বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে আজ সোমবার, ১২ রবিউল আউয়াল ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য ও যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মানব জাতির রহমত স্বরূপ প্রেরিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোলে জন্ম নেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ঠিক একই তারিখে ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি।
এক সময় গোটা আরব সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সমগ্র আরবে বিরাজ করত নানারূপ ধর্মীয় অনাচার, কুসংস্কার ও পাপাচার লিপ্ত। ইসলামের ধারণায় এ সময়কে বলা হয় আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকার যুগ। ‘আইয়াম’ শব্দের অর্থ সময় বা যুগ ও ‘জাহেলিয়া’ শব্দের অর্থ অজ্ঞতা বা তমসা। সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে ‘তমসা’ বা ‘অজ্ঞতার যুগ’ বুঝায়। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তি ও তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতাআলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পৃথিবীতে শেষ নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেন। তাঁর জীবনাদর্শ (সুন্নাহ) ইসলামের ভিত্তি।
মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। মাত্র বছর বয়সে তিনি তাঁর মাকে হারানোর পর প্রথমে তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিব ও পরে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হন। মহানবী (সা.) অল্প বয়সে হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ’র ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) খাদিজা (রা.) নামের এক ধণাঢ্য নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত প্রাপ্ত হন ও আল্লাহতাআলার নৈকট্য লাভ করেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য্যরে সাথে পালনের জন্য সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের সাথে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ইসলামী বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।
রোববার বাদ মাগরিব বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে প্রধান অতিথি হিসেবে পক্ষকালব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী পুরস্কার বিজয়ী হাফেজদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে উপহার হিসেবে সম্মাননা স্মারক ও নগদ অর্থ তুলে দেন ধর্ম উপদেষ্টা।
এ উপলক্ষে আজ ছিল সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালীন নোমানী। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা সভা শেষে মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘আশেকানে গাউছিয়া রহমানিয়া মইনিয়া সহীদিয়া মাইজভান্ডারীয়া’ এর উদ্যোগে এক সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সেমিনার ও আলোচনা সভায় ‘আশেকানে গাউছিয়া রহমানিয়া মইনিয়া সহীদিয়া মাইজভান্ডারীয়া’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক শাহজাদা সৈয়দ সহিদ উদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী বক্তব্য রাখেন।
সেমিনার ও আলোচনার পর সৈয়দ সহিদ উদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে জশনে জুলুশ (র্যালি) অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জোহরের নামাজ আদায় শেষে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পবিত্র মিলাদুন্নবীর আনুষ্ঠানিকতা।
অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য হাক্কানী ওলামায়ে কেরামগণ, রাজনীতিবিদ, আশেকান ও ভক্তবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আজ বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির ছিলেন ডিএসসিসির প্রশাসক ড. মহ. শের আলী।
এতে ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম, সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁঞা, কাউন্সিলর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ সমন্বয়কবৃন্দ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের অন্তর্ভুক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ বিকেলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টি ও চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
Leave a Reply