দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাঁচ্ছে, একইসঙ্গে কমছে কর্মসংস্থানও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। বিবিএস শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪-এর চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের যে ফল প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক তথা এপ্রিল-জুন সময়ে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩.৬৫ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.২৪ পয়েন্ট বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, দেশে বেকারত্বের হার এ সময় ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে এসেছে। অন্যদিকে গত এক বছরে দেশে ১০ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থান কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অর্থ হচ্ছে, আনুষ্ঠানিক খাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়গুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। বর্তমান সময়ের বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে শ্রমশক্তির তুলনায় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কম। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশই এখন বেকার। পড়াশোনা শেষ করে বছরের পর বছর চাকরির জন্য অপেক্ষা করছে তারা। অথচ বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অতিক্রম করছে। কিন্তু এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। আজকের তরুণদের জন্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। এটা ঠিক যে দেশের অনেক তরুণ এখন অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত। তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটাই এখন জরুরি। দেশের সার্বিক উন্নয়নে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি নতুন কর্মপরিবেশের উপযোগী একটি শ্রমশক্তিও তৈরি করতে হবে। দেশে প্রতিবছর নতুন যে জনশক্তি যুক্ত হচ্ছে, তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। গত কয়েক বছরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন জটিলতা, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে আসাসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে কর্মসংস্থান কমছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। দেশে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়িয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়টি বর্তমানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলেও তাঁরা মনে করেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে হার বাংলাদেশে গত দেড় দশকে হয়েছে, তার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, দারিদ্র্য বিমোচনের হার সেভাবে বাড়েনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রথমেই দেখতে হবে প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে কি না। একমাত্র কর্মসংস্থানই পারে সাফল্যের সঙ্গে দারিদ্র্য কমাতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া না হলে অন্যান্য খাতেও এই ব্যাধি প্রকট আকার ধারণ করবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়ন চলতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই দ্রুত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা দরকার।
Leave a Reply