নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে বহু মানুষের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশে এখনো মানুষের চিকিৎসা বাবদ মোট খরচের বড় অংশই ওষুধের পেছনে ব্যয় হয়, সেখানে ওষুধভেদে বড় ব্যবধানে দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ওষুধ কোম্পানিগুলো নানা অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছে। আমদানি করা ওষুধের দামের ওপর কারো হাত নেই। যে যার মতো দামে বিক্রি করছে। এক্ষেত্রেও বিশ্ববাজার, ডলার, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত দেওয়া হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই নিয়মিত নজরদারি। এ সুযোগে ফার্মেসি মালিকরা বেশি দাম নিচ্ছেন। উচ্চমূল্যের পাশাপাশি আছে ভেজাল ওষুধ। সরকারি হাসপাতালগুলোয় ওষুধ কেনায় আছে দুর্নীতিও।
ওষুধের বাজার ঘিরে নৈরাজ্য থামানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় উচ্চমূল্য জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে অনেক রোগী কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস চেপে ফার্মেসির সামনে থেকে শূন্যহাতে ফিরছেন। কেউ কেউ সামান্য ওষুধ কিনলেও বাকিগুলো খাওয়া ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। কারন, ২০ টাকার নাপা সিরাপ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়। ৪৫ টাকার সেকলোর পাতা কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের দাম। সেফথ্রি বা সেফিক্সিম জাতীয় ওষুধ পিসপ্রতি বেড়েছে ১০ টাকা করে। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য খরচ কাটছাঁট করে চিকিৎসা খরচ চালাচ্ছেন সাধারণ ভোক্তারা। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গাফিলতির কারণে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা ওষুধের দাম বৃদ্ধির জন্য ডলারের ঊর্ধ্বগামিতাকে দায়ী করছেন। এবং বলছেন, সংকট কাটাতে ওষুধের দাম বাড়াতে হয়। না হলে বাজারে সম্ভাব্য ঘাটতি হতে পারে এবং ওষুধের গুণমান হ্রাস পেতে পারে। যদিও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে বস্তুত দেশীয় কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে।
আমরা মনে করি, উন্নত বিশ্বের মতো ট্রেড নামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম (সব কোম্পানির ওষুধের একই নাম হবে) প্রেসক্রিপশনে লেখার নিয়ম চালু করা হলে অসুস্থ মার্কেটিং প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে এবং বিভিন্ন ওষুধের দাম অনেকাংশে কমে যাবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের স্বাস্থ্য খাত মুখ থুবড়ে পড়বে। ওষুধ শিল্পে দেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। এ শিল্পের বিকাশে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে, এটাই আমরা চাই। তবে ওষুধ উৎপাদনকারীরা অনৈতিকভাবে বাড়তি মুনাফা করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের উচিত অতি প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো উৎপাদন করে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ভোক্তার কাছে সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
Leave a Reply