পাহাড় হচ্ছে পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় খুঁটির মতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিহত করে এই পাহাড়। একই সঙ্গে পাহাড় হলো মানুষ এবং জীববৈচিত্র্যের সুপেয় পানির আধার। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, সৃষ্টিকর্তা আসমান-জমিনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পৃথিবীতে পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন। জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিবেশ রক্ষায় পাহাড় ও প্রাকৃতিক বনভূমির প্রয়োজন অপরিসীম। তবে নির্বিচারে পাহাড় কাঁটার ফলে জীববৈচিত্র্য নানাভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রতিবছরই মামলা হয়, অভিযান চলে, বিপন্ন পাহাড় বাঁচাতে আদালতের নির্দেশনাও আসে, তবু পাহাড়ের কান্না থামে না। প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, এমনকি পারিবারিক স্থাপনাও গড়ে উঠছে পাহাড় কেটে। এই ধ্বংসযজ্ঞে পিছিয়ে নেই সরকারি প্রতিষ্ঠানও। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের থেকে জানা যায়, পাহাড় কাটছে প্রভাবশালীরা। জনবল সংকটে তাদের বিরুদ্ধে সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না, জীবনের ঝুঁকিও আছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে থাকা একেকটি পাহাড়। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বিপন্ন হয়ে পড়ছে প্রাণ-প্রকৃতি। যদিও পাহাড় রক্ষায় দেশে আইন আছে। তবু দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে শত শত পাহাড়। পাহাড় কাঁটার সঙ্গে জড়িতরা এতটাই প্রভাবশালী যে, আইন-আদালতও তারা তোয়াক্কা করেন না। পাহাড় রক্ষার দায়িত্বে থাকা লোকজনকে মেরে ফেলেন। প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা করেন। ফলে মাঝেমধ্যে পাহাড় খেকোদের গ্রেপ্তারের কথা শোনা যায়। কিন্তু মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাহাড় কাঁটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বা পরিবেশ আদালতে মামলা করেই পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্ব শেষ করে দেন। কিন্তু পাহাড় ধ্বংসকারীদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্বও তাদের।
পরিবেশ রক্ষায় সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। সরকারি সব সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপে পরিবেশবিনাশী কর্মকা- থামতে পারে। দেশের পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব যাদের তারা যেন মাসে মাসে বেতন নিয়েই খালাস। পাহাড় নিধন বন্ধের বদলে কেউ কেউ পাহাড় খেকোদের দেওয়া মাসোহারা প্রাপ্তিকেই কর্তব্য বলে ভেবে বসেছেন। একে একে এ পাহাড়গুলো সাবাড় হয়ে যাবে আর প্রশাসন নীরবে দেখবে তা কাম্য হতে পারে না। তাই পাহাড় সংরক্ষণে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
Leave a Reply