সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর অনাকাক্সিক্ষত ভাবে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। এছাড়াও আহত হয়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্বেও ভুগছেন হাজারো মানুষ। এই ঘটনাগুলোকে নিত্যদিনের সঙ্গী করেই মানুষ জীবন পার করছে। অথচ যুগ যুগ ধরে এত বড় একটি বিষয়ে কোনো কাক্সিক্ষত ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বরং যে ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তারা শুধু সড়ক দুর্ঘটনা নির্মূলের বুলী শুনিয়েই গেলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি রোড সেফটি ফাউন্ডেশন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমে। বিজ্ঞপ্তিতে পর্যালোচনা করা হয়েছে চলতি বছরের ৯মাসের সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে। বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে পাঁচ হাজার ৪৮৫টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৯৮ জন এবং আহত হয়েছে ৯ হাজার ৬০১ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৭৭ জন ও শিশু ৭২৯ জন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৪১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে এক হাজার ৯২৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৪.৩৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭.২১ শতাংশ। দুর্ঘটনায় এক হাজার ১২১ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছে ৬৮৮ জন, অর্থাৎ ১২.২৯ শতাংশ। এই সময়ে ৮৩টি নৌদুর্ঘটনায় ১২৪ জন নিহত, ১২৫ জন আহত এবং ১৯ জন নিখোঁজ রয়েছে। ২৪৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২২৭ জন নিহত এবং ২২৩ জন আহত হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, যানবাহনের গতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের ওপরে প্রতি পাঁচ কিলোমিটার বৃদ্ধিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দুই থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পায়। সড়কে এমন দুর্ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। দেশ পরিচালন কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কতটুকু সচেতন তাই মুখ্য বিষয়। বিগত দিনে এমন দুর্ঘটনার শামিল হয়েছে অগণিত মানুষ। তবে আগামীতে যেন এমন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয় সে জন্য সরকারকে নিতে কার্যকরী পদক্ষেপ। এই বিষয়ে বিগত সরকার ব্যর্থ হলেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাক্সিক্ষত ফলাফল আনবেন, এমনটাই জনগণের প্রত্যাশা। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে প্রথমে সরকারকে কঠোরভাবে উদ্যোগী হতে হবে। বিশেষ করে সড়কে নির্দিষ্ট যানবাহনের নির্দিষ্ট গতিসীমা বেধে দিতে হবে। এছাড়াও সড়ক আইন মেনে চলার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। আশা করব, সরকার সর্বোচ্চ আইন প্রয়োগ করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে জনমনে স্বস্তি গড়ে তুলবেন।
Leave a Reply