আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একদিন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি জান, গিবত কাকে বলে? লোকেরা বলল, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। রাসুল (সা.) বললেন, তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তা তার অনুপস্থিতিতে আলোচনা করাই গিবত। এক সাহাবি বললেন, যদি আমি এমন কোনো দোষের কথা বলি যা তার মধ্যে আছে, তাহলেও কি গিবত হবে? রাসুল (সা.) বললেন, তুমি যে দোষের কথা বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তো তা গিবত হলো। তুমি যদি এমন কিছু বলো যা তার মধ্যে নেই, তাহলে তো তুমি তাকে অপবাদ দিলে! (সহিহ মুসলিম: ৬৭৫৮)
১. গিবত থেকে বিরত থাকার জন্য গিবত কী তা বোঝা জরুরি। রাসুল (সা.) এ হাদিসে গিবতের সংজ্ঞা বা পরিচয় উল্লেখ করেছেন। সেটা হলো, নিজের মুসলমান ভাই সম্পর্কে তার পেছনে এমন আলোচনা করা যা সে অপছন্দ করে। গিবতের এর চেয়ে চমৎকার সংজ্ঞা হয় না। প্রত্যেক এমন কথা যা মানুষ নিজের ব্যাপারে শুনতে অপছন্দ করে, তা তার অনুপস্থিতিতে আলোচনা করাই গিবত। কাউকে তার অনুপস্থিতিতে ট্যারা, ল্যাংড়া, খাটো, কৃপণ, ভীরু, অক্ষম ইত্যাদি বলা যেমন গিবত, কারো পেছনে তার প্রকৃত দোষের কথাও যদি কেউ বলে, যেমন সে মিথ্যুক, খেয়ানতকারী, জালেম, নামাজে রুকু-সিজদা ঠিকভাবে করে না, বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করে না ইত্যাদি, এগুলোও গিবতের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারো সম্পর্কে ছোটখাট অভিযোগ যেমন সে বেশি কথা বলে, বেশি খায়, বেশি ঘুমায়, তার পোশাক নোংরা থাকে ইত্যাদি যা কিছু শুনলে সে কষ্ট পেতে পারে, সবই গিবতের অন্তর্ভুক্ত।
২. গিবতকারীর কথা চুপচাপ শোনাও নাজায়েজ। গিবতকারীকে নিষেধ করতে হবে, নসিহত করতে হবে, তারপরও সে বিরত না হলে ওই মজলিস ত্যাগ করা ওয়াজিব। বিখ্যাত তাবেঈ সাইদ ইবনে জুবাইর (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি কোনো গিবতকারীকে তার কাছে বসতে দিতেন না। মুসা ইবনে ইবরাহিম বলেন, একদিন আমি মারুফ কারখির (রহ.) মজলিসে বসে ছিলাম। সেখানে এক ব্যক্তি আরেকজন সম্পর্কে কথা বলতে বলতে গিবত করা শুরু করলো। মারুফ কারখি (রহ.) তাকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, ওই সময়ের কথা স্মরণ করো, যখন তোমার চোখে তুলা দেওয়া হবে। (হিলয়াতুল আওলিয়া)
৩. গিবতের অভ্যাস থাকলে আল্লাহর কাছে তওবা করে এ অভ্যাস দূর করা ওয়াজিব। নিজেকে শাসন করে, মানত করে যেভাবেই হোক এ গর্হিত অভ্যাস দূর করতে হবে। ফকিহ আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়াহাব (রহ.) বলেন, আমি মানত করেছিলাম, যখনই গিবত করে ফেরবো, তার কাফফারা হিসেবে একদিন রোজা রাখবো। এটি তেমন কাজে লাগলো না। এরপরও আমি মাঝে মাঝে গিবত করে ফেলতাম, পরে রোজাও রাখতাম। তারপর আমি নিয়ত করলাম, গিবত করে ফেললে এক দিরহাম করে সদকা করবো। শেষ পর্যন্ত অর্থের মায়া আমার গিবতের অভ্যাস দূর করতে পেরেছিল। (সিয়ারু আ’লামিন-নুবালা)
Leave a Reply