব মাছের মধ্যে ভারতের বাজারে পাবদা মাছের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। বর্তমান তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাসে ২০০-৩০০ টন পাবদা মাছ রফতানি করছেন ভারতে।
মো. শফি আরো বলেন, ভারতের বাজারে বর্তমান ২০টি কেজি গ্রেডের পাবদা মাছের দর যাচ্ছে ১১ হাজার টাকা মণ এবং ৩০ গ্রেডের মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা প্রতি মণ।
তিনি বলেন, পাবদা মাছ উৎপাদনে সাতক্ষীরা জেলা খুবই সম্ভাবনাময়। সাতক্ষীরা জেলাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাবদা মাছ সংগ্রহ করে তা ভারতে রফতানি করেন। কিন্তু গ্রেডের দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় সাতক্ষীরার উৎপাদিত মাছই বেশি যাচ্ছে ভারতে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জানান, সাতক্ষীরার উৎপাদিত পাবদা মাছের অধিকাংশই যাচ্ছে ভারতে। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার অন্যান্য রফতানিজাত মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে রয়েছে পাবদা মাছ।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, মিঠাপানির মাছের মধ্যে সাতক্ষীরার একটি সম্ভাবনাময় পাবদা মাছ। এটি ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি ভারতেও রফতানি হচ্ছে। তবে পাবদা লবণাক্ত পানিতে ভালো হয় না। এটি মূলত সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া উপজেলায় সবচেয়ে ভালো উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান তিনি। অন্যান্য উপজেলায়ও কম-বেশি পাবদা চাষ হচ্ছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
তিনি আরো জানান, জেলায় ৮০০-৮৫০ বিঘা পরিমাণ জমির ঘেরে পাবদা চাষ হচ্ছে। আগামীতে চাষের জমির পরিমাণ আরো বাড়বে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, সাতক্ষীরা থেকে পাবদা মাছ ভারতের রপ্তানি হচ্ছে এটা খুব সুখবর আমরা চাই সাতক্ষীরা নানান ধরনের মাছ চাষ শাকসবজি ফলমূল ব্যাপক আকারে চাষাবাদ হোক সাতক্ষীরা জেলার বাইশ লক্ষ মানুষ যেন সবার কোন না কোন একটা কর্মসংস্থান থাকে এবং সাতক্ষীরার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে যেন সুস্থ থাকে এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরকারের অর্থসহ সার্বিক সহকার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করলে সকল সেবা মেলবে।
Leave a Reply