1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. admin@dailyamarsomoy.com : admin :
সাতক্ষীরা,কালীগঞ্জে ‍বাবার দেয়া সেলাই মেশিন থেকে গার্মেন্টস মালিক প্রিয়াংকা বিশ্বাস - দৈনিক আমার সময়

সাতক্ষীরা,কালীগঞ্জে ‍বাবার দেয়া সেলাই মেশিন থেকে গার্মেন্টস মালিক প্রিয়াংকা বিশ্বাস

সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধ:
    প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫

উদ্যোক্তা মানে যোদ্ধা। সাহসী না হলে উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। একথার-ই প্রমাণ রেখেছেন সাতক্ষীরার গৃহবধূ প্রিয়াংকা বিশ্বাস। বাবার দেয়া একটি সেলাই মেশিন থেকে এখন গার্মেন্টস ও হস্তশিল্প কারখানার মালিক তিনি।প্রিয়াংকা বিশ্বাসের বাবা অলোক বিশ্বাসের বাড়ি খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলি গ্রামে। স্থানীয় রাড়ুলি ভুবন মোহিনী বালিকা বিদ্যালয়ে গন্ডি না পেরুতেই ১৬বছর বয়সে বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয় পিয়াঙ্কার বিশ্বাসকে। দশম শ্রেনীতে লেখাপড়া চলাকালীন তার বাবা তাকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল গ্রামের গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের সাথে বিয়ে দেন।স্বামী গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস চম্পাফুল বাজারের একজন মুদি ব্যবসায়ী। বিয়ের পর পড়ালেখায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও সব বাঁধা পেরিয়ে এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হন প্রিয়াংকা বিশ্বাস।কলেজে ভর্তি হওয়ার পর পড়ালেখা ও সংসার সামলানোর পাশাপাশি বাবার দেয়া একটা সেলাই মেশিন দিয়ে পোশাক তৈরি শুরু করেন তিনি। শ্বশুর বাড়ির নানা প্রতিকূলতা থাকলেও সবকিছু পিছনে ফেলে অদম্য পরিশ্রম ও মেধাকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে থাকেন প্রিয়াংকা। গার্মেন্টস শিল্পের ট্রেইনিং নিয়ে ২০১৭ সালে একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাবার দেওয়া সেলাই মেশিন নিয়ে পোশাক তৈরি শুরু করেন। শুরুতে প্রতিযোগীতায় প্রতিবন্ধকতা থাকলেও অদম্য ইচ্ছা ও মেধার কারণে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি পিয়াংকা বিশ্বাসকে। তার সেই একটি সেলাই মেশিন হয়েছে ৫০টিতে, আর ৫০ হাজার টাকা হয়েছে ২ কোটি টাকায়। সংসার ও ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বর্তমানে মার্ষ্টাস ডিগ্রি অর্জন করেছেন খুলনা বিএল কলেজ থেকে।বর্তমানে সাতক্ষীরার বিসিক শিল্প নগরীর দুটি প্লট ক্রয় করে প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টস নামে কারখানা তৈরি করেছেন। এছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুরে হস্তশিল্পের আরেকটি কারখানা রয়েছে। যেখানে কারিগর হিসেবে নারীরা প্রাধান্য পেয়েছে। শুধু নারীদের কর্মসংস্থান তুলে দেওয়া নয় বরং কর্মজীবী নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছেন প্রিয়াংকা। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পেয়েছেন জেলা ও উপজেলা জয়ীতা পুরষ্কারও।সরেজমিনে সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরীতে প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টসে যেয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ৭০-৮০জন কারিগর দিনরাত কাজ করছেন। কারখানায় গেঞ্জি, জিন্স প্যান্ট, টাওজার, স্কুল কলেজ, ট্রাভেল ব্যাগ, হাতের তৈরি নকশী কাথা তৈরি হয়।এছাড়া প্রিয়াংকার মালিকাধীন ঢাকার মোহাম্মদ পুরে হস্তশিল্পের একটি কারখানা রয়েছে। সেখানে ১৫-২০ জন হস্তশিল্পী বিভিন্ন ধরনের হাতের ডিজাইন পাটের ব্যাগ, মানিব্যাগ, খেলনা সামগ্রি তৈরি করেন।
