মুসলিম-অমুসলিম সবার ভালো কাজের জন্য যেমন কল্যাণের দোয়া রয়েছে তেমনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা তাদের ভালো কাজের উত্তম বিনিময় পাবে। ইসলাম মানুষকে সব সময় ভালো কাজের আহ্বান জানায়। অন্যায় ও অকল্যাণ থেকে বেঁচে থাকতে উপদেশ দেয়। কিন্তু অমুসলিম ব্যক্তি কি তার ভালো কাজের বিনিময় পাবে? এ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী? হাদিসের বর্ণনা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, ঈমানদার মুসলমানের মতো অমুসলিমদের ভালো কাজেরও উত্তম বিনিময রয়েছে। তারা তাদের ভালো কাজের প্রতিদান পাবে। তাদের ভালো কাজের প্রতিদান কী?
অমুসলিমদেরও ভালো কাজের প্রতিদান দেবেন আল্লাহ। তবে এ প্রতিদানের ধরন কেমন হবে; তাও হাদিসের বর্ণনায় সুস্পষ্ট। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের একাধিক বর্ণনায় সুস্পষ্ট তথ্য তুলে ধরেছেন এভাবে-
১. হজরত আবু বাকর ইবনু আবু শাইবাহ ও যুহায়র ইবনু হারব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একটি নেকির ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলা কোনো মুমিন বান্দার প্রতি জুলুম করবেন না। বরং তিনি এর ফলাফল দুনিয়াতে দান করবেন এবং আখিরাতেও দান করবেন। আর কাফের (অবিশ্বাসী/অমুসলিম) ব্যক্তি দুনিয়াতে আল্লাহর উদ্দেশে (মানুষের কল্যাণে) যে সৎ আমল (ভালো কাজ) করে এর প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে (দুনিয়াতে) জীবিকা নির্বাহ করাবেন। পরিশেষে পরকালে প্রতিফল দেওয়ার মতো তার কাছে কোনো সৎ আমলই থাকবে না।’ (মুসলিম)
২. হজরত আসিম ইবনু নাযর আত-তামিমি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, কাফির (অবিশ্বাসী/অমুসলিম) যদি দুনিয়াতে কোন সৎ আমল (ভালো কাজ) করে তবে এর প্রতিদানস্বরূপ দুনিয়াতেই তাকে জীবনোপকরণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আর মুমিনদের নেকি (ভালো কাজ) আল্লাহ তাআলা পরকালের জন্য জমা করে রেখে দেন। আর (ইসলামের) আনুগত্যের প্রতিফলস্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পৃথিবীতেও জীবিকা দান করে থাকেন।’ (মুসলিম)
তাই ভালা কাজ যেই করুক না কেন, আল্লাহ তাআলা প্রতিটি ভালো কাজেরই প্রতিদান দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা মানুষের কল্যাণে সব ভালো কাজের বিনিময় দেন অনেকগুণ। চাই সে মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম। উল্লিখিত হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত।
শুধু তা-ই নয়
কেউ কারও ভালো কাজ দেখলে দোয়া করতে পারবেন। চাই সে মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম হোক। তাদের জন্য শুকরিয়া, কৃতজ্ঞতা কিংবা দোয়া করা যাবে। তাদের জন্য এভাবে দোয়া করা যাবে-
> অমুসলিম ব্যক্তির জন্য দোয়া
ভালো কাজ করা ব্যক্তি যদি অমুসলিম হয় তবে তার জন্যও রয়েছে ছোট্ট একটি দোয়া। তাহলো-
جَمَّلَكَ اللهُ
উচ্চারণ : ঝাম্মালাকাল্লাহ
অর্থ : আল্লাহ আপনাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করুন।
> মুসলিম হলে
এছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহর যে কোনো ভালো কাজের বিনিময়ে এ দোয়া বলার নসিহত পেশ করেছেন-
جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا
উচ্চারণ : ঝাযা-কাল্লা-হু খাইরান। (তিরমিজি)
অর্থ : আল্লাহ তাআলা আপনাকে (কাজের) উত্তম বদলা প্রতিদান করুন।
সত্য সুন্দর ও কল্যাণের পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। ইসলাম সব মানুষের কল্যাণ কামনা করে। যে কারণে অমুসলিমের ভালো কাজের প্রতিদান ও স্বীকৃতিতে দুনিয়ায় রেখেছেন সুন্দর কর্যাণ ও উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা। আর মুমিন মুসলমান পরিপূর্ণ ঈমানের শর্তে পাবেন দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ।
সুতরাং মানব জাতির সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের উচিত, সত্যের পথে এগিয়ে আসা। সুন্দর কল্যাণময় জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুনিয়া ও পরকালের অসংখ্য নেয়ামত ও কল্যাণ লাভে নিজেকে তৈরি করা। ঈমানের নেয়ামত অর্জন করে নিজেদের ধন্য করা।
মনে রাখতে হবে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব মানুষকে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। যে উৎসাহ সবার জন্য অনুপ্রেরণা। তাহলো-
হজরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি একটি কল্যাণমূলক কাজ করবে তার জন্য রয়েছে অনুরূপ ১০টি কল্যাণমূলক পুরস্কার; এমনকি আমি তা বাড়িয়ে দেব।
আর যে ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ করবে তার জন্য রয়েছে অনুরূপ একটি মন্দ প্রতিদান অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (যদি সে অনুতপ্ত হয়ে আমার কাছে ক্ষমা চায় ও ভবিষ্যতে অন্যায় কাজ না করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে)
আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে এক বিঘত (আধা হাত) এগিয়ে আসবে আমি তার (কল্যাণে) প্রতি এক হাত এগিয়ে আসব।
আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে এক হাত এগিয়ে আসবে আমি তার (কল্যাণে) প্রতি এক বাহু (দুই বাহু সমান) এগিয়ে আসব।
আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে হেঁটে আসবে; আমি তার (কল্যাণের) দিকে দৌড়ে যাব।
আর যদি কেউ আমর সঙ্গে শিরক না করে (আমার সঙ্গে শরিক বা অংশীদার সাব্যস্ত না করে) পৃথিবীসম গোনাহ (পাপ) নিয়ে আমার সামনে হাজির হয় (আমার কাছে ক্ষমা চায় ও তাওবাহ করে) তবে আমিও তার সামনে অনুরূপ (পৃথিবীসম) বিশাল ক্ষমা নিয়ে হাজির হব।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ গোটা মানব জাতিকে ইসলামের পতাকাতলে অবস্থান করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর আমল যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সব নেয়ামত ও কল্যাণের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply