বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার সীমান্তবর্তী বাটামারা ও সফিপুর ইউনিয়নের বিরাজমান বিবাদ নিরসনে দুই পক্ষ নিয়ে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে বরিশাল জেলাসহ তিন জেলার পুলিশ। শনিবার বিকেল ৪টায় মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের জাগরনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করে বরিশাল, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলা পুলিশ। জানা যায়, চলতি বছর এপ্রিলে বাটামারা ও সফিপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, বোমা হামলার ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছিলো। দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ নিরসনে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার এবং মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উদ্যোগ নেন এবং দুই পক্ষ নিয়ে সম্প্রীতি সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এ এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। যার প্রমান স্বরূপ ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মুলাদী থানার বাটামারা ও সফিপুর ইউনিয়নের হত্যা, ডাকাতি, নারী ও শিশু, অপহরণসহ ৯৩৪টি মামলা দায়ের হয়। যেখানে ৪ হাজার ৪৩৯ জনকে আসামী করা হয়। পরে সমাবেশে দুই পক্ষের মধ্যে ৫ জন করে স্টাম্পে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেখানে দুই পক্ষের ১৫ জন করে ৩০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাদের উভয়কে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাতে হাত মিলিয়ে দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুলাদী থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান। সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম। প্রধান আলোচক ছিলেন মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলম, শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মাহাবুবুল আলম। পুলিশ সুপার (মুলাদী সার্কেল) মোঃ মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান, বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান হোসেন, শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ বদিউজ্জামান, মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব তারিকুল হাসান খান মিঠু খান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোঃ আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোঃ বেল্লাল হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাইনুল আহসান সবুজ, মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর হোসেন সুমন প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুবুর রহমান। উল্লেখ্য, মুলাদী উপজেলার বাটামারা ও সফিপুর ইউনিয়নের সাথে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত ব্যবহার করে অপরাধীরা সহজেই আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে এই দুই ইউনিয়নের অপরাধমূলক কাজ অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। অপরাধ সংঘটিত করতে গিয়ে এলাকায় হাজ্বী গ্রুপ ও আকন গ্রুপ নামে দুইটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। এই দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। জোড়া খুনের পর বিরোধ চরম আকার ধারন করছিলো। এই সম্প্রীতি সমাবেশের পর উক্ত বিরোধের সমাধান হবে বলে জানান এলাকাবাসী। এর আগে বিকেল ৩টায় বরিশাল, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের সীমান্ত বাটামারা ও সফিপুর ইউনিয়নে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম।
Leave a Reply