প্রিয়াংকার গার্মেন্টসের তৈরীকৃত পণ্য স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে হাতের তৈরি নকশী কাথা, ট্রাভেল ব্যাগ, গেঞ্জি রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। যার ফলে একদিকে যেমন অর্জন হচ্ছে বৈদাশিক মুদ্রা অপরদিকে প্রান্তিক নারীরাও পেয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই।প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টেসের কারিগর সোনিয়া খাতুন বলেন, প্রিয়াংকা গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরি করে সংসার চলে। প্রিয়াংকা অনেক পরিশ্রম করে কারখানা তৈরি করেছেন। একজন গৃহবধূ নারীর অদম্য পথচলা দেখে আমরা অনুপ্রেরণা পাই।তার গার্মেন্টেসের আরেক কারিগর মমতা দাশ বলেন, নিজ সংসারের কাজ সামলিয়ে প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরি করি। এখান থেকে যে বেতন পায় তাই দিয়ে আমার সংসার চলে। আমার মত শতাধিক পরিবারের রুটি রুজি পিয়াঙ্কা গার্মেন্টেস থেকে হয়। বেতন নিয়ে কখনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারমত সব কারিগররা তাদের বেতন পান।সুমন সাহা নামে অপর আরেক কারিগর বলেন, অনেক গার্মেন্টসে শ্রম আইন মানা হয়না। তবে সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টস। এখানে যেমন শ্রম আইন মানা হয় তেমনই কারিগরদের যেকোন সমাধানেও প্রতিষ্ঠানটি সাহায্য করে। একজন নারীর পক্ষে এগুলো সামলানো সত্যিই কঠিন। তবে প্রিয়াংকা বিশ্বাস নিজেকে যেভাবে মেলে ধরেছেন সেটা প্রশংসার দাবি রাখে।
প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টসের সত্ত্বাধিকারী প্রিয়াংকা বিশ্বাস বলেন, আমার পথ চলাটা কোন সহজ ছিল না। ছোট বেলায় বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয় আমার। আমার শ্বশুর বাড়িটাও স্বচ্ছল ছিলনা। যৌথ পরিবারে বসবাস ছিল। তবে সেখানে বিভিন্ন প্রথা চালু ছিল।যখন আমি বাসার কাজ সামলিয়ে নিজ লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাবার দেয়া সেলাই মেশিন দিয়ে পোশাক তৈরী শুরু করি। সেটাতে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আপত্তি ছিল। তবে একটা সময় তারা তাদের নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আমার কাজকর্মকে তারা সমর্থন দেন।প্রিয়াংকা বলেন, শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে সকল বাঁধা পেরিয়ে আমি পথ চলেছি। আমার বাবা সেদিন একটি সেলাই মেশিন না কিনে দিলে হয়তো আজ কারখানা তৈরি করতে পারতাম না। আর নাইবা আমার প্রতিষ্ঠানে এতোগুলো মানুষের কর্মসংস্থানও হতো না।পথচলার শুরুর গল্প জানিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, বাবার দেয় সেলাই মেশিন দিয়ে যখন আমি ব্যবসার সিদ্ধান্ত নেই তখন আমার স্বামীর সহযোগিতায় একটা এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়ে টেইলার্সের জন্য ছিট কাপড় ক্রয় করে শুরু হয় আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পথচলা। ওই লোনের টাকা আমি এক বছরে পরিশোধ করি। এবং আমার বেশ কিছু টাকা লাভ হয়। সেই টাকা দিয়ে আরো চারটি মেশিন কিনি। এতে আমার বাড়ির পাশের অসহায় দুই জন নারীর কর্মসংস্থান হয় সেখানে।পরে আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মার্কেট যাচাই করি এবং গার্মেন্টস ও ফ্যাশন ডিজাইনের উপর কাজ করি। এরপর আরো এক বছর পরে যে টাকা লাভ হয় তা দিয়ে আরো দশটা মেশিন কিনি। এরপর আরো কিছু মানুষের কাজের সুযোগ করে দিই। এরপর আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে দিনদিন ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান প্রিয়াংকা।নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে অর্থায়ন বড় বাঁধা জানিয়ে প্রিয়াংকা বিশ্বাস বলেন, আমাদের সমাজে নারীদের একটু অন্য নজরে দেখা হয়। একজন নারী চাইলে তার ব্যবসার জন্য চাহিদা মত ঋণ নিতে পারেনা। এজন্য ঋণপ্রাপ্তি সহজ ও নারীদের জন্য বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়ার দাবি জানান তিনি।প্রিয়াংকা বিশ্বাস বলেন, সরকার যদি আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন তাহলে আমরা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারবো এবং এতে বহু মানুষের কর্মসংস্থানও হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com